পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ের নারী নেত্রী ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার বুধবার অপহরণ ২৮তম বছর পূর্ণ হচ্ছে। দীর্ঘ বছর বিচারের অপক্ষোর পর গত ২৩ এপ্রিল পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বাদীর নাজারি আবেদন নামঞ্জুর করে অপহরণের মালমা খারিজ করে দেওয়া হয়। তবে বাদীর পক্ষ উচ্চ আদালতে সুষ্ঠু বিচার পেতে আবেদন করার প্রক্রিয়া চলছে। ২৮তম অপহরণ বর্ষ উপলক্ষে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এব্যাপারে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কল্পনা চাকমার অপহরণ ২৮তম বছর পূর্ণ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারক লিপি প্রদান করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (সন্তু)’র কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথ উদ্যোগে,কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৮বর্ষপূর্তি উপলক্ষে,অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও যথাযথ বিচারসহ অপহরনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি (সন্তু) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (সন্তু)’র কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথ উদ্যোগে,কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৮বর্ষপূর্তি উপলক্ষে, শ্রীমতি আশিকা চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক মহিলা সমিতি (সন্তু)রাঙামাটি জেলা শাখা এর সভাপতিত্বে অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও যথাযথ বিচারসহ অপহরনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল সকাল সাড়ে ৯ঘটিকায় রাঙামাটি শহরস্থ রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন জেএসএস (সন্তু) জেলা কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু গয়ে বনরূপা পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত ঘুরে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মেইন গেইটে পৌঁছে বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় চাকমা চাকমা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টি আই বি), ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সদস্য ইয়েলো মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য উলিসিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানুচিং মারমা,পিসিপি(সন্তু) গ্রæপ রাঙামাটি জেলা সভাপতি জিকো চাকমাসহ রাঙামাটি জেলা শাখা ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নারী ও পুরুষ নেতৃবৃন্দ।
এসময় বক্তারা বলেন,কল্পনা চাকমা অপহরণের দীর্ঘ ২৮বছর অতিক্রম হলেও কোন তথ্য বা সাক্ষ্য না পাওয়ার অজুহাতে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার মত বর্বরোচিত ও জঘন্য মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার ন্যায়বিচার ব্যর্থ হতে পারে না। তাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তি প্রদান অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্র, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই এ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য করে বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউলাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়। পাহাড়ি সংগঠনগুলোর ভাস্যমতে সেনাবাহিনীর তৎকালিন কর্মকর্তা লে.ফেরদৌসের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করেছিলো। অথচ ২৮বছরেও বাংলাদেশ তথা রাষ্ট্র কল্পনা চাকমার হদিস দিতে পারেননি। যথাযথ বিচার করতে পারেননি মানবতা বিরোধী এই জঘন্য ঘটনার।এটাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের বিচারহীনতার একটি হীন দৃষ্টান্ত। পার্বত্য জনগোষ্ঠী সহ গোটা জাতি আজ লজ্জিত যে রাষ্ট্র, সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন মানবতা বিরোধী কাজের তদন্ত ও ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন,অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৬বছর পেরিয়ে গেলেও যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গভাবে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে এখনো দুঃশাসন চলছে। পাহাড়ে নারী যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে অনেকে। সরকার শান্তি চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দিয়েছে যা পার্বত্য জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত করার দৃষ্টান্ত। সরকার অবিলম্বে শান্তি চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নসহ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সকল দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠী যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছি।