কাপ্তাই হ্রদের পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে নিস্কাশন করা হচ্ছে। রুলকার্ভ অনুসরণ করে এ কার্ক্রম অব্যাহতভাবে চলবে।কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ১০৮ ফুটের ওপর চলে যাওয়ায় রোববার সকালে কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট খুলে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি ভাটি এলাকার কর্ণফুলী নদীতে নিস্কাশন করা হয়। এতে হ্রদে পানির চাপ কমে আসায় ৬ ঘন্টা পর দুপুর ২টায় বাঁধের স্প্রিলওয়ের জলকপাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর রেকর্ড করা হয় ১০৮ দশমিক ৬০ ফুট বা এমএসএল (মীন সী লেভেল)। হ্রদের পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। এর ১০৮ এমএসএল ক্রস করলে বিপৎসীমা ধরা হয়। ফলে রোববার সন্ধ্যায় আবারও কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে দিয়ে হ্রদের পানির চাপ কমাতে হয়েছে। রাতে আবার বন্ধ করে সোমবার সকাল ৭টায় জলকপাটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ( তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, রোববার সকাল ৮টায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হলেও দুপুর ২টায় সবকটি জলকপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিকালে আবার কাপ্তাই হ্রদে পানির লেভেল বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যায় আরেক দফায় জলকপাট খুলে দিয়ে পানি ছাড়তে হয়েছে। এরপর রাতে বন্ধ করে সোমবার সকাল ৭টায় আবার বাঁধের সবকটি জলকপাট খুলে হ্রদ থেকে পানি ছাড়া হয়। এভাবে হ্রদে যতদিন পানি বাড়তে থাকে ততদিন রুলকার্ভ অনুসরণ করে বাঁধের জলকপাট খুলে পানি ছাড়া এবং বন্ধ করা অব্যাহত থাকবে। সোমবার বিকালে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ ছিল ১০৮ দশমিক ৮৭ ফুট।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে রাঙামাটির বিস্তীর্ণ নিন্মাঞ্চল। কবলিত হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা। এছাড়া লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, সদর ও নানিয়ারচর উপজেলাতেও প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল। এতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। প্রশাসন থেকে এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা নিরুপণ করতে না পারলেও জেলায় প্লাবিত হয়ে অন্তত ২০-২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। চরম দুর্ভোগে এসব পানিবন্দি মানুষ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ তৎপরতাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান। তিনি বলেন, বাঘাইছড়িতে বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার আশংকা নেই বললেই চলে। তবে জেলা সদরের মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় পানি উঠেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে হ্রদের পানি বৃদ্বি পাওয়া লংগদু উপজেলার নিন্মাঞ্চল বেশ কিছু ইউনিয়নে তলিয়ে গেছে। ইতি মধ্যে লংগদু ইউএনও পানি বন্দী লোকজনের মধ্যে ১০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বিতরণ করে। লংগদুতে আরো ২০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য ও নগদ ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে উজান থেকে নামছে বন্যার পানি। এতে পাহাড়ি ঢলে এখন বিপৎসীমায় রয়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। ডুবছে হ্রদ তীরবর্তী মানুষের বাড়িঘর ও স্থাপনা। ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু। হ্রদের পানি উঠছে রাঙামাটি শহরের প্রধান সড়কে সংযুক্ত ফিশারি এলাকার বাঁধে। ভাঙছে বাঁধটির বিভিন্ন অংশে। এতে ঝুঁকির সম্মুখীন বাঁধটি। কাপ্তাই হ্রদের পানির চাপ কমাতে রোববার থেকে দফায় দফায় বাঁধের জলকপাট খুলে দিয়ে ছাড়া হচ্ছে পানি। এসব পানি নিস্কশিত হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে চন্দ্রঘোনা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় রাঙামাটি-রাজস্থলী-বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।