গৃহদাহে পুড়ছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় কোন্দলের কারণে দলে বাড়ছে বিভক্তি। অনেকটাই স্থবির হয়ে আছে সাংগঠনিক কার্যক্রমও। দীর্ঘদিনের আভ্যন্তরীণ বিরোধে কিছুটা রাখঢাক থাকলেও গত দশ মাসে ছড়িয়ে পড়েছে প্রকাশ্যে। একই নৌকার যাত্রি হলেও ‘মাঝিহীন’ মাল্লাদের হাতে পড়ে ঘুর্ণনে আটকে গন্তব্য হারাতে চলেছে দলটি।
পারস্পারিক আস্থাহীনতা আর অবিশ্বাসে দলে এখন দেখা দিয়েছে প্রকট সংকট আর অস্বস্তি। এ সংকট ও বিভক্তির জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু পরস্পরকে দুষছেন। তবে চলমান এ সংকট নিরসন করা না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শংকায় আছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থিতা করা, বিদ্রোহী প্রার্থি দাঁড় করিয়ে প্রকাশে ঘোষণা দিয়ে তার পক্ষে অবস্থান নেয়া, এর জেরে পদ ও দল থেকে বহিস্কার, দলীয় নেতাদের হাতে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হামলা মামলা সহ নানামুখি হয়রানীর কারণে আভ্যন্তরীণ বিবাদ এখন তুঙ্গে।
সর্বশেষ গত সোমবার (৭ নভেম্বর) লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার নিজ দলের মাইনীমূখ ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেনকে ভরদুপুরে প্রকাশ্যে জুতা দিয়ে পেটানোয় পুরনো বিরোধকে নতুন করে উস্কে দিয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পৃথকভাবে। অভিযোগ দিয়েছেন থানায়। বেড়েছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকে বিভক্ত দুই শিবিরে উত্তেজনা।
এই উত্তেজনার মাঝেই গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে রাঙামাটি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন বারেক সরকারপন্থী আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের দাবি, বিভক্তির সুযোগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করা লোকজন তারেক জিয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। এটি এখনই নিরসন করা না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এজন্য জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
একইসাথে দলীয় শৃঙ্খলা ভংগের দায়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বারেক সরকার ও জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুর রহিম সহ আট নেতার অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এদের বহিস্কার করে জেলা আওয়ামী লীগ। দলের বর্তমান সংকট নিয়ে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কামাল লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জমশেদ আলী, নজরুল ইসলাম সেন্টু, নাছিমুল গণিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সংকট ও বিভক্তির শুরু হয় গেল জানুয়ারিতে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি লংগদু উপজেলায় সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় ও বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করানো ও তার পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং দল ও দলীয় নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেন উপজেলা আ.লীগের ৮ নেতা। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃংঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের দলের পদ-পদবী হতে অব্যাহতি দেয়া হয় গত ৩১ জানুয়ারি।
এদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বারেক সরকার, তার ছেলে বিদ্রোহী প্রাথি মাইনীমুখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মো. এরশাদ, উপজেলা সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য আবদুর রহিম, সহ-সভাপতি কুলিন মিত্র চাকমা আদু, চার বিদ্রোহী প্রার্থি গুলশাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রকিব, বগাচত্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. বোরহান উদ্দিন, ভাসান্না আদম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হযরত আলী ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন কমল।
আব্দুল বারেক সরকার বলেন, ‘দলের বিভক্তির পেছনে নেপথ্যে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু রয়েছেন’। আর যাচাই বাছাই ছাড়াই বিএনপি জামায়াত থেকে আসা লোকদের দলে যোগদানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে’।
লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, বাবুল দাশ বাবু বলেন, ‘ বিএনপি জামায়াত থেকে আসা লোকজনকে বারেক সরকারই দলে যোগদান করিয়েছেন। সংকট বিভক্তির দায়ভার তার। তাদের স্থায়ী বহিস্কারের জন্য জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি’।