বান্দরবানের সদর উপজেলার টংকাবতী এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাবের সদস্যরা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেনসহ ৯ জঙ্গি সদস্যকে আটক করেছে।
এসময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় র্যাব।
এর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফলে সব মিলিয়ে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ সদস্যকে গ্রেফতার করলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, পার্বত্য অঞ্জলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার, কুমিল্লা সদরের দিদার হোসেন মাসুম ওরফে চাম্পাই (২৫), নারায়ণগঞ্জ সদরের আল আমিন সর্দার ওরফে আব্দুল্লাহ বাহাই (২৯), ঢাকা কামরাঙ্গী চরের সাইনুন ওরফে হুজাইফা রায়হান (২১), সিলেট বিরানী বাজারের তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাবেল (১৯), সিলেট শাহপরান এলাকার লোকমান মিয়া (২৩), কুমিল্লা লাকসাস এলাকার ইমরান হোসেন ওরফে শান্ত (৩৫), ঝিনাইদহ কোর্টচাদপুর এলাকার আমির হোসেন (২১), বরিশাল সদরের আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং (২৮), ময়মনসিংহ ফুলপুরের শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই (২৪)।
সোমবার (১৩ মার্চ ) সকালে বান্দরবানের র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের পাহাড়ের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন চম্পাইকে ধরার জন্য র্যাব নানা তৎপরতা চালিয়েছে। এরা পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফের ছত্রছায়ায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে বিভিন্ন গোপন আস্তানায়। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের অন্যতম ছিল এই চম্পাই। রবিবার চম্পাইসহ অপর ৯ জন সদস্য সমতলে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে র্যাবের হাতে। এ নিয়ে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের ৩৭ জন সদস্যকে পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। এরা বিভিন্ন সময়ে কথিত হিজরতের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাহাড়ে এসে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
প্রেসব্রিফিং এ র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে, আর তারই ধারবাহিকতায় নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’র বেশ কয়েকজন সদস্য পাহাড়ে অবস্থান করে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন- এমন খবর পেয়ে র্যাব গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বান্দরবানে সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে।
এসময় তিনি পার্বত্য এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’র ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যদের নিমূল না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে বলেও সাংবাদিকদের জানান।
এতদিন জঙ্গীরা দুর্গম পাহাড়ে তাদের অবস্থান, এখন সমতলে অর্থাৎ দিনদিন শহরকেন্দ্রিক হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাদের আমিরের নির্দেশনা অনুযায়ী আত্মগোপন আর নিরাপদে যাওয়ার জন্য জঙ্গিরা এসব স্থান বেছে নিচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, যৌথবাহিনী অভিযান কারণে তারা মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিরাপদ মনে করছে না। সেজন্য জঙ্গিরা সমতলে আত্মগোপনে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের আমিরে নির্দেশনা না-কি অন্য কোন কারণ রয়েছে পরবর্তীতে আমরা জানাতে পারবো।
র্যাবের অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের কাজ থেকে যে অস্তগুলো পেয়েছি সেগুলি মূলত উদ্ধার করেছি। আমাদের যা তথ্য রয়েছে বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন তাদের কাছে ভারী অস্ত্র রয়েছে।
কেএনএফ বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা যখন অভিযান পরিচালনা করি এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৭জন পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফকে আইনের আওতা আনতে সক্ষম হয়েছি। গতকাল অভিযানে জঙ্গিদের সাথে পথপ্রদর্শক আর আশ্রয় প্রদানকারী হিসেবে কেএনএফ সদস্য থাকার একটি সম্ভাবনা এরকম তথ্য রয়েছে।
অভিযানে এই পর্যন্ত পাহাড়ে কতজন জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্য আটক হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে জঙ্গিবাদের উদ্ভূত হয়ে যে ৫৫জনের তালিকা দিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে ৩৮জন জঙ্গিকে সনাক্ত করেছি। তাছাড়া পাহাড়ে বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন কেএনএফ ১৭ জনকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।
প্রসঙ্গত, ২০২০সাল থেকে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি বম সম্প্রদায়ের কিছু বিপথগামী যুবক কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তুলে আর পরবর্তীতে তাদের অর্থের বিনিময় মাধ্যমে আশ্রয়ে শসস্ত্র প্রশিক্ষণে যুক্ত হয় সমতল থেকে আসা নব্য জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার বেশ কিছু সদস্য। এদিকে তাদের নির্মূলে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনীর বাহিনীর সদস্যরা।