ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই প্রতিনিধি।
কাপ্তাই উপজেলা সদর পাড় হয়ে ১৫ কিঃ মিঃ সড়ক পথে কাপ্তাই বাণিজ্যিক এলাকা জেটিঘাট। কাপ্তাই লেক সংলগ্ন এই জেটিঘাট এলাকা হতে ইঞ্জিন চালিত বোটে ঘন্টা দেড়েক পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় ভাইজ্জাগোড়া। সেইখান হতে ৩ কিঃ মিঃ উচুঁ নীচু পাহাড়ী পথ পাড়িয়ে ভাঙ্গামুড়া গ্রামে পৌঁছাতে হয়।
কাপ্তাই উপজেলাধীন ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ভাঙ্গামুড়া গ্রাম, আড়াছড়ি মৈন পাড়া আর তাইতং ছড়া পাড়া মিলে প্রায় ১ শত ৩০ পরিবারের বসবাস। মূলত তনচংগ্যা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন এই পাড়ার বাসিন্দা। কিন্ত এই তিন পাড়ার ৪ শতাধিক জনগোষ্ঠীর জন্য নাই কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
গ্রামের কিছু শিক্ষিত যুবক এবং গ্রামের বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তিগণের সহযোগিতায় ২০০৭ সালে এই ভাঙ্গামুড়া পাড়ায় স্থাপন করা হয় ভাঙ্গামুড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্ত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর চললেও এখনোও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয় নাই। একটি বেড়ার তৈরী ঘরে প্রথম শ্রেণী হতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস সারতে হয়। স্কুলে নেই কোন বেঞ্চ। ফলে মেঝেতে বসে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয়। মেঝের অবস্থাও জরাজীর্ণ। আবার নিয়মিত ৩ জন শিক্ষক সময়মতো বেতন পাননা। মাঝে মধ্যে পেলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকরে দায়িত্বে আছেন আনন্দজয় তনচংগ্যা। তিনি জানান, বর্তমানে স্কুলে সর্বমোট শিক্ষার্থী ৫০ জন। ক্লাস রুম মাত্র একটি। পালা করে আমরা প্রথম হতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস করি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ হতে মাসিক যৎসামন্য বেতন দিয়ে আমরা ৩ জন শিক্ষক বেতন নিই। আবার অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের পরিবার অতি দরিদ্র। ফলে সবার বেতন নেওয়া সম্ভব না। আমরা এলাকার টানে ধরতে গেলে স্বেচ্ছাশ্রমে বছরের পর বছর পড়াচ্ছি।
তিনি আরোও বলেন, বছরের প্রথমদিকে শুধুমাত্র উপজেলা শিক্ষা বিভাগ হতে আমাদেরকে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়। যদি বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয় তাহলে সকলে উপকৃত হবে।
স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জীবক তনচংগ্যা, বিশন্ত তনচংগ্যা ও কান্তি বিকাশ তনচংগ্যা বলেন, আমরা এলাকাবাসী চাঁদা তুলে ২০০৭ সালে এই এলাকার শিশুদের কথা চিন্তা করে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করি। ২০১১ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রিনহীলের অর্থায়নে এই স্কুলটি পরিচালিত হলেও বর্তমানে কোন রকম অনুদান ছাড়া এই বিদ্যালয় চলছে। এলাকাবাসী সকলে এই বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের দাবি জানান।
৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নবীন কুমার তনচংগ্যা জানান, ২০১১ সালে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরীর উদ্যোগে রাঙামাটি জেলা পরিষদ এর অর্থায়নে এই বিদ্যালয়ের জন্য একটি ভবন নির্মান করে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এই ইউপি সদস্য আরোও জানান, এই গ্রামে আধুনিকতার কোন ছোঁয়া নেই বললেই চলে, নেই ভালো কোন যোগাযোগ, নেই কোন বিদ্যুৎ সুযোগ সুবিধা, বিশেষ করে পানির ব্যবস্থাপনা খুবই খারাপ অবস্থা, অনেক দূর থেকে ব্যবহার্য ও খাবার পানি আনতে হয়। এখানে নেই কোন শিক্ষার ও সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা। এই গ্রামে যদি একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয় তাহলে এলাকার মানুষের জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম শিশুদের জন্য খুবই উপকার হবে।
৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, এই ওয়ার্ডের অন্তর্গত হরিনছড়া এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্ত সেটা ঐ পাড়াগুলো হতে বেশ দূরে। তাই এই তিন পাড়া মিলে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হলে এলাকবাসীর শিক্ষা অধিকারের সুযোগ পাবে।
কাপ্তাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ইদ্রিচ বলেন, বেসরকারি স্কুল জাতীয়করনে আমাদের হাত নেই। আমরা প্রতিবছর এই বিদ্যালয়ে বই দিয়ে থাকি।