খাগড়াছড়ি জেলা সমবায় কার্যালয় যেন ঘুষের হাট। ঘুষ আর অনিয়মই যেন এই কার্যালয়ে নিয়ম।
গত ১৩ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৪ জুলাই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আশীষ কুমার দাশ।
এই কমিটিতে জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপ-সহকারী নিবন্ধক উৎপল চাকমাকে দলনেতা করে দীঘিনালা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা এবং মহালছড়ি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনকে সদস্য করা হয়। এই তদন্ত কমিটি ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময় পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি।
এদিকে তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী মো. সোহেল। মো. সোহেল বলেন, তদন্ত কমিটির প্রধান উৎপল চাকমা ১৮ জুলাই আমাকে জেলা সমবায় কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে জেলা কর্মকর্তা এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তা জহির উদ্দিন সহ সবাই উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলেন, ‘আমি কি চাই? আমার সমিতির নিবন্ধন হলেই তো হলো!’ এজন্য তারা সদর উপজেলা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই মর্মে একটি কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি স্বাক্ষর দিতে না চাইলে তারা খুবই জোরাজোরি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে কৌশলে আমি স্বাক্ষর না দিয়ে কোনমতে অফিস থেকে পালিয়ে আসি।’
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি প্রধান উৎপল চাকমা বলেন, ‘আমি যেহেতু তদন্ত কমিটির প্রধান সেহেতু তদন্তের স্বার্থে সোহেলকে অফিসে ডেকেছিলাম। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য একটি লিখিত প্রতিবেদনে তাকে স্বাক্ষর দিতে বলেছিলাম। সে স্বাক্ষর দেয়নি। কিন্তু সে যে অভিযোগ করেছে সেটি সঠিক নয়।’
গত জুন মাসে সমবায় সমিতির নিবন্ধন করতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ে যান মো. সোহেল নামে এক যুবক। আজ কাল করে কিছুদিন সময় ক্ষেপন করার পর উপজেলা কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন জানান নিবন্ধন পেতে লাগবে ৩০ হাজার টাকা। বিষয়টি কাউকে জানালে বা কোনরকম তদবির করলে ফল উল্টো হবার হুমকিও দেওয়া হয়। এরপর দর কষাকষি করে ২৫ হাজার টাকায় রাজি হন সমবায় কর্মকর্তা। মূলত ভ্যাটসহ সমবায়ের নিবন্ধন ফি হচ্ছে মাত্র ৩৪৫ টাকা।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. সোহেল বলেন, আমরা ‘উত্তর গঞ্জপাড়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি’ নামে একটি সমিতি করি। এটি নিবন্ধনের জন্য আমরা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জেলা কর্মকর্তা, অফিসের স্টাফ এবং অফিসের খরচ আছে বলে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবী করেন। এরপর আমরা আবার গিয়ে টাকা কম নেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি ২৫ হাজার টাকায় রাজি হন। প্রথমে আমার কাছ থেকে তিনি ১৫ হাজার টাকা নগদ গ্রহণ করেন। এরপর আরও ১০ হাজার টাকার জন্য আমাকে বারবার কল দিতে থাকেন।
এ বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি আমার ফাইল সহ আমার ১৫ হাজার টাকা ফেরত দেন এবং আমাকে বলেন যে তোমার রেজিষ্ট্রেশন হবে না। কি করতে পারো করো’। শুধু মো. সোহেলই নন সমিতির নিবন্ধন করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন উপজেলার অসংখ্য মানুষ। কোন প্রতিকার না পেয়ে শেষে কর্মকর্তাদের ঘুষের দাবি মেনে নিয়েই সমিতির নিবন্ধন নিচ্ছেন অনেকে।
বিষয়টি জানতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন ২৫ হাজার টাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এ টাকা ঘুষের টাকা নয়। অফিসের অনেক ফাইলপত্র এবং কাগজ কিনতে আমাদের অনেক টাকা প্রয়োজন হয়। তাছাড়া আমাদের অফিসের স্টাফ এবং জেলা কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে ফাইল স্বাক্ষর করাতে হয়। সরকারি ফি দিয়ে আর কি হবে।’
খাগড়াছড়ি জেলা সমবায় কর্মকর্তা আশীষ কুমার দাশ বলেন, অভিযোগ পেয়ে গত ১৪ জুলাই আমি অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে শোকজ করেছি। এছাড়াও আমরা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ১৯ তারিখের মধ্যে তদন্ত কমিটির সুস্পষ্ট মন্তব্যসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। সময় শেষ হয়েছে কিন্তু প্রতিবেদন আমি এখনো পায়নি। আর ভুক্তভোগী সোহেল জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টার যে অভিযোগ করেছে সেটি সঠিক নয়।