জলখেলী উৎসবের মধ্যে শেষ হয়েছে পাহাড়ের ১৫ দিন ব্যাপী বৈসাবী (বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, বিহু, বিষু) উৎসব। এ উৎসবের শেষ দিনকে কেন্দ্র করে শনিবার রাঙামাটির কাউখালীর বেতবুনিয়ায় আয়োজন করা হয় মহা জল উৎসব। মারমা সাংস্কৃতিক সংসদ (মাসাস) এ উৎসবের আয়োজন করেছে। এ উৎসবে যোগ দেয় রাঙামাটি জেলা ছাড়াও পার্শবর্তী খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ।
সকাল ১১ টায় জলখেলী উৎসব উদ্বোধন করেন রাঙামাটি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এসময় রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ইমতাজ উদ্দিন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেনসহ জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপর্ণ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফিতা কেটে জলখেলীর মঞ্চ উদ্বোধনের পরপরই বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মারমা তরুণ তরুণীরা দলগতভাবে জলখেলীতে অংশ নিয়ে একে অপরের উদ্দেশ্যে পানি ছুড়ে মারেন। জলখেলী মঞ্চের পাশে আরেকটি মঞ্চে মাসাস শিল্পীদের পরিবেশনায় চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন হাজার হাজার মানুষ।
- মারমা বর্ষ পঞ্জিকা অনুসারে শনিবার ছিল ১৩৮৩ মঘাব্দের শেষ দিন। রবিবার শুরু হবে ১৩৮৪ মঘাব্দ। অর্থাৎ আজ মারমা পঞ্জিকা অনুসারে বছরের প্রথম দিন। এ দিনকে সাংগ্রাই বলে থাকেন মারমারা। পুরনো বছর শেষ হবার আগে মারমারা তাদের বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরের বুদ্ধমুর্তিগুলো ধুয়ে পরিস্কার করেন। বয়োজৈষ্ঠদের গোসল করান। সব কাজ শেষে মেতে উঠেন জলখেলীতে।
মারমারা বিশ্বাস করেন এ জল উৎসবের মধ্যে দিয়ে পুরনো বছরের দু:খ কষ্ট গ্লানী মুছে যায়। নতুন বছরে সুখ শান্তি সম্মৃদ্ধি বয়ে আনে।
পাহাড়ের মারমা জাতিগোষ্ঠির নতুন বর্ষ বরণ উৎসবের নাম সাংগ্রাই। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে মারমা পল্লীতে চলে জল উৎসবের আয়োজন। মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে বর্ষ বরণের আনন্দে মেতে উঠে। তাদের বিশ্বাস পবিত্র পানির ধারা ধুয়ে মুছে দিবে পুরনো বছরের সব দুঃখ-গ্লানি।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মাসাস উপদেষ্টা অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিগত দু বছর মারমারা সাংগ্রাই উৎসব পালন করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় মাসাস বেতবুনিয়ায় জল উৎসব আয়োজন করেছে। মাসাস নতুন বছরে প্রত্যাশা করে পুরনো বছরে যত দু:খ কষ্ট গ্লানী ছিল তা মুছে গিয়ে নতুন বছর নতুন সুন্দর দিনগুলো নিয়ে আসবে। এ উৎসবের মাধ্যমে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরো সুদৃঢ় হবে।
মারমাদের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠান হওয়ায় পাহাড়ে সাংগ্রাই পালন করা হয় অত্যন্ত জাকজমকভাবে। তবে মারমাদের পানি খেলা মধ্যে দিয়ে বৈসাবী উৎসব শেষ হয়ে গেলেও এর রেশ থেকে যায় প্রায় পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে।