বৃটিশ আমলের আগ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বিশেষ শাসন ব্যবস্থা প্রচলন ছিল। এ এলাকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি, রীতি, নীতি প্রথা ছিল। সে আলোকে বৃটিশ সরকার সেগুলো মেনে নিয়েছিল। তার আলোকে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তিতে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের বিশেষ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন হয়।
এগুলোতে নারীর মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আইনগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পাহাড়ের নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।
কথাগুলো বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা।
সোমবার সকালে রাঙামাটি শহরের আশিকা ট্রেনিং সেন্টারে অনন্যা কল্যান সংস্থা ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি সমাজে বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন সন্তু লারমা।
সন্তু লারমা বলেন, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবাহ সনদের প্রয়োজন পড়ছে। কিন্তু বর্তমানে আদিবাসী সমাজে এটি বাধ্যতামুলক নয়। মানুষ প্রয়োজনে এ সনদ তৈরি করছে।
সার্কেল চীফ, হেডম্যানরা এটি তৈরি করে দিচ্ছে। অনেকে বুদ্ধ ভিক্ষু দিয়ে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করছে। এটি কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আদিবাসীদের বিবাহ অবশ্যই সমাজের স্বীকৃত হতে হবে।
সন্তু লারমা বলেন, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন নিয়ে এখনই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। এটা নিয়ে আরো গবেষণা দরকার আছে। আরো বহু মানুষ জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে মতামত নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
পরামর্শ সভার সভাপতিত্ব করেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন মং সার্কেল চীফ সাচিং প্রু চৌধুরী।
সভাপতির বক্তব্যে দেবাশীষ রায় বলেন, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন বিষয়ে কারোর দ্বিমত নেই। চাকমা সার্কেলভুক্ত অনেক লোক ভিন্ন দেশে গিয়ে বিবাহ সনদ না থাকায়ে অনেকে বেশ বেকায়দায় পড়ে। পরে তারা আমার কাছে বিবাহ সনদ চেয়েছে। তাদের বিভিন্ন জনকে বিবাহ সনদ দেওয়াও হয়েছে। এটি চুড়ান্ত করার জন্য আরো অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের মতামত নেওয়া প্রয়োজন আছে বলে মত দেন দেবাশীষ রায়। একই কথা বলেন মং সার্কেল চীফ সাচিং প্রু চৌধুরী।
পরামর্শ সভায় বক্তব্য রাখেন, নারী নেত্রী টুকু তালুকদার, হেডম্যান থোয়াই অং মারামা, শান্তি বিজয় চাকমা, এড ভবতোষ দেওয়ান, উইভের নির্বাহী পরিচালন নাই উ প্রু মারমা মেরী, অনন্যা কল্যান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু মারমা মেরী, উন্নয়ন কর্মী টুকু তালুকদার, নারী কার্বারী সান্তনা চাকমাসহ অনেকে।
পরামর্শ সভা শুরু আগে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনের উপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনন্যা কল্যান সংস্থার প্রকল্প পরিচালক দীনেন্দ্র ত্রিপুরা।