ভূয়া ঋণ বাতিলের দাবীতে রাঙামাটির লংগদু শহরে বিক্ষোভ এবং লংগদু উপজেলা শাখার সোনালী ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেছে ৫ শতাধিক ভুক্তভোগী মানুষ।
আজ রবিবার সকালে লংগদু উপজেলা সদর মাঠে এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,২০১২ সালে একটি চক্র লংগদু উপজেলার ভাসন্যাদম ইউনিয়নে অসহায় মানুষদের কাছে সরকারী সহযোগিতার প্রলোভন দেখিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে। ২০২৪ এসে জানতে পারেন তাদের নামে সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখায় ৫০-৬০ হাজার টাকা করে কৃষি ঋণ নেয়া হয়। সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়েছে তারা বিষয়টি জানতে পারেন।
অভিযোগে জানাগেছে,উপজেলার বগাচতর ইউনিয়ন ও ভাসান্যাদম হতে ৩শতাধিকের বেশী লোকজন হতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার নাম বলে ওই সময়ে দালাল চক্রের গাঁথাছড়ার হেলাল,মারিশ্যাচরের সেলিম,বাইট্টাপাড়ার জামাল, বাইট্টপাড়ার মিষ্টি কালাম ও সন্তোষ সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল এসব অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড ও জমির কাগজপত্রাদি নিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ তুলেছেন। ভুক্তভোগিরা এই ঋণের ব্যাপারে কিছুই জানেনি। প্রায় ১১-১২ বছর পর এসব অসহায় গরিব লোকজন নাতে পারে তাদের ঋণের খবর।
এখানে মজার বিষয় হলো যাদের নামে ঋণ দেখানো হয়েছে তাদের আইডি কার্ড এর প্রথম অংশ বগাচতর ও ভাসান্যাদম এবং আই ডি কার্ডের বাকি সোনাই ও মাইনীমূখ ইউনিয়ন দেখানো হয়েছে। সেখানেও জালিয়াতি করেছেন সোনালী ব্যাংক দালাল চক্র। দালাল চক্র লালন পালন করেছেন তৎকালিন লংগদু ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারিরা। গোটা লংগদু উপজেলায় এধরনের ঋণ জালজালিয়াতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ।
ভুক্তভোগী আইন উদ্দীন (৫০) বলেন,ব্যাংকের মাধ্যমে জানতে পারেন ভাসন্যাদম ইউনিয়নে ৩শ’ জনের নামে এভাবে ঋণ নেয়া হয়। বর্তমানে সুদ বেড়ে এসব মোট ঋণের অংক দাড়িয়েছে ৩০কোটি টাকার উপরে। এসব ভুক্তভোগী কেউ ঋণ গ্রহণ করেনি। তাদের এনআইডি কার্ডের সামনের অংশটি ভাসন্যাদম ইউনিয়নের পেছনের অংশটি মাইনী ইউনিয়নের। ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
মমতাজ উদ্দিন (৩৫) বলেন,আমি আনসারের চাকরি করি। আমি ঋণ নিইনি। কিন্তু আমার নামে ভূয়া স্বাক্ষরে ঋণ উত্তোলন করা হয়। এখন আমার বেতন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে হওয়ায় ব্যাংক টাকা কেটে রাখছে। ভুক্তভোগী কারোর টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা হলে কেটে রাখা হচ্ছে।
রাঙামাটি সোনালী ব্যাংক এর প্রিন্সিপাল অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়টি আমরা অবগত আছি। এব্যাপারে একটি উচ্চতর তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে মিডিয়ার কাছে এখন সবকিছু বলতে পারছি না। তবে কিভাবে কি হয়েছে তা গভীর ভাবে খতিয়ে দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখার ব্যবস্থাপক মো. আবুল কাসেম বলেন, এ অনিয়মটি আমার আমলে হয়নি। ২০০৮ সালে হয়েছে। আমার আগে যারা দায়িত্বে ছিল তারা বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। আমি যেহেতু বিষয়টি আবিস্কার করছি আমাকে পদোন্নতি দেয়া দরকার।
লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন,যাদের নামে ঋণ নেয়া হয় তাদের অনেকেরই জমি নেই।কেউ আছে ভিক্ষা করে খায়।কেউ দিন মজুর। সবাই অসহায়। স্থানীয় কয়েকজন দালাল এবং তৎকালীন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ অনিয়ম হয়েছে। নিরীহ লোকজন যেন হয়রানীর শিকার না হয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে আমি লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বলেছি। রাঙামাটি এবং লংগদু সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকেও আমি বিষয়টি গভীর ভাবে অবগত করেছি।