বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে বিপদসীমায় পৌঁছেছে। এ অবস্থায় বন্যার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে হ্রদের শাখা কাচালং নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে খুব দ্রুত গতিতে। এছাড়া, লংগদু উপজেলার ছোট ছোট নদী-নালা ও খাল-বিলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
থেমে থেমে বৃষ্টি আর উজান থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পানির পরিমাণ। বর্তমানে পানিতে টইটম্বুর রয়েছে কাপ্তাই হ্রদ।
ভারতের মিজোরামের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে লংগদুতে বন্যা পরিস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। তারা আরো বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে অনেক এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হওয়া শুরু করেছে।
উপজেলার মাইনীমূখ ও বগাচতর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত জারুল বাগান-গাউসপুর এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি লংগদু সদর ইউনিয়নের তিনটিলা থেকে ইয়াসিন মার্কেট হয়ে ঝর্ণাটিলা যাওয়ার রাস্তাটিও এখন পানির তলদেশে।
কিছুদিন ধরে লংগদুতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কৃষক, শ্রমিক, চালক, জেলেসহ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে বসেই বেকার সময় পার করছেন। হ্রদের পানি বিপদসীমার উপরে ওঠার ফলে প্লাবিত হয়েছে কৃষকের সোনালী ফসল।
এদিকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রুলকার্ভ অনুযায়ী আর মাত্র ১ ফুট পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেই ছাড়া হতে পারে কাপ্তাই হ্রদের পানি। কেননা বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রয়েছে ১০৭.৫৫ ফুট (মীন সি লেভেল) এবং হ্রদে সর্বোচ্চ পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট। যেখানে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী বছরের এ সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার কথা ১০১.৩০ ফুট মীন সি লেভেল। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় ৫ ফুটেরও বেশি পানি রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে।
হ্রদে অতিমাত্রায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া শুরু হয়েছে এবং বিভিন্ন রাস্তা ঘাট, সেতু-কালভার্ট সহ সমতলে নির্মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে পানি ছুঁইছুঁই করছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও শ্রেণি পাঠে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী, দৈনন্দিন প্রয়োজন ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে।
লংগদু উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এভাবে আরও কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে হ্রদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এছাড়াও উপজেলার নিচু এলাকায় বন্যার প্লাবন কিছুটা শুরু হয়েছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন, লংগদু থানা পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং নেতৃবৃন্দ সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো তাদের নিজ নিজ এলাকায় বন্যা পূর্বাভাসে দূর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে, পাশাপাশি জনসচেতনতা লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানা যায়।