রাঙামাটি জেলা সদরের সাথে ৫ উপজেলা সদরের সাথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলাগুলোতে লঞ্চ যেতে পারছে না। উপজেলাগুলো হল ,বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি।
এ উপজেলায় বর্তমানে ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে যাতায়াত করছে মানুষ। কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গিয়ে নৌ পথের বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
যাতায়াতকারীরা বলছেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর বেশী খারাপ অবস্থা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত না হলে যাতায়াতের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।
জুরাছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৌশিক চাকমা বলেন, জুরাছড়ির যাতায়াত ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। যাত্রীরা খুব কষ্ট পাচ্ছে। কিছুদুর যেতেই নৌকা থেকে নেমে নৌকা ঠেলতে হচ্ছে। একদিকে কাদা অন্যদিকে মালামাল কাধে করে নিতে হচ্ছে। রোগী পরিবহনকারী বোটগুলোর বেশ করুণ অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। দুর্ভোগের শেষ সীমানা তা অতিক্রম করেছে।
বরকল উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শ্যাম রতন চাকমা বলছেন বরকলে যাওয়ার পথে এখন বোটগুলো বিভিন্নস্থনে চরে আটকে যাচ্ছে। সবচেযে বেশি কষ্ট পাচ্ছে ভুষণছড়া, বড় হরিণা, আইমাছড়া ইউনিয়নের মানুষ। কর্নফুলী নদী দিয়ে ছোট নৌকা চলতে পারলেও এর শাখা ছড়া, বিল শুকিয়ে যাওয়ায় নৌ পথ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন মাইলের পর মাইল হেটে যেতে হচ্ছে মানুষজনকে।
বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি দীলিপ কুমার দাশ বলেন, বড় ধরণের বৃষ্টিপাত না হলে আমরা আগামী কয়েক মাস লঞ্চে রাঙামাটিতে যাতায়াত করতে পারব না। আমাদের সড়ক ও নৌ পথ দুটোই দীর্ঘ। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬ মাস কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যায় তাই লঞ্চ চলাচলে বাধা গ্রস্থ হলে লঞ্চ যাত্রীরা জেলা শহর খাগড়াছড়ি হয়ে রাঙামাটি জেলা সদরের যেতে হয়। কিন্তু বাস সার্ভিস ভাল না হওয়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। এখন নৌ পথ সড়ক পথ দুটোতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাঘাইছড়িবাসীর।
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি মোঃ মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, প্রায় ৫ উপজেলার সাথে জেলা সদরের সাথে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে গত মার্চের প্রথম দিকে। লঞ্চগুলো বিভিন্নস্থানে চরে আটকে যাচ্ছে। তাই ছোট ছোট বোট দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে এদুর্ভোগ আরো বাড়বে। বিগত সময়ে এসব বিষয়ে নদী রক্ষা জাতীয় কমিটি ও নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে অনেক বার চিঠি লিখেছি।জেলা প্রশাসকরা অনেক বার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তার পরেও কাপ্তাই হ্রদ ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হচ্ছে না। বর্তমানে আমাদের লঞ্চগুলো বসে আছে। বেকার হয়ে পড়েছে লঞ্চ ষ্টাফরা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন,কাপ্তাই হ্রদ খনন ব্যাপারে উধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন সুখবর নেই। তাই এখন প্রকৃতির উপর তাকিয়ে ছাড়া আমাদের পথ খোলা নেই। কাপ্তাই হ্রদের নৌ পথ ড্রেজিং করার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব রয়েছে। আর নানিয়ারচর হয়ে লংগদু হয়ে বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ ব্যাপারে সরকারের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। এটি সমাপ্ত হতে আরো কিছু সময় লাগবে।
প্রসঙ্গত ১৯৬০ সালে কাপ্তাই এলাকায় কর্নফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদ। ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনে এ হ্রদ হয়ে উঠে এশিয়া মহাদেশের সর্ব বৃহৎ মানুষ সৃষ্ট হ্রদ।কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রতি বছর কোটি টাকার মাছ আহরণ করে জেলেরা। এ মাছ থেকে রাজস্ব আদায় করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন।