মঞ্চায়িত হল চাকমা নাটক ”দুলো পেদার দোলি নাজানা”। চাকমাদের অন্যতম সামাজিক উৎসব আল পালনী উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে চাকমা ভাষায় এ নাটকটি মঞ্চায়িত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল (জাক) এর পরিবেশনায় নাটকটি মঞ্চায়িত হয়। নাটকটি রচনা করেন শান্তিময় চাকমা।
নাট্য কাহিনী ছিল এক অজপাড়া গ্রামের কার্বারী (গ্রাম প্রধান) দুলোপেদা। তার স্বপ্ন নিজের গ্রামে একটি যাত্রা পালা মঞ্চায়ন করা। অনেক কাঠ খড় পুড়ে যাত্রাপালার জন্য কুশীলব যোগাড় করে দুলোপেদা।
এলাকার ছেলে মেয়েদের ডেকে তাদের সাথে কথা বলে চরিত্রগুলো বন্টন করে দেন দুলোপেদা। নিজের পুত্র ঝকপোজ্যেকে দেন সেনাপতির চরিত্র। চরিত্র বন্টন শেষে শুরু হল মহড়া। মহড়া শেষে দিনক্ষন ঠিক হয়। ঢাক ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দেওয়া হলো যাত্রা পালার মঞ্চায়নের দিনক্ষণ।
নির্ধারিত দিনে যাত্রপালা শুরু হলো। যাত্রা চলার মাঝে দুলোপেদার পুত্র ঝকপাজ্যে (সেনাপতি) রাজকুমারিকে উত্যাক্ত করে । এ কথা জানতে পারে ক্ষেপে যায় রাজকুমার পরান্যা।
এর জেরে সেনাপতি আর রাজকুমারের মধ্যে তলোয়ার যুদ্ধ হয়। নাটকের কাহিনীর মতে এ তলোয়ার যুদ্ধে রাজকুমারের কাছে সেনাপতি পরাজিত হবার কথা। কিন্তু সমাজের কিছু ব্যাক্তির কুটচালে প্ররোচিত হয়ে নাটক চলাকালে রাজকুমারের কাছে পরাজিত হতে রাজি নন সেনাপতি (ঝকপাজ্যে)। বাবা দুলোপেদার যাত্রাপালা ভেঙে দেওয়ার জন্য এক পর্যায়ে নাটকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ঝকপাজ্যে (সেনাপতি)। এমন অবস্থায় নাটকটি সেখানে ইতি টানতে বাধ্য হন কার্বারী দুলোপেদা।
নাটক ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পুরণ হয় না দুলোপেদার। নিজের সন্তান নাটকের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দর্শকদের কাছে ক্ষমা চান দুলোপেদা। অডিটোরিয়াম ভর্তি দর্শকের করতালিতে শেষ হয় দুলো পেদার দোলি নাজানা।
নাটকটি উপভোগ করেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। এ সময় জাকের সভাপতি এড সুস্মিতা চাকমাসহ রাঙামাটির বিশিষ্টজনেরা নাটকটি উপভোগ করেন।
নাটক শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, জাকের এ নাটকের মাধ্যমে আমাদের পাহাড়ি সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। পাহাড়িদের সমাজ ব্যবস্থায় দেখা যায় নিজেদের ঘরের মানুষই কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। নাটকের মাধ্যমে এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
জাকের এমন ধরণের নাটক আগামীতে যেন তৈরি হয় সেজন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগীতার আশ্বাস দেন অংসুইপ্রু চৌধুরী।