বান্দরবান শহরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমার শেষ দিনটি উদযাপিত হয়েছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে। পাহাড়জুড়ে রঙিন আলোর ঝলক, ফানুসের উড়াউড়ি, আর ভক্তদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পায় বান্দরবানের শহর ও বিহার প্রাঙ্গণ।
শেষ দিনের প্রধান আকর্ষণ ছিল রাজহংসী রথযাত্রা। বিকেলের পর থেকেই শহরের বিভিন্ন বিহার থেকে ধর্মীয় পোশাকে বৌদ্ধ ভক্তরা রথে যোগ দেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দেশনা, প্রার্থনা ও ধর্মীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে রথযাত্রা শুরু হয়। শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে রথটি পৌঁছে যায় সাঙ্গু নদীর তীরে।
রথযাত্রার পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় বর্ণিল ফানুস উত্তোলন ও কাল্পনিক ভুতের নৃত্য। রাতের আকাশে যখন একের পর এক ফানুস উড়ছিল, তখন পাহাড়ি আকাশ যেন আলোকিত হয়ে ওঠে। ভুতের নৃত্য, আলোকসজ্জা ও ঢাক-ঢোলের তালে দর্শক ও ভক্তদের মাঝে আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে।
রাত ১১টার দিকে সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন দেওয়া হয়। নদীর জলে রথ ভাসানোর সময় শত শত ভক্ত হাতে প্রজ্বলিত মোমবাতি ও প্রদীপ নিয়ে প্রার্থনা করেন—পাহাড়ে শান্তি, মঙ্গল ও সম্প্রীতির কামনায়। নদীর জলে ভেসে ওঠা আলোর বিন্দুগুলো যেন ছড়িয়ে দেয় শান্তির বার্তা।
বান্দরবান শহরের বিভিন্ন বিহারে এই দিনকে ঘিরে ছিল আলোকসজ্জা, ধর্মীয় গান, ধ্যান ও ভিক্ষুদের দেশনা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, প্রবারণা পূর্ণিমা হলো আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা ও শান্তির প্রতীক।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বললেন,, “প্রবারণা উৎসব আমাদের অন্তরের অন্ধকার দূর করে শান্তি ও মঙ্গলের পথে চলার আহ্বান জানায়। আজকের এই আলোকিত রাত সেই বার্তার প্রতিফলন।”
রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বান্দরবানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে আনন্দঘন উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। পাহাড়ের আকাশে উড়তে থাকা ফানুস আর প্রদীপের আলোয় সেদিন বান্দরবান যেন শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।