রবিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

লংগদুতে বিজিবির জমি বেদখলের পাঁয়তারা স্থানীয়দের

প্রতিবেদক
এম কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪ ১২:২২ অপরাহ্ণ

 

রাঙামাটির লংগদুতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ রাজনগর ব্যাটালিয়নের (৩৭ বিজিবি) জমি বেদখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি। যা নিয়ে তারা বিজিবির সঙ্গে প্রকাশ্য ভূমিবিরোধে জড়িয়েছেন। বিরোধ বেড়েই চলেছে। গড়িয়েছে আদালতে। ইতোমধ্যে বাদী হয়ে ব্যাটালিয়নের আওতাধীন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জায়গা নিজের দাবি করে আদালতে মামলা দিয়েছেন মো. আলী নামে একব্যক্তি। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে বিষয়টির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, লংগদু উপজেলার গুলশালী ইউনিয়ন সদর হতে ১৯৯৪ সালের ১৬ জুলাই একই ইউনিয়নের রাজনগরে স্থানান্তরিত হয় রাজনগর ব্যটালিয়ন (৩৭ বিজিবি) ক্যাম্প। তখন থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যান, হেডম্যান, কাবর্বারি ও স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক সহায়তায় ব্যাটালিয়নের প্রশাসনিক, প্রশিক্ষণ ও অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ব্যাটালিয়নের দখলে রয়েছে প্রায় ১৬০ একর জমি। তার মধ্যে উত্তর পাশে প্রায় ৬০ একর জায়গায় ৩০টি বেসরকারি পরিবার বসবাস করছেন। বাকি ১০০ একরের মধ্যে সাড়ে চৌদ্দ একর বিজিবির নামে অধিগ্রহণ করা রেকর্ডভুক্ত এবং সাড়ে ৮৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন- যা শেষের পথে রয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি ব্যাটালিয়নের জমিতে বিদ্যমান ক্ষুদ্রাস্ত্র ফায়ারিং রেঞ্জ এবং প্রস্তাবিত গ্রেনেড ফায়ারিং রেঞ্জ এলাকায় প্রায় পাঁচ একর জায়গা নিজের রেকর্ডীয় দাবি করে রাঙামাটির যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বাদী হয়ে একটি চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন স্থানীয় ব্যক্তি মোহাম্মদ আলী। তিনি তার মামলায় বিবাদী করেছেন রাজনগর ব্যাটালিয়ন (৩৭ বিজিবি) অধিনায়ক ও সহকারী পরিচালককে। মো. আলী লংগদু উপজেলার গাঁথাছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপাড়ার মৃত সোনা মিয়ার ছেলে। মামলার কারণে বর্তমানে ৩৭ বিজিবির বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও মাঠ সংস্কার কাজ স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে মামলাটি নিয়ে আপস-মিমাংসার জন্য জেলা যুগ্ম জজ আদালতের নির্দেশনায় গত বছর ২১ আগস্ট উভয় পক্ষকে নিয়ে আলাচনায় ডাকেন জেলা লিগ্যাল অ্যাইড অফিস। এতে মিমাংসার আহবান করলে তাতে রাজী নন মর্মে জানান উভয়ে। কিন্তু বাদী তার মামলায় বর্ণিত জমির কোনো প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে না পারায় সব নথি আদালতে ফেরত পাঠায় জেলা লিগ্যাল অ্যাইড অফিস। পরে মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

এতে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন মো. আলী। তার দাবি করা জমির হোল্ডিং নম্বর ১১৭২ এবং বিবিধ মামলার নম্বর ৫৭ (ল)/২০০৯-১০। কিন্তু এটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিপিবদ্ধ নেই। তাছাড়া ১৯৮০ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যক্তি মালিকানার জমি বন্দোবস্তু প্রকিয়া বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বাদীর রেকর্ডীয় মর্মে দাবি করা জায়গা ১৯৯৪ সাল হতে বিজিবির ভোগদখলে আছে। এতে বাদীর উপস্থাপন করা জমির সব রেকর্ডপত্রের নথি জাল ও ভুয়া বলে প্রতীয়মান হয়। ওই মামলার ৫ একর ছাড়াও বিজিবির অভ্যন্তরের তার আরও প্রায় ১৫ একর জায়গা রেকর্ডভুক্ত আছে বলেও দাবি মো. আলীর।

তিনি দাবি করে বলেন, তিনি ওই এলাকার স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে স্ট্যাম্পে কাগজ করে প্রায় ২০ একর জায়গা কিনে নিজ, স্ত্রী ও আত্মীয়ের নামে ডকেট নম্বর করে রেকর্ডভুক্ত করেছেন। এ কাজটি তিনি টাকা দিয়ে লংগদু ভূমি অফিসের একজনকে দিয়ে করিয়েছেন। কিন্তু রাজনগর বিজিবি আমার সব জায়গা দখল করায় আমি আদালতে মামলা করি। বর্তমানে মামলাটি জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন। তবে তিনি সরকারি অধিগ্রহণ মূলে নেওয়া হলে তার জমি বিজিবিকে ছেড়ে দিবেন বলে জানান।

এদিকে সরেজমি গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রথাগত মৌজাপ্রধান (হেডম্যান), গ্রামপ্রধানসহ (কারবারি) স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মো. আলীর দাবি করা রেকর্ডীয় জায়গা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ওই জমি খাস এবং তিনি স্যুট কবুলিয়াত করে জাল রেকর্ড করেছেন। তার এসব কোনো রেকর্ড জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নেই। সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যানের নথি বইয়েও তার এসব জায়গার কোনো রেকর্ড নেই। মো. আলী ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাও নন। তার রেকর্ডীয় জায়গা রাজনগর বিজিবি জোন হতে তিন কিলোমিটার দূরে উল্লে করলেও তা সত্য নয়। কারণ বর্ণিত জমি বিজিবি জোনের অভ্যন্থরে তারকাটা দিয়ে ঘেরা। ওইসব জমি ১৯৯৪ সাল হতে বিজিবির ভোগদখলে।

মো. আলী ছাড়াও সেখানে তার সঙ্গে আরও বেশ কতিপয় ভূমিদ্যু আছে, যারা বিজিবি জায়গাসহ সরকারি খাস জমি দখল দাবি করে ক্রয়-বিক্রয়ের রমরমা বাণিজ্য করে চলেছেন। গত বছর ১ ডিসেম্বর রাতে বিজিবি ক্যাম্পের জায়গায় লংগদুর ছোট মাহিল্যার সোনারগাঁও এলাকার মর্শিদ মিয়ার ছেলে মো. মাসুদ মিয়া অবৈধ একটি বাড়িঘরের স্থাপনা নির্মাণ করলে তা এ বছর ১৭ জানুয়ারি গুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করেছে বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গুলশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মো. আলী নামে ওই ব্যক্তি আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা বা ভোটার নন। কিন্তু তিনি সরকারি খাস জমি কিনে যে তার নামে রেকর্ড করেছেন বলে বিজিরি সঙ্গে ঝামেলা করছেন তা দূরভিসন্ধিমূলক। তার এসব কর্মকান্ডে সীমান্তরক্ষাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিজিবির সঙ্গে স্থানীয়দের দূরত্ব বাড়াচ্ছে। তার কাগজপত্র সব জাল ও ভুয়া, যা সংশ্লিষ্ট মৌজা হেডম্যান, কারবারির কোনো সুপারিশ বা প্রতিবেদন নেই।

গুলশাখালী মৌজার হেডম্যান মো. আবদুল হালিম বলেন, মো. আলী কিসের বা কোন জায়গায়-জমি কিনে রেকর্ডভুক্ত করিয়েছেন তা আমার কিছুই জানা নেই। তিনি হেডম্যান, কারবারির কোনো রকম সুপারিশ নেননি। তার দাবি করা জায়গা ১৯৯৪ সাল হতে রাজনগর বিজিবির ভোগদখলে রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি আদালতে প্রতিবেদনও দিয়েছি। এতে ক্ষুব্দ হয়ে আমাকে হুমকিও দিয়েছেন ওই মো. আলী।

স্থানীয় কারবারি মো. জয়নাল আবদীন বাবুল ও প্রীতি লাল চাকমা বলেন, ওইসব জায়গা বিজিবির দখলে রয়েছে। সরকারি খাস জমি নিজের রেকর্ডীয় মর্মে দাবি করে মো. আলী যে মামলা করেছেন তা অহেতুক। মূলত তিনি অধিগ্রহণের জন্য মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার হীন-উদ্দেশ্যে এ ধরনের মামলায় জড়িয়েছেন বলে আমরা মনে করি।

রাজনগর বিজিবি জোনের হাবিলদার আবদুর রউফ বলেন, মো. আলী, মাসুদসহ কিছু ব্যক্তি বিজিবির জায়গা বেদখলের পাঁয়তারা করছেন। মো. আলী আদালতে মামলা নিয়ে বিজিবির সঙ্গে অহেতুক ভূমিবিরোধে জড়িয়েছেন। তার কাগজপত্র সব জাল, যা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিপিবদ্ধ নেই। আদালতে তিনি বৈধ কোনো জায়গা-জমির রেকর্ড-প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই আদালত তার মামলা খারিজ করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। তার দাবি করা জায়গা ১৯৯৪ সাল হতে বিজিবির ভোগদখলে রয়েছে।

মো. আলীর উপস্থাপন করা রেকর্ডীয় জায়গার জবানবন্দির কপি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপস্থাপন করলে তা যাচাইয়ের জন্য তার কার্যালয়ের ভূমি ও রাজস্ব শাখার দায়িত্বে নিয়োজিত গৌরিকা চাকমাকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাৎক্ষণিক বিষয়টির যাচাই করলে রেকর্ড বইয়ে মো. আলীর নামে কোনো রেকর্ডীয় জমির লিপিবদ্ধের তথ্য পাননি গৌরিকা চাকমা। মো. আলীর জবানবন্দি কাগজে থাকা গৌরিকা চাকমার স্বাক্ষরও নিজের নয় বলে দাবি করেন তিনি।

মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, মূল মামলাটি চলমান অবস্থায় রয়েছে। তবে যুগ্ম জেলা জজ আদালতের একটি আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেছেন বাদী মো. আলী।

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

আপনার জন্য নির্বাচিত
%d bloggers like this: