পর্যটন শহর রাঙামাটি। দেশের একমাত্র রিকশা বিহীন শহরও রাঙামাটি। বিকল্প গণপরিবহন না থাকায় একক রাজত্ব চলে সিএনজি অটোরিকশার। চালকদের ট্রাফিক আইন না মেনে বপরোয়া গতিতে চালনা আর যত্রতত্র পার্কিংয়ে অতীষ্ট শহরবাসী। সেই সাথে শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপা দীর্ঘদিন একক নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সিএনজি চালকরা। ফলে লক্ষাধিক বাসিন্দার এই শহরে প্রতিনিয়ত লেগে থাকে যানজট। আর ফুটপাত দখল করে স্থায়ী দোকানগুলোর সড়ক দখল ও ভাসমান দোকানপাটের কারণে হাটাচলাতেও আছে ভোগান্তি। এক বনরূপা-ই যেন ম্লান করে দিয়েছে রাঙামাটির সৌন্দর্য। শহর নিয়ে পর্যটকদের মনেও বিরূপ ধারণা তৈরি করছে এমন পরিস্থিতি।
জেলা প্রশাসনের মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভা সহ বিভিন্ন সভা সেমিনার ও রাজনৈতিক ফোরামেও শহরবাসীর এই ভোগান্তির কথা আলোচিত হচ্ছে বারবার। আর এর প্রতিকার খুঁজতেই যাচ্ছে বছরের পর বছর। তবে রাঙামাটি পুলিশ সুপারের এক সিদ্ধান্তেই এই যানজট আর বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন শহরবাসী।
রাঙামাটি শহরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ফুটপাত ও সড়ক দখলকারীদের অবৈধ দোকানপাট ও পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে জেলা পুলিশ। রাঙামাটি শহরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র বনরূপা, ফরেস্ট রোড ও হ্যাপিরমোড় এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে শতাধিক ভ্রাম্যমান দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া ফুটপাত দখল করে মোটরসাইকেল পাকিং ও মূল দোকানের বাইরে সড়ক পর্যন্ত যেসব মালামাল রাখা হয় তা তুলে দেয়া হয়েছে।
বুধবার (৫জুলাই) সকাল এগারোটায় শুরু হয়ে দেড় ঘন্টাব্যাপী চলা এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ ইমরান ও কোতয়ালী থানার ওসি আরিফুল আমীন।
এরআগে মঙ্গলবার(৪ জুলাই) সকালে বনরূপায় অনুষ্ঠিত বিট পুলিশিং সভায় বক্তারা রাঙামাটি শহরের শৃঙ্খলা রক্ষা ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য ফুটপাত দখল ও অবৈধ সিএনজির যানজট মুক্ত করার দাবি জানান। এই দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে ২৪ ঘন্টার সময় বেধে দেন দখলকারীদের। এবং বুধবার সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো ঘোষণা দেন। এরপরই এই অভিযানে নামে পুলিশ।
এই অভিযানকে চলমান দাবি করে পুলিশ বলছে এটি অব্যাহত থাকবে। আজকে শুধুমাত্র উচ্ছেদ করেছি। হ্যান্ডমাইকে সচেতন করেছি। এরপরও কেউ ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট বসালে দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযানের পর সড়কের দু’পাশের ফুটপাত ফাঁকা হয়ে পড়ে। যত্রতত্র সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল পার্কিং আপাতত বন্ধ হয়েছে। এতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারায় জনসাধারণের মাঝে স্বস্তি এসেছে। শহরের বাসিন্দা এম কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা পুলিশের এমন উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাই। শহরবাসী এখন স্বস্তিতে চলাচল করতে পারছে। তবে আবারও যাতে ফুটপাত দখল হয়ে না যায় সেদিকে পুলিশের দৃষ্টি রাখতে হবে।
কোতয়ালী থানার ওসি আরিফুল আমীন বলেন, কিছুদিন আগে ফরেস্ট রোডে ভাসমান দোকানপাটের সামনেই একটি মার্ডার হয়েছিল। এরপরই আমরা ভাসমান টং দোকানগুলো আমরা উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু ঈদের ছুটিতে আবারও তারা সড়ক দখল করে টং দোকানপাট বসিয়েছে। গতকাল দেয়া পুলিশ সুপারের ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম শেষ হওয়ায় আজ এই অভিযান চালানো হলো।
শহরের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ফুটপাত ও সড়ক দখলকারীদের অবৈধ দোকানপাট ও পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে এ উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ ইমরান।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিট পুলিশিং সভায় পুলিশ সুপার ও মেয়রসহ সকলের মতামতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপায় বিশৃংখলা, যানজট ও ফুটপাত দখলসহ অস্থির অবস্থা লেগে আছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য ও রাঙামাটি জেলাকে পর্যটক বান্ধব সুশৃঙ্খল নগরীতে পরিরণত করতেই জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও মেয়র মিলেই আমরা এই অভিযান শুরু করেছি। এটি চলমান থাকবে।