জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ-বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন’এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাঙামাটিতে র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৯টায় রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির আয়োজনে দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ প্রাঙ্গণ হতে একটি র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আদালত প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে আলাচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বেলুন ও শান্তির পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
প্রধান অতিথি বলেন,সরকার রাঙামাটি জেলার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারী কলেজ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এছাড়াও পিছিয়ে পড়া পার্বত্যাঞ্চলকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে শিক্ষা খ্যাতে ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত সে জাতি ততই উন্নত। তিনি আরো বলেন,সরকার বিনা মূল্যে আইনী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তাই রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড এ কর্মরত কর্মকর্তা এবং বিচারকগণ সরকারী ভাবে গরিব অসহায় লোকদের আইনী সহয়তা দিয়ে যাচ্ছে। আমার জানামতে, লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে অনেকে সুবিচার পেয়েছেন।
রাঙামাটি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ সহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং জেলা লিগ্যাল এইড এর সিনিয়র সহকারী জজ মোঃ জুনাইদের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে খ্যাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিনিয়ির জেলা ও দায়রা জজ সহিদুল ইসলাম লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে বলেন, সরকার বিনামূল্যে অসহায় দরিদ্র মানুষের আইনী সেবা পাওয়ার অধিকার লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে ব্যবস্থা করেছেন। দেশের সাধারণ অসহায় মানুষ যেন বিনা খরচে আইনী সহায়তা পায় সেই লক্ষ্যে সরকার উন্নত বিশ্বের মত আমাদের দেশে লিগ্যাল এইড সংস্থার বা আইনী সহায়তা সংস্থার কার্যক্রম চালু করেছেন। আমরা সকলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রম আরো বেগবান করার মাধ্যমে জেলার অসহায় দরিদ্র সাধারণ মানুষ যেন আইনী সকল সুবিধা পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করব।
তিনি আরো জানান, লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে রাঙামাটিতে আপোষে বিরোধ মীমাংসার জন্য আবেদন পড়েছে ১৩৭৮টি, নিষ্পত্তি ১৩১৬টি, নিষ্পত্তির হার-৯৫.৫০%, সরাসরি উপকারভোগী- ১৯৭৪ জন, আপোষে বিরোধ মীমাংসার মাধ্যমে আদায় – ১.৩৯.৩১.২৯৪ টাকা, বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান – ১২৮৯ জন, আপোষে বিরোধ মীমাংসার ফলে আদালতে বিচারাধীন মামলা কমেছে -৮৭, প্যানেল আইনজীবীদের বিল পরিশোধ ২,৩৫,৯০০ টাকা। তিনি রাঙামাটিতে লিগ্যাল এইডের কার্যক্রমকে বেগবান করতে প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়া আর্থিকভাবে সচ্ছল আইনজীবীদেরকে অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে আইনগত সেবা প্রদানেরও তিনি অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এইএম ইসমাইল হোসেন, বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু হানিফ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, রাঙামাটি সিনিয়ির জেলা ও দায়রা জজ সহিদুল ইসলাম ,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন, রাঙামাটি সদর উপজলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান, রাঙামাটি পৌর সভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা আইনজীবি সমিতিরি সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার মুন্নাসহ আদালতের সকল পর্যায়ের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ,কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিজ্ঞ প্যানেল আইনজীবী, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ, জেলা কারাগার, তথ্য অফিস, লিগ্যাল এইড এর উপকারভোগী এবং বিভিন্ন এনজিও সমূহের সদস্যবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে লিগ্যাল এইড এর সেরা প্যানেল আইনজীবী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় এডভোকেট শফিউল আলম মিয়ার হাতে ক্রেষ্ট তুলে দেন সিনিয়র জেলা দায়রা ও জজ সহিদুল ইসলাম।