বিগত বছরের সমস্ত দুঃখ,গ্লানি মুছে দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পাহাড়ে পাহাড়ীয়া ও বাঙ্গালিরা আনন্দে মেতেছে বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু ও বাংলা নববর্ষের উৎসবে।
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসব। যা ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত।
বাংলা বর্ষের শেষ দিনে চাকমারা ‘ফুল বিজু, ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরা ‘হাঁরিবৈসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ে ‘সূচিকাজ’ নামে পালন করে যা ‘ফুল বৈসু/ফুল বিজু নামে সর্বাধিক পরিচিত।
চেঙ্গী নদীতে হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে মুখরিত ছিল।এ ফুল বিজুর দিনের চেঙ্গী পাড়ে ত্রিপুরা,চাকমা, মারমা ও বাঙ্গালি সম্প্রদায়ের নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে ফুল দিয়ে গঙ্গাদেবীকে প্রণাম জানাতে আসেন।
এ সময় খাগড়াছড়ি জেলা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী,জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান,জেলা পুলিশ সুপার মো.নাইমুল হক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী,জেলা পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া নদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানা। এর মধ্য শুরু হয়েছে বৈসাবি’র আয়োজন। জলে ফুল দেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে এই উৎসব পাহাড়ে ১৫ এপ্রিল মারমা সম্প্রদায়ের ‘জলকেলি’র উৎসব হবে।
বুধবার(১২ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে জলে নানান রঙের ফুল দিয়ে প্রণাম উদযাপিত হয় ফুল বিজু।
এ সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে উপস্থিত পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা,তার পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায় তথা বাঙ্গালি সম্প্রদায়েরাও এই উৎসবে মাতোয়ারা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে ব্যস্ত এখন শহর, নগর আর পাহাড়ি গ্রাম গুলো। বাংলা বর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে ত্রিপুরারা বৈসুক/বৈসু, চাকমারা বিজু, মারমারা সংগ্রাই,সাওতালরা পাতা এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে পালন করে এই উৎসব। উৎসবের প্রথম দিনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা ফুল আর নিমপাতা দিয়ে ঘর সাজায়। আগামীকাল বুধবার ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরা গঙ্গাদেবীকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে। এদিন পাহাড়িদের ঘরে ঘরে চলবে পাঁচন/মুই পাঞ্চালির আতিথেয়তা।
এ দিন ফুল বিজুর দিনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা বয়সী পাহাড়িরা ফুল নিয়ে আসতে শুরু করে বিভিন্ন ঘাটে। খুব ভোরে মা গঙ্গার উদ্দেশে নদীতে পবিত্র এই ফুল দিয়ে প্রণাম জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই উৎসব। উৎসবে নারীরা বাহারি রঙের ঐতিহ্যবাহী রিনাই -রিসা, পিনোন -হাদি পরে আর ছেলেরা ধুতি, পাঞ্জাবি/ফতুয়া পরে চেঙ্গী নদীতে ফুল দিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে। পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের সব গ্লানি মুছে গিয়ে নতুন বছর বয়ে আনবে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
তবে করোনার গত দুই বছরের বিষাদ ও বেদনা ভুলে আবারো প্রিয় বৈসাবি উদযাপন করতে পেরে খুশি সকলেই।
ফুলবিঝু নানান আয়োজনে উপস্থিত বিশিষ্টজনরাও জানালেন নিজেদের উচ্ছাস,আকাঙ্ক্ষার ও প্রত্যাশার কথা।
পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাই যেন ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালায় পাহাড়ের মানুষ।
পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানায় ফুল দিতে আসা পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।
জেলা শহরের খবং পড়িয়াস্থ চেঙ্গী নদীতে ফুল দেয়ার সময় চাকমা সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধি জানান, এটি পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব।
পুরাতন বছরের সকল দুঃখ,গ্লানিকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরে জগতের সবাই যেন সুখে, শান্তিতে এবং আনন্দের সাথে কাটাতে পারি সেই প্রার্থনা করা হয় মা গঙ্গা দেবীর কাছে। সুন্দর পৃথিবী যেন ভালো হয়ে ওঠে এমনাটাই প্রত্যাশা।
চৈত্র মাসের শেষ দিনকে চাকমা সম্প্রদায়েরা বলি মূল বিজু। এর আগের দিনকে ফুল বিজু, আর পহেলা বৈশাখ পরিচিত গোজ্যেপোজ্যে/গজ্জ্যা পুজ্জ্যা দিন হিসেবে। এ দিন কেউ কোনো কাজ করে না, পাড়ায় ঘুরে ঘুরে,খেয়ে দিনটি পার করে থাকে।
বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিন বৈসু পালন করা হয়। চাকমা সম্প্রদায়ে বিঝু আদিকাল থেকেই চলে আসছে। বিঝুমানে আনন্দ, হইহুল্লোড়, বিঝু মানে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো। বিঝু মানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করা, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা, সর্বোপরি বিজু মানে হলো মিলনমেলা।ঠিক তেমনি বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিন বৈসু পালন করা হয়। ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ে বৈসু-সাংগ্রাই আদিমকাল থেকেই চলে আসছে।
বৈসু -সাঙগররাই মানে আনন্দ, হইহুল্লোড়, বৈসু-সাংগ্রাই মানে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো। বৈসু-সাঙগ্রাই মানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করা, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা, সর্বোপরি বৈসু-সাংগ্রাই মানে হলো মিলনমেলা।