খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রুহিন ত্রিপুরার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী (নব্যমুখোশ) ভেঙে দেয়ার দাবিতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সম্পাদক নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রামগড়:
পানছড়িতে বিপুল, সুনীল, লিটন, রুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে খাগড়াছড়ির রামগড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), রামগড় উপজেলা ইউনিট।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রামগড় উপজেলা সদর এলাকায় এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইউপিডিএফের রামগড় উপজেলা ইউনিটের সংগঠক নিটুন চাকমার সভাপতিত্বে ও সংগঠক সুভাষ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ রামগড় উপজেলা ইউনিটের সংগঠক সুবর্ণ মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলার সভাপতি লিটন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা সহ-সভাপতি রাজু ত্রিপুরা ও রামগড় ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি সুমন্ত কান্তি চাকমা।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে ঠ্যাঙাড়ে নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর পানছড়ি অনিলপাড়া নামক স্থানে পাহাড়ে তরুণ রাজনৈতিক নেতা বিপুল, সুনীল, লিটন, রুহিনকে হত্যা করা হয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এক মাস পার হলেও খুনীদের এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা খুনীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার পার্বত্য অঞ্চলে জুম্ম দিয়ে জুম্ম হত্যার ষড়যন্ত্র জারি রেখেছে। বিপুল চাকমাসহ ৪ জনকে হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করা বা খুনীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার মাধ্যমে তা প্রতীয়মান হয়।
শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন-গুম-অপহরণ জিইয়ে রেখে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করা চক্রান্ত চালচ্ছে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, গত কয়েকদিন আগে রাঙামাটির জুড়াছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনী সহায়তায় সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের চেষ্টা ও প্রতিবাদকারী পাহাড়িদের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
বক্তারা শাসকগোষ্ঠির সকল অন্যায়-অবিচার ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা, পানছড়িতে চার জনকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, রাষ্ট্রীয় বাহিনী পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী (নব্য মুখোশ) ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানান।
এছাড়াও তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতেরও দাবি করেন।
বাঘাইছড়ি:
রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টায় বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের বালুঘাট হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সাজেকের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেতকাবা চৌমুহনীতে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ১২শ’ নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। মিছিলে তারা বিপুলসহ চার নেতার খুনিদের গ্রেফতারের দাবিসহ বিভিন্ন শ্লোগান দেন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সংগঠক ইয়ান চাকমা।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখা সভাপতি নিউটন চাকমার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জলা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি বিরো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য অর্পনা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি কিরন চাকমা।
নান্যাচর:
রাঙামাটির নান্যাচরে একই দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখাসমূহের যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আজ দুপুর ১২টার সময় নান্যাচরে সদরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি প্রিয়তন চাকমার সভাপতিত্বে ও সুমেত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিপন আলো চাকমা ও নান্যাচর উপজেলা শাখার সহ সভাপতি বিকাশন চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বিপুল চাকমাসহ ৪ খুনের ঘটনাটি একমাস পার হলেও খুনিদের গ্রেফতার না করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এত বড় একটি হত্যাকাণ্ডের পরও প্রশাসন যেখানে নির্লিপ্ত থাকে সেখানে সাধারণ জনগণ কীভাবে নিরাপদে থাকবে?
তারা অভিযোগ করে বলেন, খুনিরা গ্রেফতার না হওয়ায় তারা এখন দিব্যি প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে, জনপ্রতিনিধিদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় একটি বিশেষ গোষ্ঠি খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, কিছুদিন আগে খাগড়াছড়ি বিগেডের জি-টু মেজর জাহিদ হাসান খুনিদের সাথে দেখা করে আরো নতুন খুনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বলে মিডিয়ায় খবর হয়েছে। খুনিরা এখন খাগড়াছড়ির দেওয়ান পাড়া সেনা ক্যাম্পের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছে বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের খুনিদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং রাষ্ট্রীয় মদদে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী (নব্যমুখোশ) ভেঙে দেয়ার জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার অনিলপাড়ায় রাষ্ট্রীয় বিশেষ গোষ্ঠির মদদে ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিসিপির সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, পিসিপির বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহসভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সংগঠক রুহিন ত্রিপুরাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডের এক মাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসন এখনো খুনিদের গ্রেফতার না করে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে।