দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া থানার সীমান্তবর্তী এলাকায় গুদামে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মালিকসহ ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ বৈলতলী সীমান্তবর্তী সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ দ্বীপ চরতী শফির চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বৈলতলী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কবির আহমদের ছেলে মাহবুবুর রহমান (৪৫) ওই গুদামের মালিক বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, মাহবুব দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। পর্যায়ক্রমে বৈলতলী ইউনুস মার্কেট, বুড়ির দোকানের পর এবার চন্দনাইশ থানার সীমান্তবর্তী এলাকায় গিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তিনি।
চরতী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন জানান, বুধবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়ে কাছে গিয়ে দেখি গ্যাস সিলিন্ডার গুদামে দাউ দাউ করে আগুন জলছে। স্থানীয়দের কাছে শুনেছি গুদামের শ্রমিকেরা সকালে চা তৈরির জন্য চুলা জালালে সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে এই অগ্নিকান্ড ঘটে।
চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আহতদের প্রথমে দোহাজারী হাসপাতালে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহতরা হলেন গুদাম মালিক মাহবুবুর রহমান (৪৫) পিতা: কবির আহম্মদ, দোকানের শ্রমিক সৌরভ রহমান (২৫) পিতা: সাদেক, কফিল উদ্দিন (২২) পিতা: মনজুর আলম, রিয়াজ (১৭) পিতা: আব্দুর রহিম, ইউনুস (২৬) পিতা: ইউসুফ, আকিব (১৭) পিতা: আমীর আলী, হারুন রশিদ (২৯) পিতা: নুরুল ইসলাম, ইদ্রিস (৩০) পিতা: নাসিম, মোহাম্মদ লিটন (২৮) পিতা: আমীর আলী, ছালেহ আহমদ (৩৩) পিতা: আব্দুল জলিল।
চরতী ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, গত ৪ মাস আগে চরতী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় ওই গুদামটি স্থাপন করে বৈলতলী ইউনিয়নের এক ব্যক্তি। স্থানীয়দের কাছে শুনেছি সকালে শ্রমিকেরা চা তৈরির জন্য চুলা জালালে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিকেজ হয়ে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়।
চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে দুইটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। টিম পৌঁছার আগেই আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি গ্যাস লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।
সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে আমাদের টিম রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি গুদামে সিলিন্ডার ক্রস ফিলিং চলাকালে আশেপাশে কেউ হয়তো ধুমপান করছিলো যা কর্মরত শ্রমিকরা আগে থেকে বুঝতে পারেনি। সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। বিস্তারিত তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে প্রত্যেকেরই ৭০% এর অধিক বার্ণ হয়েছে। সামনে থেকে পুড়ে যাওয়ার কারনে তাদের মুখ ও শ্বাসনালীতে আঘাত হয়েছে। প্রত্যেকের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদেরকে ঢাকার স্পেশালাইজড বার্ণ ইউনিটে প্রেরণের জন্য মতামত দিয়েছেন চমেক বার্ণ ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুদ্দিন খালেদ। চমেক হাসপাতালের পরিচালককে সাথে নিয়ে বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকি করছি।