রাউজান থেকে বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মান্নানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ-তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দৃর্বৃত্তরা।
আজ বুধবার বিকেলে রাউজানের চারা বটতল চৌধুরী মার্র্কেট এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত শ্রমিক লীগ নেতা হলো আব্দুল মান্নান(২৭) কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক। সে সুগারিমল ডাকবাংলো এলাকার জনৈক কবির আহাম্মদের ছেলে বলে জানা যায়।
কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ শ্রমিকলীগ নেতাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন বলেছেন ঘটনাস্থল রাউজান থানার অধিনে হওয়ায় সে থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে গত ৬ আগষ্ট কাউখালী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা শহিদুল ইসলাম রনি (২২) কে কাউখালী উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন রাঙ্গুনীয়ার পাইন বাগান ত্রিপুরাদীঘি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করেছে দৃর্বৃত্তরা। এ নিয়ে গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর কাউখালীর দুজন ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগ নেতাকে হত্যা করা হয় কাউখালী উপজেলার পাশর্^বর্তি রাঙ্গুনীয়া ও রাউজান উপজেলায়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ সুত্রে জানা যায়, আজ বুধবার বেতবুনিয়া চায়েরী বাজারের সাপ্তাহিক হাটের দিন ছিলো। এ দিন সকাল দশটার দিকে দৃর্বৃত্তের একটি দল চায়েরী বাজারে বাজার করতে আসা হেলাল উদ্দিন(৫৮), তৈয়ব হোসেন ঝুনু(৫২), উক্যচিং মারমা (৩৫), ব্যবসায়ী প্রদীপ দে (৬০), সেলুনের দোকানদার রাজীব শীল(৪২) কে মারধর করে।
সুত্র জানায় গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর পর কাউখালী তথা বেতবুনিয়া এলাকা থেকে আওয়ামীলীগের প্রায় সকল নেতা কর্মীরা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একদল দৃর্বৃত্ত বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে বিভিন্নজনকে মারধর করতে থাকলে নিরাপদে নিজ বাড়ী থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার চেষ্টা করে শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মান্নান। সুযোগ বুঝে দুপুর দু’টার দিকে বাড়ী থেকে বের হয়ে একটি সিএনজি অটোরিকসাতে করে রাউজানের দিকে রওনা হলে তাকে সিএনজিতে দেখে একদল দৃর্বৃত্ত পিছন থেকে দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে রাউজানের চারা বটতল এলাকায় নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে পাশ্ববর্তী চৌধুরী মার্কেটের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে উদ্ধার করে রাউজানস্থ জেকে মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
নিহত আব্দুল মান্নানের ভায়রা কোরবান আলী ড্রাইভার জানিয়েছেন হাসপাতাল থেকে লাশ বেতবুনিয়ার সুগারমিল ডাকবাংলো এলাকার বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়। নিহত আব্দুল মান্নানের বুকে এবং বাম হাতে জখমের চিহৃ আছে। আব্দুল মান্নানের বাড়ী থেকে কাউখালী থানা পুলিশ লাশ রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। তিনি আরো জানিয়েছেন আব্দুল মান্নান নিহত হওয়ার আগেও বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত বিষয়ে জনৈক শওকতের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। কেবা কারা তাকে হত্যা করেছে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। পেশায় গাড়ী চালক আব্দুল মান্নানের দুই স্ত্রী দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামশুদ্দোহা চৌধুরী জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই উপজেলা ছাড়া। এরমধ্যে যে কয়েকজন আছে তাদেরও নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। আব্দুল মান্নানও যে এলাকায় থাকে সেখানে আজ সকালে বাজারে কয়েকজন স্থানীয় লোকজন এলোপাতারি হামলা করে। পরে যেটা শুনেছি হামলার খবর শুনে মান্নান সিএনজি যোগে এলাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে কয়েটি মোটরসাইকেল তাকে তাড়া করে। ধারনা করছি রাজনৈতিক কারনে তাকে রাউজানে মেরে ফেলে রাখে।
কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আব্দুল মোতালেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বেতবুনিয়া এলাকায় অজ্ঞাতনামা দৃর্বৃত্তদের হাতে মারধরের শিকার ও রাউজানে কাউখালীর শ্রমিকলীগ নেতা হত্যার নিন্দা জানান। তারা শান্তিপূর্ন এলাকাকে যারা অশান্তি সৃষ্টি করার পায়তারা করছে তাদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন প্রশাসনের প্রতি।
কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ রাজীব চন্দ্র কর জানিয়েছেন নিহতের লাশ তার বাড়ী থেকে উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে পোষ্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন ঘটনাস্থল রাউজান থানা এলাকায় হওয়ায় পরবর্তীতে সেখানে মামলা দায়ের করা হবে।