পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, সে সমস্যাগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি- বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক মো. তৌহিদ হোসেন। আজ রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির ১০ম সভা শেষে সাংবাদিকদের দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এ আলোচনাকে ফলপ্রসু বলে জানিয়েছেন চুক্তি স্বাক্ষরকারী দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা। তবে সভায় কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানাতে চাননি কোন পক্ষই।
আজ (শনিবার, ১৯ জুলাই) পূর্ব নির্ধারিত এ সভাটি সকাল দশটা ৩৭ মিনিটে রাঙামাটিতে উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজে শুরু হয়। শেষ হয় বেলা একটা একুশে। পরে সাংবাদিকদের সাথে বৈঠক নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও সন্তু লারমা। এসময় পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পাশে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন- ‘আমরা সব বিষয়ে বিষদ আলোচনা করেছি। একটি বিষয় আমি সবসময় বলি যে-সমস্যা সমাধানেের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে সমস্যা যে আছে সেটাকে স্বীকার করা। আমরা মনে করি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। সে সমস্যাগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। আজকের আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন – ‘আমরা চেষ্টা করেছি ছোট বিষয়গুলো যেগুলো সহজেই সমাধান করা যায়, সেগুলোকে আমরা শেষ করে ফেলি। আর যেগুলো কঠিন বিষয় আছে সেগুলোকে কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটার রাস্তা বরং খোঁজার চেষ্টা করি। এটাই ছিল আজকের আলোচনার মূল বিষয়’।
পার্বত্য চুক্তিতে কী ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করা গেছে- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন- ‘নতুন করে সমস্যা চিহ্নিত করার প্রয়োজন নাই। আমরা জানি কিছু সমস্যা আছে। কারণ না হলে তো অনেক পুরনো এই চুক্তি, বাস্তবায়িত তো হয় নাই। চেষ্টা করছি যেন সবাই মিলে একসাথে এমনভাবে করি যাতে কোন নতুন করে কন্ট্রোভার্সি সৃষ্টি না হয়’।
এ আলোচনাকে ফলপ্রসু বলে জানিয়েছেন চুক্তি স্বাক্ষরকারী দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা। তিনি বলেন-‘আমার তো নিজস্ব কিছু বলার নাই। যা বলার আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন। আলোচনা আন্তরিকতাপূর্ণভাবে হয়েছে। ফলপ্রসূ হয়েছে’।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে- পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের বিষয়ে সন্তু লারমা বলেন-‘আমার মনে হয় আজকে এগুলো বলার কোন অবকাশ নাই’।
গত ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদন হয়। সম্পাদিত চুক্তির (ক) খণ্ডের (৩) অনুচ্ছেদের শর্ত অনুযায়ী চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করার জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি’ গঠিত হয়। ২০২৪ (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত এই কমিটি ৯টি সভা করে।
তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৮টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে- বলে বিভিন্ন সময় দাবি করা হয়েছে। বিপরীতে সন্তু লারমার দল জনসংহতি সমিতি বলে আসছে- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক নয় এবং বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ হচ্ছে। সে কারণে পাহাড়ে শান্তি ফিরছে না। চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পাহাড়ে অশান্তি বিরাজ করছে।
তবে জুলাই বিপ্লবের পর কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের পতনের পরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গেল ১২ জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে আহবায়ক এবং জেএসএস প্রধান সন্তু লারমা ও ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় ও অভ্যন্তরীণ শরনার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন টাস্কফের্সের চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমাকে সদস্য করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি’ গঠন করে। আজ রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত এটিই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সভা।
এছাড়া এ সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম চাকমা, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমা, উপ-সচিব মঙ্গল চন্দ্র পাল ও উপ-সচিব সামছুল হক।