গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ দাবি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি ঢাকা মহানগর শাখা অদ্য ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে সংবাদ সম্মেলন করে, এসময়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর এর পিসিসিপি’র সভাপতি রাসেল মাহমুদ, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিসিসিপি ঢাকা মহানগর এর সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান সহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে যে, সম্প্রতি গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশকৃত প্রতিবেদনে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র, যার মূল লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
গত ৫ই আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে আমরা আশা করেছিলাম দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, দেশের কিছু কুচক্রী মহল এবং সমতলের বাম ঘরানার সুশীল নামধারী ষড়যন্ত্রকারীরা ‘আদিবাসী’ ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে এই শব্দের ব্যবহার, সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায় এবং চূড়ান্তভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার এই ভয়ংকর পরিকল্পনা অত্যন্ত সুসংগঠিত।
২০০৫ সাল থেকে সকল সরকার বাংলাদেশের ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী বলে আখ্যা না দেয়ার জন্য একের পর এক প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনা জারি করছে ও আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ স্বাক্ষর না করলেও বর্তমান সরকারের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ১৯৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১১৩, ১৪৬, ১৪৭,১৪৮ পৃষ্ঠায় আদিবাসী শব্দের ব্যবহার করেছে। কমিশনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ গত শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট জমা দেয়া এ প্রতিবেদনে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার দেখা গিয়েছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
যদিও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় টিভি-২ শাখা ১৯ জুলাই ২০২২ তারিখে প্রচারিত এক প্রজ্ঞাপনে গণমাধ্যমগুলোর প্রতি জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রস্থ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায়/গোষ্ঠীকে উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/নৃ-গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বর্ণিতাবস্থায়, ০৯ আগস্ট ২০২২ তারিখ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত টকশো-তে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো”।
এ ধরনের আরো অনেক সরকারি প্রজ্ঞাপন থাকার পরও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে বিভিন্নস্থানে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগ জনক ।
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষ বাঙালি। বাকি আনুমানিক ০.৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, যাদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন সম্প্রদায় রয়েছে। জাতিগতভাবে আমরা বাঙালি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হলেও, আমাদের সামষ্টিক পরিচয় আমরা সবাই বাংলাদেশি। কিন্তু নিজ জাতি ও বাংলাদেশি পরিচয় বাদ দিয়ে কিছু কুচক্রী মহল বিদেশি এনজিও এবং ভারতীয় স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ,ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান বলেন, আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, ঐতিহাসিক তথ্য এবং নৃতাত্ত্বিক গবেষণা অনুযায়ী, পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা এদেশের ভূমি সন্তান বা আদি বাসিন্দা নয়। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, তারা মূলত পার্শ্ববর্তী বার্মা, ভারত (তিব্বত, ত্রিপুরা, মিজোরাম), মঙ্গোলীয় এবং চীন থেকে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিতাড়িত হয়ে বা অভিবাসী হিসেবে এদেশে বসতি স্থাপন করেছে। অনেক চাকমা ও মারমা পন্ডিত, যেমন- সুগত চাকমা এবং সিঞ্চাই মারমা, তাদের বিভিন্ন লেখায় এই সত্য স্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আদিবাসী স্বীকৃতি নিতে উপজাতি/ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি ও সমতলের বাম ঘরনার সুশীল নামধারী কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীরা এত মরিয়া হয়ে ওঠার কারণ কি?
আবারও বলছি এর কারণ হলো, পূর্ব তিমুর, দক্ষিন সুদান ও জিবুতির ন্যায় আদিবাসী স্বীকৃতির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা রাষ্ট্র করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ।
আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশকৃত প্রতিবেদনে আদিবাসী শব্দের ব্যবহার প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।