রাঙামাটির রাজস্থলীতে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারই স্কুলের ওয়াস ব্লকের নির্মাণ কাজের রাজমিস্ত্রিকে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককের বিরুদ্ধে, গত ৫ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রাজস্থলী সেনা ক্যাম্প, রাজস্থলী থানা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারে নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সে শিক্ষককে তিন কার্যদিবসের ভিতরে শোকজ করা হয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃক জানা গেছে। তবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে করে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বেড়েছে।
ঘটনাটি রাজস্থলী উপজেলার দুই নং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ছাইংখ্যং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যা । তিনি ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরিচ্যুত।
অভিযোগে জানা গেছে, গত কয়েক দিন আগে উক্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বরাদ্দকৃত ওয়াস ব্লকের কাজের ঠিকাদারের নিকট মুঠোফোনে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দেওয়াতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াসব্লকের কাজ বন্ধ করে দেন এবং কর্মরত শ্রমীকদের কাজের স্থল হতে বের করে দেন। তারই প্রেক্ষিতে ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে এতে ক্ষিপ্ত হন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যা। গত সোমবার বিদ্যালয়ের বন্ধ করে কাজ করতে গেলে প্রধান শিক্ষক রাজমিস্ত্রি কে বেদম প্রহার করে।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঘটনাটি প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। নানা পক্ষ থেকে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থানীয়দের মধ্যে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীর দাবি, শিক্ষক সুরেশের বিরুদ্ধে ছাইংখং বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষকে শাররীক ভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগ ছিল। আগের ঘটনাগুলোরও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় এসব ঘটনা বারবার ধামাচাপা পড়ে গেছে। ফলে অভিযুক্ত শিক্ষক বারবার এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাজুরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বৈঠক করি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে শোকজ করা হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জানানো হয়েছে।’
ভুক্তভোগী ঠিকাদারের রাজ মিস্ত্রি রোহেল মিয়া বলেন, আমি ওয়াস ব্লকের কাজ করতে গেলে প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করে যাহা আমার কাছে সব ভিডিও রেকর্ড আছে। তিনি গত কয়েক দিন আগে মোবাইল ফোনে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন প্রধান শিক্ষক। টাকা দিতে না পারায় তিনি কাজ বন্ধ রাখতে বলে। তিনি বিভিন্ন সময় মানুষের সাথে একাধিকবার এমনটাই করেছে। প্রথমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটি মহল আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে বিষয়টি জানাজানি না হয়। মূলত বারবার এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় সে সাহস পেয়েছে। এলাকাবাসীর দাবী, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি শুনছি এবং বিস্তারিত রাজস্থলী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আমাকে অবগত করেছেন। এ বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। এমন আচরণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবরই কঠোর। স্থানীয়ভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন সংবেদনশীল ঘটনা ধামাচাপা অন্যায়।
অপর দিকে বিষয়টি জানার জন্য ঘটনাস্থলে রাজস্থলী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব চৌধুরী ও যুগ্ন সম্পাদক হাবীবউল্ল্যাহ গেলেও তাদেরকেও এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে চরম অশোভনীয় আচরণ করেন। এতে সাংবাদিক সমাজ মৌখিক ভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহত করেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি এবং এব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি ।