রাঙামাটিতে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ-পিসিসিপি। এজন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি। এসময় সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি জানানো হয়েছে। আজ (সোমবার, ৩০ জুন) দুপুরে রাঙামাটি শহরের বনরূপা পুলিশ বক্সের সামনে এই কর্মসুচি পালন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ। এরআগে কাঠালতলী থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে মানববন্ধনে এসে যুক্ত হয়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ২৩ জুন অনুষ্ঠিত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সভায় ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০’ সংশোধনের লক্ষ্যে ‘নৃ-বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ, ২০২৫ (প্রস্তাবিত)’ বিষয়ে আলোচনা হয়। এসময় সাতটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে ‘জাতি-বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট’ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “আমরা আদিবাসী শব্দটি চাচ্ছি শুধু আমাদের আইডেন্টিফিকেশনের জন্য’।
বক্তারা বলেন- পার্বত্য উপদেষ্টার এই বক্তব্য দ্ব্যর্থবোধক এবং সংবিধানবিরোধী অবস্থানকে উসকে দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: “রাষ্ট্রের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিক হইবে।” একটি দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি কর্তৃক এমন বক্তব্য প্রদান শুধু অনভিপ্রেতই নয়, বরং তা জাতিগত উত্তেজনা এবং বিভাজনের রাজনীতিকে উৎসাহিত করতে পারে।
এসময় পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্ণীতির অভিযোগ তুলে বক্তারা বলেন- আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে অপসারণের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র জনতাকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা সভাপতি মো. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা সভাপতি মো. সোলায়মান, ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক রবিউল ইসলাম, বরকল উপজেলা সভাপতি তসলিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
এসময় সমাবেশ থেকে ৪ দফা দাবি জানানো হয়। এরমধ্যে সংবিধানবিরোধী ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার ও প্রচার বন্ধে সুস্পষ্ট রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা প্রদান করা, কোনো ব্যক্তি যদি দায়িত্বে থেকেই রাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণ হোক সংবিধানিক কাঠামোর ভেতরে—সাংগঠনিক আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে নয়, এবং পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি ও অন্যান্যের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহাবস্থান ও সমবিকাশ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।