অতিমাত্রার গরমে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড়ে আম-লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। গুটি ঝরে পড়ায় বাগানমালিকেরা মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়বেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন। টানা ক’দিনের বৈরী আবহাওয়ায় রাতে ঠান্ডা ভাব, দিনে দাবদাহ। আর এ কারণে ঝরে যাচ্ছে গুটি। ফলে চলতি মৌসুমে আম-লিচুর ফলনে বড় বিপর্যয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি অফিস বলছে, এ মৌসুমে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে কয়েক দিন ধরে। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এভাবে চলতে থাকলে জীব-বৈচিত্র হুমকিতে পড়বে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে আম-লিচুর মুকুল বেরিয়েছে ৫০/৬০ শতাংশ। বাকিটা নতুন পাতা গজিয়েছে। তিব্র গরমে আম ও লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এ কারণে এবার আম-লিচুর ফলন কমার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলায় আমের বাগান রয়েছে ৫ শত ৭০ হেক্টর। বাগানগুলোতে আম্রপালি, বারি- ৪ , বারি-১১, রাংগুয়াই, বেনানা ও কাটিমন সহ দেশিয় বেশ কয়েকটি জাতের আমবাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচুর বাগান রয়েছে প্রায় ১৫০ হেক্টরের বেশি। এসব বাগানে বোম্বাই ও চায়না-টু ও থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়। চলতি লিচু গাছে ফুল আসার পর রাতে ঘণ কুয়াশা ঝরে গেছে লিচু ফুল ও দিনে তিব্র রোধে শুকিয়ে ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি যে কারণে এবার লিচুর উৎপাদনও কম হবে।
সম্প্রতি উপজেলার পাতাছড়া, তৈছালাপাড়া ও খাগড়াবিল আম বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের বিখ্যাত আম্রপারি ও বারি-৪ আমের গাছে গত বছরের মত আশানরুপ ফল আসেনি। এরমধ্যে গরমে গাছের নিচে ঝরে পড়ছে আম। গাছে নেই তেমন গুটি । চাষিরা গুটি ঝরা রোধে নানা চেষ্টা করছেন। চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে কুয়াশায় আম – লিচুর মুকুল অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেকও আসেনি। তারমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ আম-লিচুর গুটি ঝরে গেছে। বাতাসের আর্দ্রতা হ্রাস পেয়েছে। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। আম লিচুর গুটি ও কচিপাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে।
রামগড় ইউনিয়রের বলিপাড়ার বাগানমালিক আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, তাঁর ৩ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমবাগান রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবারে আমগাছে আশানুরূপ মুকুল আসেনি। যা ছিলো তাও অতিমাত্রার গরমে ঝরে পড়ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, বাগানে সেচ দেওয়া হচ্ছে এবং নানা প্রকারের ছত্রাকনাশক ও সার প্রয়োগ করেও তেমন উপকার পাওয়া যাচ্ছে না।
অবসরপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফয়েজ আহাম্মদ জানান, নিজ ও ইজারাকৃত সাড়ে ৩ শত একর ভূমিতে প্রায় ৯ হাজার আম গাছ রয়েছে তার। বাগানে আম, লিচু ও মালটা চাষ করেছেন। এসব বাগানে গত বছরের তুলনায় এবার ৪০ শতাংশ ফলও আসেনি এরমধ্যে ২০ শতাংশ ফলের গুটি ঝরে পড়েছে। এরমধ্যে বাগানে ১৩ লাখ টাকা খরছ করে ফেলেছেন পুরা টাকাই লোকশানের আশংকা করছেন তিনি। তিনি বলেন, গতবছর লাভের মুখ দেখে লিজ নিয়ে বাগান বাড়িয়ে বৌরি আবহাওয়ার কারণে এবার বড় লোকশানে পড়েছেন ।
রামগড় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড তাপে আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়া রোধে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া সহ বাগান পর্যবেক্ষণ করছেন। যেসব বাগানে গুটি ঝরে পড়ছে সেগুলোতে প্লাবন সেচ, পানিতে ইউরিয়া মিশ্রিত পানি স্পে ও মাটিতে ইউরিয়া এবং পটাস সার প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাপমাত্রা বেশি তাই সকালে বা বিকেলে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে বলে তিনি জানান।