পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ চতুর্থ সংঘরাজ এটিএন বাংলা ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক সাদা মনের মানুষ উপাধি প্রাপ্ত,মায়ানমার সরকার কর্তৃক অগ্রমহাপন্ডিত উপাধিতে ভূষিত, মগবান শাক্য মনি বৌদ্ধ বিহারের আজীবন অধ্যক্ষ, কাচালং শিশু সদনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথের ভান্তের মরদেহটি সংরক্ষণের জন্য পেটিকাবদ্ধ (বিশেষ কফিনে প্রবেশ) করার আনুষ্ঠানিকতা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করা হয়েছে।
বুধবার রাঙামাটি’র বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপকারী ইউনিয়নের মগবান শাক্যমনি বৌদ্ধ বিহার মাঠ প্রাঙ্গনে পেটিকাবদ্ধ(বিশেষ কফিনে প্রবেশ) করানোর উপলক্ষে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান ও স্মৃতিচারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান ধর্মীয় গুরু হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথের ও
সুমনালংকার মহাথেরো।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি সাংসদ দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অং সুই প্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুমানা আক্তার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা, বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা, বাঘাইছড়ি পৌর মেয়র জমির হোসেন।
স্মৃতিচারণ সভায় বক্তারা, তিলোকানন্দ মহাথের ভান্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ও মহান আর্দশ পুরুষ। শাসন সদ্বধর্মের শ্রীবৃদ্ধি ও শিক্ষার বিস্তারে আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তার মহাপ্রয়ানে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশসহ পার্বত্য অঞ্চলের বৌদ্ধ সমাজে বিরাট ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পার্বত্য উপত্যকায় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীসহ শিক্ষানুরাগী প্রতিটি মানুষ তাঁর শূণ্যতা বহুকাল অনুভব করবে।
পরে দুপুরে সাধু সাধু ধ্বনিতে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের চতুর্থ সংঘরাজ ও সাদা মনের মানুষ উপাধিপ্রাপ্ত তিলোকানন্দ মহাথের ভান্তের মরদেহটি সংরক্ষণের জন্য পেটিকাবদ্ধ( বিশেষ কফিনে প্রবেশ) করানো হয়। এসময় হাজারো বৌদ্ধধমালম্বীরা তিলোকানন্দ মহাথের ভান্তের মরদেহটি ফুলদিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পেটিকাবদ্ধকরণ অনুষ্ঠান যোগ দিতে বিভিন্ন দুর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার বৌদ্ধধর্মালম্বীদের সমাগম ঘটে। দেশ বিদেশে ভান্তের ভক্তদের জন্য পেটিকাবদ্ধ করা ভান্তের মরদেহটি এক বছরের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হবে।
তিলোকানন্দ মহাথের ভান্তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম হতে নিজ বিহারে যাওয়ার পথে গত ২ নভেম্বর রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে ৮৬ বছর বয়সে
মহাপ্রয়ানে শানিত হন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস ও কিডনিসহ নানা জটিল রোগে ভুগেছিলেন। তিলোকানন্দ মহাথের ১৯৩৭ সালের ২৮ আগস্ট রাঙামাটির শুভলং ইউনিয়নের বেতছড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে উপসম্পাদনা গ্রহণ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে গরিব, অনাথ ও অসহায় শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষায় অনাথালয় ও বিহার প্রতিষ্ঠা করে মানবসেবায় অবদান রাখায় ২০০৭ সালে এটিএন বাংলা তাঁকে ‘সাদা মনের মানুষ’ নির্বাচিত করে এবং স্বর্ণপদক দেয়। ২০১১ সালে তিনি পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের চতুর্থ মহাসংঘরাজ হন।