২৮বছর পরও লংগদু পাকুয়াখালী ৩৫ কাঠুরিয়ার হত্যার বিচার পায়নি নিহতের স্বজনেরা। বিচারের বাণী নীরবে কাঁদছে! নিহতের স্বজনেরা এখনো বিচারের আশায় দিন গুনছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোন রকম মাথা ব্যাথা ছিল না বিদায়ী সরকারগুলোর। বিদায়ী আওয়ামী লীগের ১৫ বছর শাসন আমলে একটি বারও ২৮ জন কাঠুরিয়ার হত্যার খোঁজ খবর নেননি। ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার মাঝা-মাঝি গহীন অরণ্যে পাকুয়াখালী নামক স্থানে ৩৫ জন বাঙালি কাঠুরিয়াকে পূর্বের পরিকল্পনায় হত্যা করে তৎকালিন অস্ত্রধারী শান্তি বাহিনী।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২৮ বছর পরও এই হত্যাকান্ডের বিচার পায়নি নিহতের স্বজনেরা। সোমবার সকালে ৩৫ বাঙালি কাঠুরিয়া গণহত্যা দিবস উপলক্ষে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালি নাগরিক পরিষদ বিশেষ দোয়া ও মাহফিলের আয়োজন সহ সংক্ষিপ্ত স্মরণ সভার আয়োজন করে।
এই হত্যাকান্ডের কথা মনে পড়লে এখনো কেঁদে উঠে লংগদু উপজেলার মানুষ ও নিহতের স্বজনেরা। এই ভাবে হাজার হাজার বাঙালির জীবন থেমে গেছে এই পাহাড়ে! যদিও পাহাড়ে তৎকালিন শান্তি বাহিনীর নাম এখন কেউ মূখে উচ্চারণ করেনি। তবে তাদের ভয়াবহ দোসর রয়ে গেছে পাহাড়ে। আগে ছিল শসস্ত্র অস্ত্রধারী জেএসএস শান্তি বাহিনী। আর এখন পাহাড়ে শসস্ত্র অস্ত্রধারী ৪-৫ বাহিনী রয়েছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট পাহাড়ের মানুষ। নতুন করে দেখা দিয়েছে শসস্ত্র সংগঠন কেএনএফ। এসব দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীদের কাজ পাহাড়ে চাঁদাবাজি, খুন, গুম ও অপহরণসহ সকল ধরনের অপকর্ম করা।
নিহত কাঠুরিয়া হেলাল উদ্দিন, জোহর আলীও মোস্তফার স্বজনেরা বলেন, তৎকালিন সময়ে আমাদেরকে অনেকে আশারবাণী শুনিয়েছিলেন। অধ্যবধি কেউ আর এই হত্যাকান্ডের খবর নেননি। যার ক্ষতি হয় সে বুঝে তার যন্ত্রণা কত। ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহতদের পরিবার বর্গ বলেন, দেশের প্রচলিত নিয়মে আমরা ৩৫ বাঙালি কাঠুরিয়া হত্যার বিচার চাই। আমরা অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের কাছে নতুন করে তদন্তপূর্বক এই ৩৫ বাঙালি হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি। সাথে সাথে নিহত পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতি পূরণ দাবি করছি। ওই দিনের মর্মান্তিক ঘটনা ছিল হৃদয় বিধারক। অনেক নির্যাতন ও কষ্ট দিয়ে সন্ত্রাসীরা ৩৫ জন কাঠুরিয়াকে হত্যা করেছে। ৩৫জন কাঁঠুরিয়ার মধ্যে ২৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে। বাকি ৭ জনের লাশ আজও পাওয়া যায়নি। হত্যাকান্ডের ২৮ বছর ধরেই দোয়া মাহফিল ছাড়া আর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজম বলেন, মানবাধিকার এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে পাবর্ত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই পাকুয়াখালী গণহত্যাসহ পাহাড়ে সকল বাঙালি গণহত্যাকান্ডের তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় পাবর্ত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কোনোদিনই সফল হবে না। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও সম্প্রীতি রক্ষায় পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র অবৈধ অস্ত্রধারী ও দেশদ্রোহী সন্ত্রাসী সংগঠনের সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ৩৫ জন বাঙালি কাঠুরিয়া হত্যার তদন্তপূর্বক বিচার করতে হবে।