রেজাউল রেজা।
নির্মাণসামগ্রীর দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকায় বাড়ি নির্মাণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন রাজধানীর সবুজবাগ দক্ষিণগাঁও এলাকার নুরু মোহাম্মদ গাজী। তিনি বলেন, ‘পেশাজীবনের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে সাড়ে তিন কাঠা জমিতে বসবাসের জন্য স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছি। কিন্তু ইট, বালু, পাথর সব কিছুর দামে আগুন। এর মধ্যে রডের দাম এক লাফে ৮০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এ অবস্থায় বাড়ির কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। সামনে রডের বাজার বুঝে কাজ আবার চালু করব।’ রডসহ সব নির্মাণসামগ্রীর দাম লাগামহীন হয়ে ওঠায় এখন নুরু মোহাম্মদ গাজীর মতোই অবস্থা আবাসন খাতে ব্যক্তি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদেরও। তারা বলছেন, এভাবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় ভবন নির্মাণ ব্যবসায় টিকে থাকতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নুরু মোহাম্মদ বলেন, ধারণা করেছিলাম সব মিলিয়ে ৪৫ থেকে ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে ভবনের ফাউন্ডেশনের কাজ শেষ করতে পারব। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ হয়ে গেছে ৫৩ লাখ টাকার বেশি। রড ও পাথরের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ওপরের তলার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। বিশেষ করে রডের দাম এক লাফে তিন হাজার টাকা বেড়ে গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রডের বাজার ঘুরেও দেখা গেছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নির্মাণকাজের এ অন্যতম প্রধান উপকরণটির দাম প্রতিটনে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাতুয়াইল এলাকার মেসার্স ফরহাদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতিটন রডের দাম ৭৫ হাজার থেকে ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। আরেকটু ভালো মানের রড কিনতে খরচ পড়বে ৮০ থেকে ৮১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ চলতি মাসের শুরুতেও প্রতিটন রড ৭২ থেকে ৭৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ৬৮ হাজার ৫০০ টাকাতেও রড বিক্রি করেছি। যাত্রাবাড়ীর বিসমিল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান মাসুদও জানান, শীতকালীন নির্মাণকাজ বেড়ে যাওয়ায় রডের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দামও। সে জন্যই এখন রডের দাম বাড়তি। দেড় মাস আগে দাম কিছুটা কম থাকলেও রডের দাম এখন বেড়ে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যও বলছে, গত বছরের তুলনায় এখন ৬০ গ্রেডের রড ১৫.৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ৪০ গ্রেডের রডের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভবন তৈরির প্রধান মৌসুম। এ সময়ে আবাসন খাতসহ ব্যক্তিপর্যায়েও ভবন নির্মাণ বেশি হয়ে থাকে।
তবে এবার নির্মাণসামগ্রীর লাগামহীন দামে অনেকেই ভবন নির্মাণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে রডের দাম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিগত ছয় সাত মাসে ইট, পাথর, রড থেকে শুরু করে প্রতিটি নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। এক-দেড় বছরের ব্যবধানে দাম বাড়ার এ হার আরও বেশি। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে রডের দাম। ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে প্রতিটন রডের দাম ৮২ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। ফলে আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বাড়তি ব্যয়ের চাপে অনেক ডেভেলপারদের কাজ এখন মাঝপথেই বন্ধ রয়েছে।
এফবিসিসিআই পরিচালক এবং জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এমডি ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্মাণ খরচ বৃদ্ধির ফলে বিগত ছয় মাসে আমরা ফ্ল্যাটের দাম ১০ শতাংশ বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। এতে বিক্রিও কমে গেছে। ফলে নতুন দূরে থাক, চলমান প্রকল্প শেষ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।-দৈনিক আমাদের সময়