রাঙামাটি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের গুল্যা কার্বারী পাড়া ও বিমলেন্দু পাড়া। দুই পাড়ায় দেড়শ পরিবারের বসবাস। এ দুই পাড়ার উত্তর পাশ ঘেঁষে গেছে সড়ক গেছে সড়ক। এ সড়কের উপর দিয়ে গেছে বিদ্যুতিক লাইন। সড়ক দিয়ে গাড়ি চলে। রাতে ওপাড়ে বিদ্যুতের বাতি জ্বলে। এসব দেখে আপেক্ষ করেন গুল্যা কার্বারী পাড়া ও বিমলেন্দু পাড়ার মানুষজন।
সরেজমিন দেখা যায়, কারণ ১৫০-২০০ মিটারের একটি সেতুর অভাবে গ্রামে আসতে পারে না গাড়ি। গ্রামের পূর্ব পাশ থেকে ৮-১০টি খুটি হলে গ্রামে আনা যাবে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ লাইন না থাকায় বিদ্যুৎহীন দুটি গ্রাম। ফলে প্রতিদিনি চোখের সামনে উন্নয়নের দৃশ্য দেখেন কিন্তু এ সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।
দুই গ্রামের প্রাক শিশুদের পড়ানোর জন্য উন্নয়ন বোর্ডের একটি পাড়া কেন্দ্র আছে। প্রকল্প শেষ হওয়ায় সেটিও বন্ধ। নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে পড়তে হলে দুরের স্কুলে যেতে হয় শিশুদের। গ্রামে নেই সরকারী কোন টিউবওয়েল। দুই গ্রামে এক ইঞ্চিও নেই পাকা বা ইটসলিং সড়ক। সুবিধা বঞ্চিত এ দুই গ্রামের মানুষ চায় সড়ক বিদ্যুৎসহ সরকারী সুযোগ সুবিধা।
গুল্যাপাড়ার গ্রাম প্রধান সুভাষ কান্তি চাকমা বলেন, আমরা উদ্ভাস্তু মানুষ। বিরাজমান পরিস্থিতিতে জমি জমা হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে রাস্তাঘাট নেই। যাতায়াতের কষ্ট। পানি নেই।
কিছু দিন আগে জেলা পরিষদের সদস্য প্রিয়নন্দ চাকমা ও ঝর্ণা খীসা গ্রামে এসেছিলেন। এসে গ্রামের মানুষের বিশুদ্ধ পানির জন্য দুটি গভীর নলকূপ স্থাপনের আশ্বাস দেন। কিন্তু কারেন্ট না থাকায় সেগুলো হয়নি। আশপাশে কোন ক্লিনিক নেই। স্কুল নেই। কোন কিছু নেই। হঠাৎ হাসাতালে রোগী নিতে কষ্ট হয়। রাস্তা না থাকায় পানি বন্ধি থাকতে হয়। গ্রাম দুটি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। সেতুটি হলে আমরা ঘর থেকে গাড়ি নিয়ে বের হতে পারতাম। আমরা শুধু উন্নয়ন দেখছি কিন্তু ভোগ করতে পারছি না।
দুই গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার শুভেদেব চাকমা বলেন, গ্রাম দুটি কাপ্তাই হ্রদের দ্বীপে হওয়ায় সরকারী উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হলে পরিবহন ব্যয়ের ভয়ে ঠিকাদারগণ এখানে কাজ করতে চায় না।
এ দুটি গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন ঘর আমরা করতে পরিনি। একটি সেতু হলে গ্রাম দুটি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসবে। তখন গ্রামের ভিতরে গ্রাড়ি যাবে। সেতুটি না হওয়ায় তারা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যেত কিন্তু কেন দেয়া হয়নি। গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে শুনেছি গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ বিভাগকে তাদের চাহিদামত টাকা দিতে পারেনি সেজন্য দেয়া হয়নি। বিষয়টি দু:খজনক।
খেদারমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্টু চাকমা বলেন, গ্রামে উন্নয়নের ছোয়া না লাগায় এখনো পিছিয়ে আছে গ্রাম দুটি। দুই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৬শ জন। ছোট্ট দুটি সেতু হলে এ গ্রামটি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসবে। ৮-১০টি খুটি দিলে গ্রামে আনা যাবে বিদ্যুৎ। গ্রাম দুটি বাতির নিচে অন্ধকারের মত হয়ে পড়ে আছে। অথচ এ গ্রাম দুটির চারদিকে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। এ গ্রামে সেতু নির্মাণে ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, এলজিইডি, বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগকে একাধিকবার আবেদন করেছি কিন্তু কাজ হয়নি। আমি চাই এ এলাকায় উন্নয়ের ছোয়া লাগুক।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, পুরো বাঘাইছড়ি উপজেলায় এমন একাধিক বঞ্চিত গ্রাম আছে। এসব গ্রামগুলোর দিকে সুদৃষ্টি দিতে উন্নয়নের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, এলজিইডির সহযোগীতা দরকার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সুযোগ থাকলে গুল্যা ও বিমলেন্দু পাড়ায় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। ১৯৮৮ সালের দিকে পাহাড়ের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে উদ্ভাস্তু হয় এ পরিবারগুলো। জমি জমা হারিয়ে আশ্রয় নেয় এ গ্রামে। ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় এসব পরিবারগুলো যেমন জমি ফেরত পায়নি তেমনি বঞ্চিত রয়েছেন সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে।