খাগড়াছড়ি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ভাল ছিল না। একদিকে খানাখন্দ সড়ক, অন্যদিকে ঝুকিপুর্ণ সেতু। প্রায় সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ত যানবাহন। হত জানমালের ক্ষতি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কের বেইলী সেতু সরিয়ে নির্মাণ করা হয় গার্ডার সেতু। জেলায় ৪২টি স্থায়ী সেতু নির্মাণের ফলে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়। বদলে গেছে জেলার যোগাোগ ব্যবস্থার চিত্র।
সোমবার (৭ নভেম্বর) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি একযোগে এ সেতুগুলোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির মানুষ আনন্দে মেতে উঠে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রূপ নেয় উৎসবে।
খাগড়াছড়ি সরকারি হাইস্কুল মাঠে বিশালাকার এলইডি স্ক্রিন বসিয়ে তা দেখার সুযোগ করে দেয় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। এতে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ।
এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে বের করা হয় আনন্দ র্যালী। ছিল বর্ণ্যাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেয় খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি কর্মীরা। নৃত্য শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর ময়ুর নৃত্য দেখে প্রধানমন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেতু’র উদ্বোধননী অনুষ্ঠানে (গণভবনে) সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি করেছি। আমাদের দেশ ডিজিটাল হয়েছে। দেশের পার্বত্য অঞ্চল বিশেষ করে চট্টগ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকমতো পাওয়া যেত না, সেখানে আমরা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা করেছি। এ জন্য বিভিন্ন জেলা যুক্ত করে আজ একসঙ্গে ১০০ সেতুর উদ্বোধন করতে পারছি। তিনি শত সেতুর নাম একে এক বলার পর খাগড়াছড়ি অংশে এসে খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন সময়ে তাঁর সফর এলাকার সাথে সেতু এলাকা মিলে যাওয়ায় স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ করেন।
একজন জুমচাষী অঞ্জলি ত্রিপুরা’র অভিব্যক্তি শেষে প্রধানমন্ত্রী খাগড়াছড়িতে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পর মাঠজুড়ে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
এতে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, সংরক্ষিত মহিলা এমপি বাসন্তি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার নাইমুল হক পিপিএম, খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার (জিটুআই) মেজর মোঃ জাহিদ হাসান, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাসহ জেলার গুরুত্বপুর্ণ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তারা।
সড়ক বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ‘খাগড়াছড়ির জেলার বিভিন্ন সড়কে পিসি গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প”র আওতায় প্রায় ২শ ৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকায় ৪২টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে দীর্ঘ সেতুটি হচ্ছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-বাবুছড়া-লোগাং-পানছড়ি সড়কের লোগাং সেতু। ১৪৩ দশমিক ০৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। এরপরের দীর্ঘতম মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি সড়কে ১০০মিটার ধুরুং খাল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।