বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর রাঙামাটি পৌর শাখার কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ১৮ বছর পর কোন খোলা ময়দানে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে অসংখ্য কর্মীদের জমায়েত দেখা যায়।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা সদর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা হতে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে আনন্দ ও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমবেত হয় পৌরসভা মাঠ প্রাঙ্গণে। সেখান থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে শো-ডাউন দেন আগত নেতাকর্মীরা। শো-ডাউন শেষে বনরূপা কেন্দ্রস্থ আলামিন মাদ্রাসায় কর্মী সমাবেশে যোগ দেন সকলে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি রাঙামাটি পৌরসভা শাখার আয়োজনে কর্মী সমাবেশে পৌর আমির মুহাম্মদ আব্দুস সালাম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
সমাবেশের প্রথমেই স্মারণ করা জুলাই বিপ্লবে নিহত শহিদের ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, বিশ্ব নৈন্দিত আলেমে দ্বীন মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা মুহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলীসহ বিগত সময়ে সকল শহীদের।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চায়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ চায়। বাংলাদেশ শান্তি প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের আমির ডা.শফিকুর রহমানের কোন বিকল্প নাই। আগামীতে জামায়াত দেশের নেতৃত্ব দেবে। এদেশের জনগণ এখন জামায়াত ইসলামিকে দেশের ক্ষমতায় দেখতে চায়। দেশের সূর্য সন্তান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, বিশ্ব নৈন্দিত আলেমে দ্বীন মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা মুহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলীসহ দেশরত্নদের বিনা কারনে ফাঁসি দিয়েছে শেখ হাসিনা। আমরা গত ১৮ বছর কথা বলার সাহস পাইনি। দীর্ঘ ১৮ বছরে সবচেয়ে বেশী আগাত এসেছে জামায়েত ইসলামীর উপর। এখন সময় এসেছে কথা বলার। এই বাংলার মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্টের জন্ম হতে দিবে না এই বাংলার মানুষ।
প্রধান বক্তা-সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও আমির চট্টগ্রাম মহানগর শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ১৮বছর পরে আমরা র্নিভয়ে সমাবেশ করতে পেরে আল্লার দরবারে শোকরিয়া জানাই। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২- ১৯৭৫ সালে ইসলামের উপর সব চেয়ে বেশি আঘাত এসেছে। ১৯৭২-১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব জামায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তিনিই ইসলামের উপর সবচেয়ে বেশি আগাত করেছেন। পরবর্তীতেও দীর্ঘ ১৮ বছর ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমালে সব চেয়ে বেশি আঘাত হয়েছে জামায়াতের উপর। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৮টি বছর স্বাধীনতা বিরোধী, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে ধমিয়ে রাখতে চেয়েছিল আজ জামায়াত সারা দেশে মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। এদেশের মাটিতে জামায়াতকে কখনো ধমিয়ে রাখা যাবে না। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আমাদেরকে দেশ বিরূধী আখ্যা দেওয়া হয়েছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেশ বিক্রি করার দল ছিল আওয়ামী লীগ।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য মোহাম্মদ জাফর সাদেক, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জামায়াত আমির, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। জামায়াতে ইসলামি রাঙামাটি জেলা শাখার সেক্রেটারি মোঃ মনছুরুল হক, রাঙামাটির জেলা আইনজীবী এড. মুক্তার হোসেন, এড. জিল্লুর রহমানসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের জামায়াতে ইসলামি নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, শেখ হাসিনা এত ভালো শাসক হলে পালিয়ে গেলেন কেন? বাংলাদেশের ইতিহাসে তো কোন শাসক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। তিনি পালিয়ে যাওয়ার কারণ তার হাতে অসংখ্য নিরীহ ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ লেগে আছে। দেশের জনগণ গত ১৮ বছর ধরে অন্যায় ভাবে নির্যাতন, হয়রানি ও জুলুমের শিকার হয়ে এদেশের রাজপথে অনেক চোখের পানি ফেলেছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে অনেকে স্বামী হারিয়ে, অনেকে সন্তান হারিয়েছ্র আবার অনেকে ভাই হারিয়েছে। তাই আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল অন্যায় অত্যাচরের বিচার দাবি করছি।
বক্তারা আরও বলেন, ইসলামি আন্দোলনকে যুগে যুগে পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আগামী দিনের যে কোন আন্দোলনে জামায়েতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিবে। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের উৎখাত হয়েছে। নতুন করে আর কোন ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসকে ১ দিনর জন্যও মেনে নিবে না এই দেশের জনগণ ও বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী। নতুন করে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে এতে খুশী হওয়ায় কিছু নেই এই স্বাধীনতা রক্ষা করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আর কোন স্বৈরাশাসাকের জন্ম যাতে এই বাংলায় না হয় সে জন্য সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি এদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে আল্লাহর জমিতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চায়।