রাঙামাটির জেলার কাপ্তাই উপজেলার ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন এর ৯ নং ওয়ার্ডের অতি দূর্গম পাড়া আড়াছড়ি। মারমা, তনচংগ্যা, চাকমা এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রায় ১ শত ৫০ টি পরিবার বসবাস করে এই পাড়ায়।
গত ৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯ টায় এই প্রতিবেদক যান দূর্গম আড়াছড়ি পাড়ায়। প্রথমে কাপ্তাই উপজেলা সদর হতে কাপ্তাই সড়ক ধরে প্রায় ৮ কি: মি: পথ পাড়ি দিয়ে কাপ্তাই নতুনবাজার সংলগ্ন কার্গো ঘাট হতে কর্ণফুলী নদীতে ইঞ্জিন চালিত বোট যোগে আধা ঘন্টা পর মুরং ঘাটে পৌঁছায়। আবার এই মুরং ঘাট হতে কাপ্তাই রিজার্ভ ফরেস্ট এর ভেতর দিয়ে গহীন অরণ্য পাড়ি দিয়ে ৪ কি: মি: উঁচু নীচু পাহাড় বেয়ে এক ঘন্টার অধিক সময় ব্যয় করে পায়ে হেঁটে এই পাড়াতে পৌঁছালাম। এসময় আড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শতাধিক এলাকাবাসী আগে হতে জড়ো হয়েছিল এই কারনে যে, এদিন ঐ এলাকায় প্রথমবারের মতো কাপ্তাই উপজেলার কোন ইউএনও সেই এলাকা পরিদর্শন করবেন।
এসময় কথা হয়, আড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি স্থানীয় নয়ন তনচংগ্যার সাথে। তিনি বলেন, দূর্গম আমাদের এই গ্রামে স্বাস্থ্য সেবার জন্য নেই কোন সরকারি বেসরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক। আমরা সব রকমের স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই আমাদের গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী।
এলাকার বাসিন্দা জীবন বিকাশ তনচংগ্যা ও চিচি মং মারমা বলেন, হঠাৎ এলাকার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে পায়ে হেঁটে এবং ইঞ্জিন চালিত বোট যোগে কাপ্তাই নতুন বাজারে কোন চিকিৎসক এর কাছে যেতে হয়৷ আবার কেউ কেউ আরোও ৮ কি: মি: সড়ক পথে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নেয়৷ যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমাদের গ্রামে কোন ক্লিনিক থাকতো তাহলে আমাদের এই কষ্টটা হতো না । তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে রাস্তার অবস্থা এতই নাজুক থাকে যে, হেঁটেও যাওয়া যায় না।
৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিশ্বজিৎ তনচংগ্যা এবং ৩৩৬ নং আড়াছড়ি মৌজার ভারপ্রাপ্ত হেডম্যান চিকনধন তনচংগ্যা বলেন, কোন কারনে যদি কোন গর্ভবতী মহিলা বা বৃদ্ধ লোক হঠাৎ কোন অসুখে পড়ে যায় তাহলে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার জন্য তাদেরকে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে পারিনা। কারন উঁচু নীচু পাহাড় বেয়ে এইসব রোগীদের নেওয়া কষ্টসাধ্য। এই মূহুর্তে এই দূর্গম এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা অতীব জরুরী। যাতে এলাকাবাসী অত্যন্ত প্রাথমিক সেবাটুকু পাই।
এদিকে গত মঙ্গলবার ( ৭ নভেম্বর) দূর্গম এই এলাকায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড পরিদর্শন, স্কুল ভিজিট এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে গৃহ নির্মাণের জায়গা পরিদর্শন করতে যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার( ইউএনও) মো: মহিউদ্দিন ।
এসময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে এলাকাবাসীর কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের দাবির প্রেক্ষিতে ইউএনও বলেন, এই এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত এর জন্য অবশ্যই কমিউনিটি ক্লিনিক জরুরী । তবে এলাকাবাসী যদি আবেদন করে তাহলে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে এই আবেদনটি পাঠাবো।
স্থানীয় চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরীও এই এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের দাবি জানান।
এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কাপ্তাই স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মাসুদ আহমেদ চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকার প্রতিটি এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করতে চাই, তবে এলাকার কেউ যদি ৮ শতাংশ জমি দেন, তাহলে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে ঐ এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।