শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ৬১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করা হলেও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তবে তারা দপ্তরে অনুপস্থিত থেকেও বেতনভাতা ভোগ করছে।
গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অব্যহতির ঘোষণা দিয়েছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক ঢাকা কার্যালয়ে ও চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়ায় মার্ডার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে চেয়ারম্যান-সদস্যদের অনুপস্থিতির কারণে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের দাপ্তরিক, প্রশাসনিক, সেবা-পরিষেবাসহ পরিষদীয় সব ধরনের কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ও স্থানীয়রা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সবশেষ ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রাঙামাটিতে অংসুইপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়িতে মংসুইপ্রু চৌধুরী ও বান্দরবানে ক্যশৈহ্লা মারমাকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠন করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। তিনটি পরিষদে মনোনীত এসব চেয়ারম্যান-সদস্যরা সবাই আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতা। বলে রাখা ভাল- ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তির বিশেষ শর্তে প্রবর্তিত এই তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পাঁচ বছর অন্তর তিন জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করার বাধ্যবাদকতা থাকলেও পার্বত্য চুক্তি পরবর্তী কোন সরকারই নির্বাচনের পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বর্তমান ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালিন সরকার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের আমলেই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
চেয়ারম্যান-সদস্য পদে নিজস্ব লোকজনদের নিয়োগ দিয়ে পরিষদ তিনটি পরিচালনা করে আসছিল বিগত সরকারগুলো। বর্তমান অন্তর্বতীকালিন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার মনোনীত চেয়ারম্যান-সদস্যদের অপসারণ করে জেলা পরিষদ তিনটি পূর্ণগঠনের কথা শুনা গেলেও এ পর্যন্ত তা কার্যকর করা হয়নি। তবে ইতোমধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে অংসুইপ্রু চৌধুরী স্বেচ্ছায় অব্যাহতির ঘোষণা দিলেও অন্য সদস্যরা এখন বহাল আছেন, যদিও তারা সবাই আত্মগোপনে রয়েছেন।
তবে চেয়ারম্যান অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে স্বেচ্ছায় অব্যাহতির পর সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়াকে (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতি মধ্যে রেমলিয়ানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুদকে অভিযোগ ও চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ায় মার্ডার মামলা করা হয়। তার পরও সে কি ভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকেন? এনিয়ে গোটা শহর জুড়ে কানাগোষা চলছে।
এদিকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অংসুইপ্রু চৌধুরীর অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, তিনি (অংসুইপ্রু চৌধুরী) ৩ সেপ্টেম্বর এ ধরনের একটি অব্যাহতি বার্তা পাঠিয়েছেন। তাছাড়া বিগত সরকার পতনের পর থেকে এ পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যরা দাপ্তরিক কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। তিনি আরো বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায় আমি স্বাক্ষর করি। বাকি সব কার্যক্রম স্তবির রয়েছে।