বিলাইছড়িতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি দীপংকর তালুকদার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামটি পরিবর্তন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির (SMC) বর্তমান সভাপতি সুনীল কান্তি দেওয়ান (চেয়ারম্যান) এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা এর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, রেজুলেশন মোতাবেক বিগত ৯/৩/২০২৫ ইং তারিখে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এবং ৭/৫/২০২৫ ইং বিদ্যালয় কমিটি পূর্ণগঠনের প্রস্তাব আনা হয়। পরে ৮/৫/২০২৫ ইং বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। যার নামকরণ করা হয় “বিলাইছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়”।
কমিটি আরও জনায় ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন SMC গঠন করা হয়েছে। যা কমিটির সিদ্ধান্ত ও রেজুলেশন মোতাবেক ‘দীপংকর তালুকদার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ নাম পরিবর্তন করে “বিলাইছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়” নামকরণ করা হয়েছে। এ থেকে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা হবে বিলাইছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে। তাই এখন থেকে বিলাইছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশের শেষ সীমানা বা ভারতের সীমান্তবর্তী বড় কড়াইয়া এলাকা হতে পড়তে আসা এক শিক্ষার্থী চুমকি চাকমা বলেন, এখানে পাঠদান পদ্ধতি খুবই ভালো বলে এখানে ভর্তি হয়েছি। একইভাবে যমুনা ছড়ি ও মগাছড়ি থেকে আসা শিক্ষার্থীরাও একথা জানায়। তারা জানায়, যদি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে? ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টিকে রাখা দায়িত্ব সবার।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অনেকে বলছেন, কোন প্রতিষ্ঠান ব্যাক্তির নামে হলে অনেক প্রশ্নবিদ্ধ থাকে। কোনো সময় হঠাৎ যদি সরকার পরিবর্তন হয়, যদি সেই দলের নেতার নামে হয় তখন কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিভিন্ন সম্যস্যার সম্মূখীন হতে হয়। এতে বিপাকে পরে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা।
এই বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম ফকিরকে ফোনে পাওয়া না গেলে সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাফর আহাম্মদ এর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আগে রাজনৈতিক দলের নেতা নামে ছিল বলে সবার আগ্রহ ছিল না। অন্য দলের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হইত না। এখন সোজাসুজি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হওয়াতে সবার আগ্রহ ও সহযোগিতা থাকবে।
এইসব বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এসএমসি’র সাবেক সহ-সভাপতি অভিলাষ তঞ্চঙ্গ্যার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, বিদ্যালয়টি পূর্বে সাবেক সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচালিত হলেও বর্তমানে আমরা কমিটিতে নেই, পদত্যাগ করেছি। এখন নতুন কমিটি হয়েছে, নতুন কমিটি জানবে তারা কি নামে পরিচালনা করবে। এই বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নাই । তবে যে নামে হোকনা কেন বিদ্যালয়টি সুন্দরভাবে পরিচালিত হয় আমার এই কামনা। যেন শিক্ষার্থী বিপাকে না পড়ে আর শিক্ষকরা ঠিকমতো বেতন পেয়ে থাকে এটা সবাইকে দেখতে হবে। বিশেষ করে দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রসার ঘটাতে হলে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এইসব বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিভীষণ চাকমার সঙ্গে মুঠোফোন কথা হলে তিনি জানান, যেহেতু বিদ্যালয়টি বোর্ডের পাঠদানের অনুমোদন হয় নাই, সেহেতু নাম পরিবর্তন করতে বোর্ডে যেতে হবে না। রেজুলেশনের মাধ্যমে পরিবর্তন করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বোর্ডে রেজুলেশন কপি পাঠাতে হবে। এছাড়াও একইভাবে জয়গাটিও বিদ্যালয়ের নামে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।এরপরে পাঠদান ও অন্যান্য কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে করা যাবে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৭ ইং সনে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। প্রতিবছর বিভিন্ন দিবসে ডিসপ্লেতে প্রায় ১ম স্থান অধিকার করে। বর্তমানে শিক্ষক ও কর্মচারীসহ রয়েছেন ১২ জন। রয়েছে তাদের বেতন- ভাতার সমস্যাও। এবছরে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬ জন। বর্তমানে শিক্ষার্থী ১০২ জন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা আসে দুর্গম এলাকা গবছড়ি ও ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হতে। শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ গরীব, অনাথ এবং অসহায়। তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন বিদ্যালয়টি পরিচালনা করতে কমিটি – কর্তৃপক্ষ ছাড়াও পাহাড়ে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সহায়তার প্রয়োজন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান অনুপ কুমার চাকমা ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার এর সুদৃষ্টি।