পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম রঙিন ফুল কফির চাষ করা হয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া বড়বিলী একটি পাহাড়ি প্রত্যন্ত গ্রামে।
সাদা ফুল কফি সহ বিভিন্ন শাকসবজির চাষ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হয়ে থাকলেও বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে এই প্রথম রঙিন ফুল কফি ( বেগুনি রংয়ের) চাষ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পাহাড়েরই এক অজপাড়া গাঁয়ের এক পাহাড়ি কৃষক। তার এই রঙিন ফুলকফি দেখে গ্রামের লোকজন রীতিমতো হতবাক হয়েছেন এবং পাশাপাশি খুশিও হয়েছেন।
জানা যায় উপজেলার বেতবুনিয়া বড়বিলী পাহাড়ি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা চিনুমং মারমা গত ডিসেম্বরে কাউখালী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রীতিময় চাকমার পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে রঙিন ফুলকপির বীজ নিয়ে নিজ গ্রামে ক্ষেতে প্রায় এককানি ( ৪০ শতক) জমিতে এই রঙিন ফুলকফির চাষাবাদ শুরু করেন।
কিছুদিনের মধ্যে ফুলকফির ফুল আসতে শুরু করে আস্তে আস্তে তা রঙিন (বেগুনি রঙের) রঙ ধারণ করতে শুরু করলে লোকজনের মধ্যে একটু চিন্তার ভাজ পড়ে ? ঘটনা কি? পরক্ষনেই এলাকার লোকজনের ভুল ভাংতে শুরু করে এই ফুল কফি। দেখা যায় তা সাধারণ ফুল কফির মতোই রঙিন ফুলকফি। পুরো গ্রামজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।
এর পর পাল্টে যেতে শুরু করে কৃষক চিনুমং মারমার জীবন। ক্ষেতেই শুরু হয় বিক্রি। প্রতি কেজি রঙিন ফুল কফির দাম পাইকারি ১ শত টাকা করে পরে ৬০ টাকা করে মোটামটি এভাবেই রঙিন ফুল কফি বিক্রি করে কৃষক চিনুমং মারমা চলে আসেন কৃষকদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে।
কথা হয় কৃষক চিনুমং মারমার সাথে। তিনি বলেন, আমি এই রঙিন ফুল কফির ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। সারাজীবন দেখেছি সাদা ফুলকফি এটা আবার কি ধরনের ফুলকফি। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরমর্শে আমি এই ফুলকফির চাষ করে আজ আমি অনেক লাভবান।
অন্য দিকে কথা হয় উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রীতিময় চাকমার সাথে। তিনি বলেন, আমরা কৃষক চিনুমংকে পরামর্শ প্রদান করি এই রঙিন ফুলকফির চাষ করার জন্য। তিনি আমাদের পরামর্শ শুনে আমাদের কৃষি অফিস থেকে বীজ নিয়ে এই ফুল কফির চাষ করে আজ লাভবান হয়েছেন।
কথা হয় কাউখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রাসেল সরকারের সাথে। তিনি বলেন, আমরা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে কৃষক চিনুমং মারমাকে এই রঙিন ফুল কফির চাষ করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করি। পরে তিনি আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী এই চাষ শুরু করেন। মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই ফলন চলে আসে। তাছাড়া এই রঙিন ফুলকফি পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে এই প্রথম কাউখালী উপজেলার এই কৃষক চিনুমং মারমা প্রথম চাষ করেছেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, প্রচলিত জাতের চেয়ে রঙিন ফুল কফিতে এনেস্সায়ানিন পিগমেন্ট উপস্থিতি থাকায় তা পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। সাদা ফুল কফির ছেয়ে রঙিন ফুল কফির বাজার মুল্য ২-৩ গুন বেশি হওয়ায় কৃষক বেশ লাভবান হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী বছর রঙিন ফুল কফির চাষাবাদ অনেক বৃদ্ধি পাবে, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরন প্রকল্পের আওতায় অর্পিত প্রদর্শনী কৃষক কে বীজ, সার, বালাইনাশক ফেরোমন ফাঁদ আঠালো ফাঁদ প্রভৃতি সরবরাহ করা হয় বলে তিনি জানান।
অন্য দিকে কাউখালীর এই কৃষক রঙিন ফুল কফির চাষ করে যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান তেমনি হয়েছেন কৃষকদের আইডল। এই রঙিন ফুল কফির চাষ এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি অনেকের মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। ভবিষ্যতে হতে পারে একটি লাভবান ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ফসল এটাই সকলের প্রত্যাশা।