পার্বত্য জেলা রাঙামাটির জুরাছড়ি সুবলং শাখা বন বিহারে দেশের সর্ববৃহৎ “সিংহশয্যা” ১২৬ ফুট বুদ্ধমূর্তির উদ্বোধনটি কেন্দ্র করে তিন দিন ব্যাপী নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন শেষ হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) তিন দিন ব্যাপী নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শেষ দিনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দূর দূরান্ত থেতে আগত হাজারো বৌদ্ধ পূর্ণাথী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, জুরাছড়িতে যে বুদ্ধমূর্তি উদ্বোধন করা হলো। এটা আমি মনে করি জুরাছড়ি তথা রাঙামাটিতে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করবে। সারা দেশে যে পর্যটক এবং বাইরে থেকেও যারা আছে তারাও জুরাছড়ি কেন্দ্রিক একটা পর্যটনের একটা নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। সেটা কেন্দ্রে করে এখানে আমাদের জুরাছড়ি থানা এবং উপজেলা প্রশাসন আছে। সেই প্রেরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে চাই। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার আছে সেটা অবশ্যই আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে নিবো।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি আমাদের রাঙামাটি জেলা জুরাছড়ি উপজেলায় স্থাপিত হয়েছে। এটি আমাদের রাঙামাটির পার্বত্য জেলা তথা জুরাছড়ি উপজেলাকে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের কাছে নতুন করে তুলে ধরবে। আমি মনে করি আমাদের রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় রিলিজিয়াস ট্যুরিজম যেটা আছে সেটার বিকাশ লাভ করবে। এবং এর ফলে মহামানব গতম বুদ্ধের যে শান্তির বাণী অহিংসার বাণী সেটা আরোও চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, আমি এই বৌদ্ধমূর্তিটি একটি সম্প্রীতির প্রতীক মনে করি। যেহেতু আমাদের বুদ্ধ বলেছিলেন অহিংসা ধর্ম। অহিংসা হচ্ছে শান্তির ধর্ম এবং বুদ্ধ সেটা চেয়েছিলেন। ১২৬ ফুট এই বুদ্ধমূর্তি হওয়ার ফলে আমি মনে করি শুধু জুরাছড়ি না, রাঙ্গামাটি জেলা না, আমাদের তিন পার্বত্য জেলা তথা বাংলাদেশ সহ ছাড়া বিশ্বের শান্তি বয়ে আনবে এটা আমার বিশ্বাস।
এই বুদ্ধমূর্তি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে ১৬ নভেম্বর ও শেষ হলো আজ ১৮ নভেম্বরে। বুদ্ধমূর্তি উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মানের তিন দিন ব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে থাইল্যান্ড থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ পূনার্থী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পরমপূজ্য বনভন্তের স্মৃতি স্মারক হিসেবে জুরাছড়ি উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর দায়ক দায়িকা ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ২০১২ সালে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ও দীর্ঘতম সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে এবং ২০২১ সালের শেষের দিকে এসে নির্মাণকাজ শেষ হয়।
বিহার সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বুদ্ধমূর্তির স্থপতি ছিলেন বিশ্বজিৎ বড়ুয়া, প্রতিপদ দেওয়ান ও দয়াল চন্দ্র চাকমা। প্রকৌশলী ছিলেন তৃপ্তি শংকর চাকমা এবং অঙ্কনের দায়িত্বে ছিলেন বিমলানন্দ স্থবির।
উল্লেখ্য, শ্রাবক বুদ্ধের পরিণির্বাণ প্রাপ্ত সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের স্মরণে জুরাছড়ি সুবলং শাখা বনবিহারে এ বুদ্ধমূর্তিটি নিমার্ণ করা হয়। এশিয়া মহাদেশে সর্ববহৎ এই বৌদ্ধ মূর্তিটি নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে জানা যায়। বুদ্ধমূর্তিটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বিহার কর্তৃপক্ষ।