খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়ায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা এশা ত্রিপুরা (নবীনা) হত্যাকান্ডের ঘটনায় এশার স্বামী উদ্দীপনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ পত্র দিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খাগড়াছড়ি থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) উৎপল বিশ্বাস।
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এ অভিযোগ পত্র জমা দেয় পুলিশ।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, এশা ত্রিপুরার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ ছিল। একে অপরকে পরকীয়া সন্দেহ করতেন। রিমান্ডে এশার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা হত্যার দায় স্বীকার না করলেও এশা ত্রিপুরাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তদন্তে তা প্রতীয়মান হয়েছে।
ঘটনার দিন অর্থাৎ গত বছর ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮ টার দিকে এশার সহকর্মী ত্রিপালী ত্রিপুরা ও তার স্বামী বীর মোহন ত্রিপুরা বেড়াইতে মহাজন পাড়ায় এশাদের ভাড়া বাড়িতে বেড়াইতে যায়। আড়াই ঘন্টা অস্থান করে তারা চলে যাওয়ার পর উদ্দীপন ত্রিপুরা, তার স্ত্রী এশা ত্রিপুরা এবং তাদের ১৩ ও ৬ বছরের দুই সন্তান ছাড়া বাড়িতে অন্য কেউ ছিল না।
তাছাড়া বাইরে থেকে এসে কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে তার কোনা আলামত পায়নি পুলিশ। কারণ ঘরের দরজা জানালা সব ঠিক ছিল। কেউ ভেঙে প্রবেশ করেছে তারও কোন আলামত পাওয়া যায়নি।
পরদিন (২১ জুলাই ভোর ৪ টা) খবর পেয়ে প্রতিবেশীরা বাথরুমে রক্তাক্ত জখমের আঘাতসহ এশার মরদেহ দেখতে পায়। এ হত্যাকান্ডকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করে উদ্দীপন ত্রিপুরা। এ হত্যাকান্ডকে সে প্রথমে বাথরুমে পড়ে গিয়ে, কখনও স্ট্রোক করেছে বলে প্রকাশ করে। পরে লাশ হাসপাতালে না নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া সৎকারের চেষ্টা করে উদ্দীপন। স্থানীয়দের চাপের মুখে এক পর্যায়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে। ময়না তদন্তে এশার মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলে জানান চিকিৎসকরা।
উৎপল বিশ্বাস বলেন, আমি তদন্ত করে যা পেয়েছি তা উল্লেখ করে অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে জমা দিয়েছি।
মামলার বাদী এশা ত্রিপুরার ভাই খোকা রঞ্জন ত্রিপুরা বলেন, আমি চার্জশীট পেয়েছি। চার্জশীট পড়ে আমি সন্তুষ্ট। পুলিশ ভাল প্রতিবেদন করেছে। এর উপর মতামত জানাতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারী আদালতে উপস্থিত থাকতে আমাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি হেমন্ত ত্রিপুরা বলেন, বাদী চার্জশীটের উপর সন্তুষ্ট হলে আদালতে মতামত দিলে বিচারের জন্য চীফ জুডিসিয়াল আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হবে। তখন বিচারের জন্য চার্জ গঠন হলে বিচার কার্য শুরু হবে।
প্রসঙ্গত গত বছর ২০ জুলাই মধ্যে রাতে খাগড়াছড়ি মহাজন পাড়ায় ভাড়া বাসায় খুন হন মাটিরাঙা উপজেলার তপ্ত মাস্টার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এশা ত্রিপুরা। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এশা ত্রিপুরার বড় ভাই খোকা রঞ্জন ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি থানায় অজ্ঞাত আসামীদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে তিন পার্বত্য জেলায় মানববন্ধন করে বিভিন্ন সংগঠন।