শনিবার , ৬ মে ২০২৩ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মং রাজ বাড়ি সংস্কারে জেলা পরিষদের উদ্যোগ

প্রতিবেদক
বিশেষ প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি
মে ৬, ২০২৩ ৮:৩৪ অপরাহ্ণ

 

রাজার সিংহাসন, মূল্যবান অস্ত্রশস্ত্রসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিবিজড়িত খাগড়াছড়ির মানিকছড়িস্থ ঐতিহ্যবাহী মং রাজবাড়ি। স্বাধীনতা যুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন মং রাজা মংপ্রু সাইন। গেইট দিয়ে ঢুকে একটু সামনে গেলেই মং রাজার লোগো লাগানো একতলা বিশিষ্ট উচু একটি দালান ঘর চোখে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে সেটি ধুলোবালু আর সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগি ছিল।

কিন্তু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে বর্তমানে সেটি ফিরে পেয়েছে নতুন রুপ। চলছে চিত্রশিল্পীদের হাতের কারুকাজ। মূলত এটি চতুর্থ মং রাজা কুমার নিপ্রুচাঁইন বাহাদুরকে উৎসর্গ করে ১৩০২ মারমাব্দে স্থাপন করেছিলেন তার মেয়ে নানুমা দেবী। রাজ্য অভিষেক, খাজনা আদায়, হেডম্যান-কার্বারিদের নিয়ে আলোচনাসহ নানা আচার অনুষ্ঠান হতো এই হল বা কাছারী ঘরে। খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান এটি। মারমাব্দ অনুযায়ী যার বয়স প্রায় ৮৩ বছর।

রাজবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ মং রাজা নিপ্রুচাঁইনের কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তাঁর একমাত্র কন্যা নানুমা দেবীকে সহকারী মং চিফ হিসেবে নিয়োগ দেয় ব্রিটিশ প্রশাসন। তার নামেই কাছারী ঘরটি রাজবাড়ি চত্বরে বর্তমান। যদিও কিছুদিন পূর্বেও ভবনটির ভগ্নদশা ছিল।

কিন্তু বর্তমানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে সংস্কারের ফলে পুরোনো নান্দনিক রুপ ফিরে পেয়েছে কাছারি ঘরটি। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে চারপাশে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা প্রায় ২০টি এঞ্জেল, ১৭টি বুদ্ধ মুর্তি, আসন, সিলিং বোর্ড, ৭টি চক্র, দৃষ্টিনন্দন ময়ূর অংকিত ১৬ টি পেইন্টিংসহ সিলিংয়ের সৌন্দর্যের জন্য একাধিক পার্ট ও ঘরের দুপাশে দুটি বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। যা কিনা পুরোনো সেই নানুমা দেবীর সময়কালে নির্মিত কারুকাজের আদলে নতুন করে রং তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন ‘মানিকছড়ি আর্ট এন্ড কালচার ইনস্টিটিউট’র শিক্ষক মাক্রাইওয়াং (ডিমপল)।

মানিকছড়ি আর্ট এন্ড কালচার ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক মাক্রাইওয়ং (ডিমপল) বলেন, প্রায় ৮৩ বছর পূর্বের করা আর্টের আদলে নতুন রুপে ফুটিয়ে তুলতে প্রায় একমাস সময় লেগেছে। পুরো কাছারি ঘরে প্রায় ৭০টি পেইন্টিংয়ের কাজ ছিল। আর পেইন্টিংয়ের সকল সরঞ্জামাদি চট্টগ্রাম শহর থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছে। তবে কালার মিক্সড করতে অনেক সময় তাকে ভাবতে হয়েছে। কেননা পুরোনো কালারটা নতুন করে পুরোনো রুপে ফুটিয়ে তুলতে অনেক মেধা ও শ্রম দিতে হয়েছে। দিনরাত পরিশ্রমের ফলে মাসখানেকের মধ্যে পুরো কাছির ঘরটির কারুকাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি। নিজের হাতে প্রায় শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যকে নতুন রুপে ফুটিয়ে তুলতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত। আর এ কাজের জন্য তাকে সাপোর্ট করেছে ‘মানিকছড়ি আর্ট এন্ড কালচার ইনস্টিটিউট’র শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা।

নানুমা দেবীর পৌত্র (পুতি) মেঝ কুমার সুইচিংপ্রু বলেন, প্রায় শত বছরের পুরোনো নানুমা দেবী হলটিসহ রাজ প্রাসাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুলো সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রুপে পুরোনো কারুকাজের আদলে সাজিয়ে তোলা হয়ে। তবে রাজ প্রাসাদের কিছু কাজ বাকি রয়েছে, সেগুলোর কাজও চলছে। এসকল স্থাপনা গুলো রাজ পরিবারের হলেও এর ঐতিহ্য বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে এখন থেকে অনুমতি সাপেক্ষে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে নানুমা দেবী হল ও রাজ প্রাসাদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সমূহ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীরা অনুমতি সাপেক্ষে রাজবাড়ির এসব স্থাপনা গুলো দেখতে পারবে। যার ফলে তারা জানতে পারবে শত বছরের পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে।

ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি নতুন রুপে ফিরিয়ে দিতে কাজের তদারকি করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এম.এ জব্বার। তিনি জানান, রাজবাড়ির সকল স্থাপনা গুলোই স্মৃতিবিজড়িত। এ গুলো কালের স্বাক্ষী হিসেবে এখনও মানুষের কাছে দৃশ্যমান। বিশেষ করে কাছির/হল ঘরটি সংস্কারের অভাবে ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছিল। তাই এর ঐতিহ্য ধরে রাখতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার ফলে প্রায় শত বছরের পুরোনো দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ গুলোকে নতুন প্রজন্ম ও দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরতে করছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সা. সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বেশিরভাগ শরণার্থী মানিকছড়ি-রামগড় হয়েই দেশত্যাগ করেছিলেন। একই সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারাও এই পথেই ভারত গিয়েছিলেন। জাতির সেই কঠিন সময়ে মংরা মংপ্রু সেইন জীবন ও সম্পদের মায়া ত্যাগ করে রাজ বাড়ির সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, অস্ত্রশস্ত্র, পরিবহন, গবাদিপশু, হাতি, ঘোড়া সব উজাড় করে দিয়েছিলেন। তার প্রতিশোধ হিশেবে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসররা রাজবাড়ি আক্রমণ করে সব ধ্বংস করে দিয়েছিলো।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র নির্দেশনায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুরো রাজবাড়ি কমপ্লেক্স সংস্কারের মাধ্যমে পুরোনো রুপে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে।

জেলা পরিষদের প্রকৌশল শাখার আশাবাদ, এরিমধ্যে নানুমা দেবী হলের কাজ শেষ। তাছাড়া রাজ ভবনের সংস্কার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। পুরো কাজ শেষ হলে ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি ফিরে পাবে তার পুরোনো সৌন্দর্য। সেই সাথে স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীরাও দেখতে আগ্রহী হবে।

 

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

আপনার জন্য নির্বাচিত
%d bloggers like this: