বার্মা পঞ্জিকা অনুসারে আজ নববর্ষের ১ম দিন। এর আগে থেকে দিনগুলোতে মারমারা বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধমুর্তিগুলো স্নান করান।
মারমারা বিশ্বাস করেন বুদ্ধের স্নান করা পানির সংস্পর্শে এসে পৃথিবীর সকল পানি পবিত্র হয়। এ পবিত্র পানি ছিটিয়ে পৃথিবীতে ও সমাজকে পাপমুক্ত করে পবিত্র পৃথিবীর প্রার্থনা করেন মারমারা।
শনিবার সকালে এ পবিত্র পানি ছিটিয়ে কাপ্তাই চিৎমরমে হয়ে জল জল ছিটানোর উৎসব। চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার সংলগ মাঠে এ উৎসবে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মারমা শিল্পীরা সাংগ্রাই মা গানে সুরে বিমোহিত করেন জল উৎসব দেখতে আসা দর্শনার্থীদের।
সাংগ্রাইং মা ঞি ঞি ঞা ঞা রি, কাজাই গাই পামে ও ঞিং ওকো রো ও এম্রে ম্রিই রোগাই লাগাই চুও প্য গাই মেলে’ মারমা এ গানের অর্থ দাঁড়ায়- ‘এসো এসো সাংগ্রাঁইতে এক সঙ্গে মিলে মিশে জলকেলিতে আনন্দ করি’।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহার এর সাংগ্রাই রিলং পোয়ে: উদযাপন কমিটির আয়োজনে শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সাংগ্রাই রিলং পোয়ে: উৎসবঃ ২০২৩।
এই উপলক্ষে এদিন সকাল ১০ টায় বিহার সংলগ্ন মাঠ হতে বর্ণাঢ়্য র্যালি বের করা হয়। বাদ্যের তালে তালে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে র্যালিতে শত শত মারমা সম্প্রদায়ের নর নারী অংশ নেন।
এছাড়া উৎসব উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা হতে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে।
সাংগ্রাই রিলং পোয়ে: উৎসবে অংশ নিতে আসা কাপ্তাইয়ের মারমা শিল্পী শোয়ে মে চৌধুরী জানান, সাঁগ্রাই উৎসব, আমাদের প্রাণের উৎসব। বছরের এই দিনে আমরা সকলে মিলিত হয়, আনন্দ করি।
উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক ক্যচিং প্রু মারমা জানান, মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে এখন উৎসবে আনন্দে মাতোয়ারা সমগ্র চিৎমরম এলাকা। উৎসবকে ঘিরে নানা বর্ণের মানুষের আগমন ঘটেছে এই এলাকায়।
উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব পাই সুই উ মারমা জানান, এই সাংগ্রাই জল উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি, কৃষ্টিকে তুলে ধরছি। সকল ভেদাভেদ ভূলে আমরা নতুন বছরকে বরন করে নিব।
এদিকে সাংগ্রাই রিলং পোয়ে: উৎসব উপলক্ষে বিহার সংলগ্ন মাঠে শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ্যাডভোকেট হ্লা থোয়াই মারমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন , কাপ্তাই ৪১ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সাব্বির আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ। আর সামাজিক উৎসব এর মাধ্যমে এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলা যুগ্ম জজ মিল্টন হোসেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, , কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে , রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা, চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা( ওসি) শফিউল আজম বাবু ও চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক ক্যচিং প্রু মারমা।
আলোচনা সভা শেষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন স্থানীয় মারমা শিল্পীরা।
মূলত ১৫ এপ্রিল মূল সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন হলেও গত ১৩ এপ্রিল হতে চিৎমরম এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা।
দূর দূরান্ত হতে হরের রকম পণ্য নিয়ে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়েছেন এই উৎসবে।
আগামীকাল ১৬ এপ্রিল রাজস্থলীর বাঙালহালিয়ায় হবে কেন্দ্রীয় জল উৎসব।