উক্যসাইনের বাড়ি রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গাহালিয়া ইউনিয়নের কলেজ পাড়ায়। তার বাবা উসাইমং মারমা ও মা ডেজিপপ্রু মারমা দুজনই স্কুল শিক্ষক। বাবা বাঙ্গালহালিয়া আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আর মা বান্দরবানের রুমা উপজেলার ক্যপথেংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মা ও বাবার এক মাত্র সন্তানের মরদেহ নিতে ঢাকায় গেছেন। মঙ্গলবার রাতেই উক্য সাইনের মরদেহ বাঙ্গালহালিয়ায় পৌছাবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। ডেজিপ্রæ মারমা,বাবা উক্যসাই মারমা
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বাঙ্গালহালিয়ার কলেজ পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে উক্যসাইনের বাড়ীতে শোকের মাতম চলছে। বাড়ীতে রয়েছেন উক্যসাইনের দাদা বয়োবৃদ্ধ কংহ্লাপ্রæ মারমা, দাদি ক্রাতুমা মারমা ও পিসি হ্লামাচিং মারমা। দাদা-দাদীর একমাত্র নাতি ও পিছি তার ভাইয়ের ছেলেকে হারানোর কান্না থামছে না। তাদেরকে সাত্বনা দেয়ার কেউ নেই। পাড়ার লোকজনও তার এ অকাল ও হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে গভীর শোকাহত ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
কান্নাজনিত কন্ঠে ক্যউসাইনের দাদা কংহ্লাপ্রæ মারমা বলেন, তার নাতি তাকে খুব ভালো বাসতো। সে অত্যন্ত মেধাবি ছিল। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে আমরা কি নিয়ে বাচবেন কিছুই বলতে পারছি না বলেন তিনি।
উক্য সাইনের পিসি হ্লামাচিং মারমা জানান, ভাইয়ের ছেলের মরদেহ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে দাদা ও ভাবি ঢাকা থেকে বাঙ্গাহালিয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন। বাঙ্গালহালিয়ায় পৌছাতে রাত ৭/৮ টা বাজতে পারে। ভাইয়ের ইচ্ছে তার ছেলের মরদেহ বাড়ীতে একরাত রেখে পরদিন দাহ করার। তিনি আরো জানান, ক্যউ সাইন সর্বশেষ সাক্রাইন উৎসবে (পহেলা বৈশাখ) বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিল। গত আষাঢ়ী পূর্নিমার দিনেও মোবাইলে উক্যসাইনের সাথে তার কথা হয়েছিল। তার সাথেই এটাই শেষ কথা হবে ভাবতে পারিনি। তবে এমনিতে প্রতিদিন উক্যসাইন মাবাবাকে কল দিত।
তিনি আরো জানান, উক্যসাইন খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। বাঙ্গাহালিয়ার নার্সারী স্কুলে পড়া শেষে তাকে সেন্টপাবলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্ষন্ত পড়েছিল। ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল তার ছেলেকে ক্যাডেট স্কুলে পড়াবে এজন্য ঢাকার মিরপুরে একটি কোচিং সেন্টারেও এক বছর কোচিং করায়। তবে তার দুর্ভাগ্য ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় ঠিকতে পারেনি। তাই এ বছর তাকে মাইলষ্টোন স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সে স্কুলের হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করতো। তিনি আক্ষেপ করে বলেন তার ভাইয়ের ছেলে উক্যসাইন বোধয় খুবই ক্ষন জন্মা একজন। এতো অল্প বয়সে তাকে যে এভাবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হারাবো আমরা কোন দিনই কল্পনা করতে পারিনি।
নিহত শিক্ষার্থী উক্যসাইন মার্মার বাবা উসাই মং জানান, বুধবার বাঙালহালিয়ায় নিজ গ্রামে তার ছেলের দাহ ক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তাঁর আত্মীয় -স্বজন শুভাকাঙ্খীদেরকে উক্যসাইন এর দাহক্রীয়ায় অংশ নিয়ে পূণ্যরাশি দান করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।রাঙামাটি রাজস্থলী উপজেলার
বাঙালহালিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার আদোমং মারমা জানান, শুনেছি ছেলেটা রাতে মারা গেছে। তার মরদেহ নিয়ে আসা হচ্ছে। ছেলেটি সম্পর্কে আত্মীয় হয়। এ মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা সবাই শোকাহত।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (২২ জুলাই) আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি প্রশিক্ষণ বিমান নয়,যুদ্ধ বিমান ছিল বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭জনে।