সোমবার , ৩০ মে ২০২২ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

কাপ্তাই হ্রদে চর, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ ইউনিট বন্ধ

প্রতিবেদক
জিয়াউর রহমান জুয়েল, রাঙামাটি
মে ৩০, ২০২২ ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পাঁচ ইউনিটের বিশালাকার টারবাইনের ওপর দিয়ে জলধারা গড়িয়ে পড়ে। এতে যে শক্তি তৈরি হয় তা দিয়েই উৎপাদন হয় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ। আর এ উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে প্রতিনিয়ত বিশেষ ওই প্রকল্প বাঁধ দিয়ে পানি ছাড়তে থাকায় অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে হ্রদের পানি। তার ওপর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ‘পানি সংকটে’ পড়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি।

অবস্থা এতটাই নাজুক যে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটিমাত্র ইউনিট কোনোভাবে সচল রাখা হয়েছে। ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থলে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র

৩৫ মেগাওয়াট। সহসাই বৃষ্টিপাত না হলে এই ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের। দ্রুত ড্রেজিং করে নাব্য না ফেরালে সম্ভাবনাময় হ্রদটি পরিত্যক্ত জলাশয়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর প্রবাহে ১৯৬০ সালে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে বাঁধের উজানে পানিপ্রবাহ জমে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এই আয়তনে যুক্ত হয় হ্রদের অববাহিকায় আরও বিস্তীর্ণ এলাকা। জলের এই বাড়াবাড়িতে বাড়ে তখন মানুষের দুর্ভোগ। কিন্তু শুকনো মৌসুমে ঘটে তার ঠিক উল্টোটাই। হ্রদে অসংখ্য ডুবোচর জেগে ওঠে। পানির অভাবে জেলা সদরের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় একমাত্র মাধ্যম নৌ যোগাযোগ।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মিষ্টি পানির কৃত্রিম জলাধার এই কাপ্তাই হ্রদ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ যোগাযোগ, জলে ভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে কাপ্তাই হ্রদ প্রকল্পকে ঘিরে। যে পানি নিয়ে এত আয়োজন, সেই পানিই যে এখন গলার কাঁটা! সংকট সামাল দিতে পরিকল্পনা নয়, বরং প্রকৃতির মর্জির দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।

হ্রদটির আনুমানিক আয়ুষ্কাল ৯০ বছর। যার পর এর তলদেশ পলি পাথরের আস্তরণে সম্পূর্ণ মজে যাওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ ৬২ বছরে একবারও কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পলি জমে আর নিক্ষেপ করা হাজার হাজার টন বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এতে নাব্য কমে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই কৃত্রিম জলাশয়। আর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হ্রদ ঘিরে তৈরি হয় নানান সংকট।

দেশের বৃহৎ এই হ্রদের ওপর নির্ভর করে চলছে মৎস্য ভাণ্ডার, পর্যটনশিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য। বার্ষিক সাত হাজার টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। জেলার একটি বড় অংশের জীবিকাও এর ওপর নির্ভর করছে। এ হ্রদের নৌপথই জেলার ছয়টি উপজেলার মানুষের যোগাযাগের একমাত্র মাধ্যম। প্রতি বছর খরা মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে হ্রদে জেগে উঠে অসংখ্য ডুবোচর। কিন্তু এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। হ্রদের পানি কমে এরই মধ্যে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর।

দখল, দূষণ আর মানবসৃষ্ট বর্জ্যরে সঙ্গে পলি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় হ্রদে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। এ কারণে রাঙামাটির জেলা শহরের সঙ্গে মধ্য এপ্রিল থেকে বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ৬ উপজেলার ৪ লাখের বেশি মানুষ। ইঞ্জিনচালিত ছোট দেশীয় নৌকায় চড়ে আর হেঁটেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছে দুর্গম উপজেলাবাসীকে।

লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় উপজেলায় পণ্যপরিবহনে সংকট দেখা দিয়েছে। পণ্যপরিবহনে বেড়েছে কয়েকগুণ খরচ আর দুর্ভোগ। এতে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। কয়েক লাখ খেটে খাওয়া মানুষ মৌসুমি বেকারত্বেও ভুগছেন। সরকারও হারাচ্ছে কোটি- কোটি টাকার রাজস্ব। আর এ কাজের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে কয়েক হাজার ছোট-বড় ব্যবসায়ী।

তবে আশার কথা শুনিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ২৩ মে জাতীয় সংসদ ভবনে ওই কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কাপ্তাই হ্রদকে মাছ চাষের জন্য অধিক উপযোগী করে গড়ে তোলার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।

বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘রাঙামাটির সঙ্গে সরাসরি লঞ্চ চলাচল না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। ভেঙে ভেঙে যাতায়াতে খরচ ও সময় লাগছে দ্বিগুণ। আবার রাঙামাটি থেকে মালামাল নিতে দ্বিগুণ-তিনগুণ খরচ পড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় ক্রেতাদের ওপর। এ ছাড়া প্রসূতি ও রোগী রাঙামাটিতে নেওয়া দুরূহ হয়ে পড়ছে। কৃষকরাও মৌসুমি ফল-ফসল শহরে নিতে না পারায় দাম পাচ্ছে না। অনেকবার সার্ভে হয়েছে। কিন্তু কেন যে কাজ শুরু হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।

রাঙামাটি নৌপরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় গত এপ্রিলের শুরু থেকেই ৬টি উপজেলায় সরাসরি লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক নৌযান শ্রমিক। গত ৭-৮ বছর ধরে দেখছি সার্ভে হচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কাপ্তাই হ্রদ রক্ষা ও নৌ যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে হলে দ্রুত হ্রদ ড্রেজিং করা দরকার। এ জন্য স্থায়ীভাবে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং মেশিন রাখতে হবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের। তিনি বলেন, রুলকার্ভ অনুযায়ী বর্তমানে হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২২ এমএসএল (মীন সী লেভেল)। কিন্তু সেখানে পানি রয়েছে ৭২ দশমিক ৪৫ এমএসএল। পানির উচ্চতা ৬৮ এমএসএলে নেমে গেলে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ইউনিটই বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থার উন্নতি হবে না বলে জানান তিনি।

কাপ্তাই হ্রদ খনন বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আছে কিনা মুঠোফোনে এমন বার্তা পাঠানো হলে গত ২৪ মে ইতিবাচক জবাব দিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক। কাপ্তাই হ্রদ খনন বিষয়ে তার দপ্তরের উদ্যোগ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগির প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। রাজস্ব বাজেটে কিছু মেইনটেন্যান্সের কাজ করা হবে’।

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

আপনার জন্য নির্বাচিত
%d bloggers like this: