বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাঙামাটিতে র্যালী, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চল শাখা। এতে রাঙামাটিতে বসবাস করা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন অংশ গ্রহণ করেন।
মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে আদিবাসী দিবসের কর্মসূচির সুচনা করা হয়। পরে আয়োজিত আলোচনা সভা শুরু হয়।
এতে বক্তারা আদিবাসী শব্দ ব্যবহারে তথ্য মন্ত্রনালয়ের নিষেধাজ্ঞার পরিপত্রের তীব্র প্রতিবাদ ও তা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে সংবিধানে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে অপমান জনক শব্দ উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ না করে সম্মান জনকভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবী জানান।
আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি সংসদীয় আসনের সাবেক সদস্য উষাতন তালুকদার।
এ সময় তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের ভূমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কোন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না।, আদিবাসীরা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চায়। তাদের বেশি কিছু চাওয়া পাওয়া নেই। কিন্তু তাদের দাবিয়ে রাখতে ষড়যন্ত্র করছে বর্তমান সরকার। এর পরিনাম শুভ হবে না বলেন উষাতন তালুকদার।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পাহাড়ে নিত্য নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে উষাতন তালুকদার বলেন ২০০৯ সালে আদিবাসী স্বীকৃতি দিয়ে বাণী পাঠিয়েছেন আদিবাসী দিবস উপলক্ষে। দিপুমনি (শিক্ষামন্ত্রী) কয়েক বার আমাদের মিছিলে ছিলেন। তারা এখন বলছে দেশে আদিবাসী নেই। এ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।
যখন বিরোধীদলে থাকা হবে তখন আদিবাসী বলা যাবে। আর যখন সরকারি দলে যাওয়া যাবে তখন আর আদিবাসী বলা যাবে না। এটা কোন বিবেক?
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা বলেন, কিছু ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার্থে আদিবাসীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।
বিজয় কেতন চাকমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে কতগুলো আদিবাসী আছে এদের বিভাজনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে শাসকগোষ্ঠী। এ থেকে আদিবাসীদের বেরিয়ে আসতে হবে। অধিকার আদায়ে আরো সক্রিয় হতে হবে। না হলে সরকার আদিবাসীদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে না। সংবিধানে যতদিন আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না ততদিন আন্দোলন চালিয়ে নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘে সদস্যভুক্ত একটি দেশ। আইএলও কনভেশন ১০৭ সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদে বাংলাদেশ সরকার অনুস্বাক্ষর করেছে। সেটি বঙ্গবন্ধুর আমলে এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার আমলে। এসব সনদে অনুস্বাক্ষর করা দেশগুলো তাদের দেশের অভ্যন্তরে আদিবাসী আছে বলে স্বীকার করেছে। কিন্তু এখন তারা দেশে আদিবাসী নেই বলছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবী লতা চাকমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের রাঙামাটি সভাপতি দীপন কুমার ঘোষ, সিনিয়র আইনজীবী ভবতোষ দেওয়ান, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা।
আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি চাকমা। এরপর পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়। এর আগে বেলুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন করা হয়। পরে হয় ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী শিল্পীদের নিয়ে ডিসপ্লে নৃত্য।
আলোচনা সভা শেষে একটি র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি পৌরসভা থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।