জাতীয় পর্যটন নীতি ২০১০ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পাহাড়ে পর্যটক কর্তৃক বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এগুলো কমিয়ে আনার জন্য পর্যটন নীতিমালা ২০১০ যথাযত কার্যকর বাস্তবায়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ১৯৯৭ মোতাবেক পাহাড়ে স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি কৃষ্টি ঐতিহ্য পরিবেশের প্রতি সংবেধনশীল ও সম্মান প্রদর্শন নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত বৈষম্যহীন পর্যটন ব্যবস্থা গড়ার প্রতি জোর দিয়েছেন রাঙামাটির বিশিষ্টজনেরা।
বুধবার সকালে রাঙামাটি জেলা পরিষদের এনেক্স ভবনের সম্মেলন কক্ষে “সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল পরিবেশ ও নারী বান্ধব পর্যটন” বিষয়ক একে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বক্তারা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি জেলা পর্যটন বিষয়ক আহবায়ক রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য নিউচিং মারমা।
তারুম ডেভেলপমেন্ট অরগাইনেশনের সহায়তায় ডব্লিউআরএন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় বক্তারা বলেন, কিছু পর্যটক অহেতুক হৈ হুল্লা, পবিত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিধি নিষেধ অমান্য করা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি- প্রথাকে অসম্মান অগ্রাহ্য করা, বিনা অনুমতিতে আদিবাসীদের অর্থনৈতিক এলাকায় প্রবেশ করা, গোসলের সময় নারীদের ছবি তোলা, নারীকে যৌন হয়রানী করা, বেপোরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটানোর মত ঘটনা প্রতিদিন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এছাড়াও পর্যটনের নামে স্থানীয় অধিবাসীদের বসবাসের জায়গা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এলাকা, পবিত্র স্থান সরকারী বেসরকারীভাবে দখল করা হচ্ছে। এতে এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে। যা পাাহড়ি জাতিগোষ্ঠী ও পারিপার্শিক পরিবেশ ভারসাম্য নষ্ট করে চলেছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারকে এখনই গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন বক্তারা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, পাহাড়ে পর্যটন উন্নয়ন হচ্ছে ঠিক কিন্তু এগুলোর কোন সমন্বয়ন নেই। পর্যটন উন্নয়নে রাঙামাটির চেয়ে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে এগিয়ে গেছে এটি ঠিক। কিন্তু সেখানে স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা নেই। বাইরে থেকে এসে মানুষ পর্যটন ব্যবসা করছে। এতে স্থানীয়দের কোন লাভ হচ্ছে না। রাঙামাটির সৌন্দর্য রক্ষার জন্য প্রশাসনের সমন্বয় দরকার। কিন্তু সে সমন্বয় নেই। এখন পুরো রাঙামাটি শহর একটি ঝুপড়ি শহরে পরিণত হয়েছে। যেদিকে সেদিকে দখল করা হচ্ছে। এতে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে।
সভায় ডব্লিউআরএন তিন পার্বত্য জেলা সমন্বয়ক এড সুস্মিতা চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য আছমা বেগম।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পর্যটন গবেষক তনয় দেওয়ান, ললিত সি চাকমা, কেএমকেএসের নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, সাংবাদিক হিমেল চাকমা, চিংমেপ্রু মারমা, হেডম্যান শান্তি বিজয় চাকমা, উন্নয়ন কর্মী লালসা চাকমাসহ আরো অনেকে।
আলোচনা সভা শুরুর আগে সেমিনারের উপর ধারণাপত্র পাঠ করেন রাঙামাটির নারী নেত্রী এনি চাকমা।