সফলভাবে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া বাই সাইকেল যাত্রা শেষ করল রাঙামাটির ছেলে বীর কুমার তঞ্চঙ্গা। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের ওয়াগগা ইউনিয়নের কুক্যাছড়ি গ্রামের এ বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (২৬)।
কৃষক পরিবারের ৫ ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট বীর কুমার। কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন ২০২১ সালে।
এরপর চাকুরী করেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। বেতন পেতেন ১৫-১৬ হাজার টাকা। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট ভক্ত ছিলেন বীর কুমার। নিজেও ক্রিকেট খেলতেন। তার প্রিয় ক্রিকেট খেলোয়াড় মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে উন্নতি করুক এটি বীর কুমারের মনে প্রাণে চাওয়া।
বীর কুমার মনে করেন, মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হলে বাংলাদেশের ক্রিকেট আরো উন্নতি করবে।
প্রতিজ্ঞা করেন এ দাবীটি তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। তার আরেকটি দাবী যেন এদেশের মানুষ রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হয়। রক্তের অভাবে যেন কোন মানুষের মৃত্যু না হয়।
এ দুটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বীর কুমার তঞ্চঙ্গা সিদ্ধান্ত নেন তিনি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত বাই সাইকেল যাত্রা করবেন।
বীর কুমার বলেন, আমি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার দীর্ঘ পথে বাই সাইকেল যাত্রার স্বপ্ন দেখতাম। ভাবতাম আমি জীবনে একবার টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া বাই সাইকেল যাত্রা করব। কিন্তু আমি কোন সাইক্লিস্ট নই। এ যাত্রা করতে হলে সাইকেল চালানো পারদর্শী হতে হবে। এজন্য পরিকল্পনা করি সাইকেল চালানো।
এ সাইকেল চালানোর ফিটনেস পেতে আগের চাকুরীগুলো ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রামে একটি ফুড সাপ্লাইকারী প্রতিষ্ঠানে কেক ডেলিভারী ম্যানের চাকুরী নিই।
এর আগে আমি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোগ্রামে চাকুরি করি। তার আগে বিমান বন্দরে একটি প্রকল্পে চাকুরী করেছি।
ভাবতাম এ চাকুরী করলে আমার স্বপ্ন পুরণ হবে না। সেজন্য এসব চাকুরী ছেড়ে সাইকেলে ডেলিভারী ম্যানের চাকুরীটি নিই। আমার উদ্দেশ্য টাকা আয় করা নয়। উদ্দেশ্য ছিল বাই সাইকেল চালানো ফিটনেস অর্জন করা।
টানা একমাস পুরো চট্টগ্রাম শহরে সাইকেলে করে কেক ডেলিভারী দিয়েছি। যখন আত্মবিশ্বাস আসে আমি পারব তখন চাকুরী ছেড়ে দিয়ে গন্তব্যে হাটি। ১৫ দিনের বেতন না নিয়ে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে শীতকালে বাই সাইকেল যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিই।
গত ২৪ ডিসেম্বর আমি টেকনাফ জিরো পয়েন্ট থেকে আমি সাইকেল যাত্রা শুরু করেছি। যাত্রা পথে আমার বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবের বাসায় রাত কাটিয়েছি। তাদের বাড়িতে খেয়েছি।
এছাড়া বিভিন্ন সাইক্লিস্ট গ্রুপ আমাকে সহযোগীতা করে। এতে আমার খরচ কম হয়। যাত্রার ১২ তম দিনে আমি পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ার বাংলাবান্দায় জিরো পয়েন্টে পৌছি।
এ যাত্রায় তার ৫ হাজারের মত টাকা খরচ হয়েছে বলেন বীর। তবে সহপাঠী ও সাইক্লিস্ট গ্রুপের সহযোগীতা না পেলে খরচের পরিমাণ আরো বাড়তে পারত বলে মনে করেন বীর কুমার।
বীর কুমার বলেন, আমার এ দাবীর বিষয়ে মাশরাফি জানেন কিনা জানি না। তবে মাশরাফির মামা কল করে নড়াইল যেতে অনুরোধ করেছিলেন। আমি সেখানে যাব। বাংলাবান্দা থেকে আমি ট্রেনে করে ঢাকায় যাব। সুযোগ পেলে ঢাকায় মাশরাফির সাথে দেখা করব।
বীর কুমার আরো বলেন, আমি নিয়মিত রক্তদাতা এবং কাপ্তাই ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।