কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে গেছে জেলা সদরসহ রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলার নিচু এলাকা। এতে বর্তমানে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়। তবে সরকারিভাবে তালিকা প্রণয়ন চলছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার সকাল থেকে দেখা যায়, রাঙামাটি সদর উপজেলার রিজার্ভমুখ, পুরানবস্তি, জুলুক্যা পাহাড়, রাজদ্বীপ, পাবলিক হেলথ, শান্তিনগর, পুরান বাসস্ট্যান্ড, মানিকছড়ি, রাঙাপানি, আসামবস্তি, বালুখালী, মগবান, জীবতলী, বন্দুকভাঙা, কুতুকছড়ি এলাকার হ্রদ তীরবর্তী নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর পরিস্থিতির শিকার হাজারও মানুষ। শহরের রাঙাপানি-আসামবস্তি সড়কে পানি উঠেছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি বঙ্গলতলী, মারিশ্যা, রূপকারী, খেদারমারা, বাঘাইছড়ি ও আমতলী ইউনিয়নের অনেক গ্রাম ও ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টি ওয়ার্ড পানিতে তলিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কাচালং নদী এবং কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে ওই সব নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার জানান, দুর্গতদের জন্য ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গত লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে সহায়তার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় লোকজনের মাঝে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
লংগদু উপজেলার মাইনী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার ঝরনাটিলা, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়ন, বগাচতর ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনাগাঁওপাড়া, মাইনী ইউনিয়নের এফআইডিসি বড় কলোনি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিলাইছড়ি উপজেলা সদর, ধূপ্পারচড়, বহলতলী, বাঙালকাটা এলাকাসহ নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া জেলার বরকল, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর ও কাপ্তাই উপজেলার নিচু এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুহুল আমিন বলেন, বন্যা কবলিত দুর্গত লোকজনের জন্য জেলায় ২৪৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে খোলা হয়েছে। বাঘাইছড়ি ও লংগদুতে ১৮২টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থাকারীদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পানিবন্দি লোকজনের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা অনুযাযী খাদ্যশস্যসহ ত্রাণ দেওয়া হবে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপৎসীমা অতিক্রম করায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট সর্বশেষ তিন ফুট পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫৮ হাজার কিউসেক পানি ভাটি এলাকার কর্ণফুলী নদীতে নিষ্কাশন হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নির্গমণ হয়ে যাচ্ছে।
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান বলেন, হ্রদের পানি ১০৮ ফুট বা এমএসএল (মীন সী লেভেল) অতিক্রম করে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আড়াই ফুট পর্যন্ত গেট খুলে দেওয়ার পরও পানি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুক্রবার দুপুরের দিকে হ্রদের পানির স্তর বেড়ে দাঁড়ায় ১০৮ দশমিক ৭৫ এমএসএল। হ্রদে সর্বোচ্চ পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট, যা বর্তমানে সব সময় একেবারেই এর কাছাকাছি থাকছে হ্রদের পানির স্তর। ঝুঁকি এড়াতে বাঁধের ১৬টি গেট তিন ফুট পর্যন্ত খুলে দিয়ে পানি ছাড়া হচ্ছে। তিনি ভাটি এলাকার মানুষদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।