পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সরকারের একপেশী সিদ্ধান্তের প্রভাবে পাহাড়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পাহাড়িদের মনে সন্দেহের বীজ দানা বাঁধে। তৎকালীন সংসদ সদস্য মুজিব সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে বিশেষ যেসব অধিকার সংযুক্তির দাবি তুলেছিলেন; সেসব দাবি মানা হলে পাহাড়িদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হতো না। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশের সংবিধানেও পাহাড়ি জাতিস্বত্তার কোন অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়নি। ফলে মুজিব সরকারের পতনের পর সামরিক সরকারগুলোও ধারাবাহিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বগ্রাসী সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি রাজনৈতিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে পাহাড়িদের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলেছে। ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’র পরও সেই ধারাই অব্যাহত আছে। তাই পাহাড়িদের অধিকার আদায়ে এম এন লারমা’র পথ ধরে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
আজ সোমবার সকালে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির প্রত্যন্ত খুলারামপাড়ায় রাধামন ধনপুদি ক্রীড়া মাঠে এমএন লারমা ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতির শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘এম এন লারমা স্মরণ সভা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক- পাহাড়ি নেতা সুভাষ কান্তি চাকমা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশাল এই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিমল কান্তি চাকমা বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির অধিকার আদায়ের পথকে সুগম করতে যে আন্দোলন করছিল সে ধারাকে ভেঙ্গে দিতে দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রে ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর তাঁকে সহযোগীসহ খুন করা হয়। যার মধ্য দিয়ে জুম্ম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের পথ বিঘ্নিত হয় বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।

সমাবেশের আগে ধনপতি বাজার এলাকা থেকে কয়েক হাজার নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে একটি মৌন পদযাত্রা এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে রাধামন-ধনপুদি স্পোর্টিং ক্লাব-এর সামনে স্থাপিত এম এন লারমা’র প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ প্রদান করেন জনসংহতি সমিতি, যুব সমিতি, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, মহিলা সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
পিসিজেএসএস’র মহালছড়ি উপজেলা কমিটির সভাপতি নীলবরণ চাকমা’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস- এম এন লারমা)-এর কেন্দ্রীয় সা: সম্পাদক অংশুমান চাকমা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা, নারীনেত্রী কাকলী খীসা, গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি অমর চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সা: সম্পাদক প্রীতি খীসা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভানেত্রী মল্লিকা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সা: সম্পাদক নিশান চাকমা এবং শিক্ষক নেতা শান্তি জীবন চাকমা।
একইভাবে সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মহাজনপাড়া সূর্যশিখা ক্লাব থেকে এম এন লারমা’র স্মরণে একটি শোক র্যালি বের হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র স্মৃতি ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এরপর খাগড়াছড়ি সদরস্থ তেঁতুলতলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কার্যালয়ে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
পিসিজেএসএস এর খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি সুনীল চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা।
এতে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা উদয় কিরণ ত্রিপুরা, র্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস এমএন লারমা)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রীতিময় চাকমা (যুগল), জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারন সম্পাদক সন্তুোষিত চাকমা বকুল, প্রবীন সমাজসেবী রবি শংকর তালুকদার, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিভাস চাকমা, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক সমর্থিত পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপন চাকমাখাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যয় চাকমা জুপি,খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ্যময় চাকমা, কেন্দ্রীয় যুব সমিতির সভাপতি জ্ঞান চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা ঝিমিট এবং জেএসএস হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক মায়া চৌধুরী।
উল্লেখ্য – এমএন লারমা অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে নিজের প্রতিষ্ঠিত দলের বিপৎগামীদের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।


















