রাঙামাটির বরকলে লোকজন অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আড়াই মাসের ব্যবধানে ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আক্রান্ত রয়েছেন আরও ১২/১৩ জন। বিষয়টি এতদিন অজানা থাকলেও বুধবার হঠাৎ এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলায় তোলপার সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে ৬ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা যায়, বরকল উপজেলার ভুষণছড়া ইউনিয়নে দুর্গম চান্দবিঘাট এলাকায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। এতে ইতোমধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রথমে ১০ জানুয়ারি মারা গেছেন মারা যান ওই এলাকার পিদেয়ে চাকমার ছেলে বিমলেশ্বর চাকমা (৫৫)। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি লবিন্দর চাকমার ছেলে পদ্ম রঞ্জন চাকমা (২৫), ২৬ ফেব্রুয়ারি মারা যান মিলন শংকর চাকমার ছেলে ডালিম কুমার চাকমা(৩৫), ১৫ মার্চ লবিন্দর চাকমার ছেলে চিত্তি মোহন চাকমা (৬০) ও সবশেষ ১৭ মার্চ ডালিম কুমার চাকমার মেয়ে সোনি চাকমা (৮)। বর্তমানে আরও ১২/১৩জন গুরুতর আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের চারজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন কালাবিজা চাকমা, বাবুধন চাকমা, ভাক্তি চাকমা ও সুমনা চাকমা। আক্রান্ত হলে প্রথমে জ্বর, পেট ব্যথা, বমি ও গা ব্যথা দেখা দেয়। রক্তবমিও হয়। এক পর্যায়ে দ্রুত মৃত্যু ঘটে রোগীর। স্থানীয়দের মতে, ওই এলাকায় এটি পুরনো বটগাছ ছিল। সেটি কাটার পর থেকে এ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। চিকিৎসকরা বলছেন, সেটি কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস। যতদূর ধারণা খাদ্যে বিষক্রিয়া বা পানিবাহিত রোগের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম বৃহস্পতিবার সকালে পাঠানো হবে। তারা ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।
চিকিৎসা টিম আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবেন। বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা জানান, এলাকাটি খুবই দুর্গম। তবে জানুযারি থেকে এ অজ্ঞাত রোগে লোকজন মারা যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্থানীয় এতদিন বিষয়টি জানাননি। দুয়েক দিন আগে এক ব্যক্তি তাকে ঘটনাটি জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মংক্যসিং মারমা সাগর বলেন, মারা যাওয়ার ঘটনাটি ১৯ মার্চ জেনেছেন। এরপর তিনি সিভিল সার্জনকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে পৌছে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেবেন। টিমটি ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ওই এলাকায় পুরাতন একটি বটগাছ কেটে ফেলার পর থেকে নাকি লোকজন রক্ত বমি ও জ্বর হয়ে কয়েক জন মারা গেছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান মঙ্গলবার বিষয়টি আমাকে জানান। মেডিকেল টিমটি প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে আক্রান্তরদের চিকিৎসা দেবেন।
সিভিল সার্জন ডা. নীহার নন্দী জানান, আমাদের প্রাথমিক ধারণা খাদ্যে বিষক্রিয়া অথবা পানিবাহিত জীবানুজনিত কারণে এ ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। বটগাছ কেটে ফেলার বিষয়টি কুসংস্কার। সেখানে দ্রুত মেডিকেল টিম পাঠানো হচ্ছে। তারা গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। ফিরলে বিস্তারিত জানা যাবে।