রাঙামাটি জেলার সর্বোচ্চ পাহাড়গুলোর মধ্যে একটি সাজেক ভ্যালী। ইতিহাসে সাজেক ভ্যালী বন্যায় কবিলত হয়েছে এ নজির নেই। তবে গত অর্থ বছরে সে সাজেক ভ্যালীতে নির্মিত কংলাক সপ্রা বিদ্যালয়টি পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করিয়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
শিক্ষা অফিসের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বন্যায় পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত কংলাক সপ্রা বিদ্যালয়কে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বরাদ্ধ দেয় ২ লাখ টাকা।
শুধু কংলাক নয়, কংলাকের মত আরো ৬টি বিদ্যালয় ২ লাখ করে বরাদ্ধ পেয়েছে। এগুলো হল কদমতলি সপ্রা বিদ্যালয়, সারোয়াতলি সপ্রা বিদ্যালয়, মন্দিরাছড়া সপ্রা বিদ্যালয়, রেতকাবা সপ্রা বিদ্যালয়, শিজক মন্দিরাছড়া সপ্রা বিদ্যালয়, শিষক দোজর সপ্রা বিদ্যালয়। এ ছাড়া ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ পেয়েছে তাংগুমাছড়া সপ্রা বিদ্যালয়।
রাঙামাটি জেলায় কর্মরত এক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, কোন বিদ্যালয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি(এসএমসি)র সাথে আলোচনা করে তাৎক্ষনিক তা সংস্কার ও মেরামত করা হয়। উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে সংস্কার খচর নির্ধারণ করে বিল ভাউচার উপজেলা হিসাব শাখায় জমা দিতে হয়। এরপর বারাদ্ধ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। কোন কাজ না করে ভূয়া বিল ভাইচার তৈরি করে বরাদ্ধের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুর্গম এলাকার স্কুলগুলো বেচে নেওয়া হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলায় এতগুলো বিদ্যালয় ইমার্জেন্সী তহবিল থেকে বরাদ্ধ পেল এটি ভাববার বিষয়। রাঙামাটি সদর উপজেলায় অনেক স্কুল আছে এগুলোতে সংস্কারের প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্ধে দেওয়া হচ্ছে না।
কংলাক সপ্রা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো নাজিম উদ্দিন বলেন, আমার বিদ্যালয়টি পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে আমার টাকার প্রয়োজন। কারণ বিদ্যালয়ে সীমানা দেওয়াল না থাকায় পর্যটকবাহী গাড়ির চালকরা রাতে স্কুলে ঢুকে রাত্রী যাপন করে। বিষয়টি আমি ইউইও স্যারকে কে বলেছি। তিনি বিল ভাইচার জমা দিতে বলেছেন। দিয়েছি। শুনেছি টাকা এসেছে। টাকা আসলে কাজ করব। তবে এটি ঠিক আমাকে কোন টাকা দিতে হয়নি।
সারোয়াতলি সপ্রা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুপায়ন চাকমা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।আমার স্কুলটি পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কোথাও আবেদন করিনি। এরপর নেটওয়ার্ক সমস্যা বলে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন। পরে একাধিবার কল করলেও তিনি কল রিসিভি করেননি।
সারোয়াতলি সপ্রা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্বর্ন আলো চাকমা বলেন, বিদ্যালয়টি পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। মাঠের সংস্কার প্রয়োজন। নতুন ভবন নির্মানের জন্য আবেদন করা হয়েছে সেটি জানি। তবে নতুন ভবন হয়নি। ২ লাখ টাকা বরাদ্ধ এসেছে শুনেছি। শিগগির উত্তোলন করব। টাকা পেলে কাজ করব।
বাঘাইছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার জয়নাল আবেদিন বলেন, কংলাক বিদ্যালয়ের বিষয়টি হচ্ছে স্কুলের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এটি সংস্কার করতে টাকার দরকার ছিল। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বৃষ্টিতে স্কুলগুলোর অবকাঠামো বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এগুলো সংস্কার বা মেরামতের জন্য কোথাও কোন বরাদ্ধ পাচ্ছিল না স্কুলগুলো। সেজন্য আমি চাহিদা পাঠিয়েছি।
এটা ঠিক সবাই টাকা নিয়ে গেছে। তাদের প্রত্যকের কাছে অঙ্গীকার নামা রেখেছি। তারা এ টাকা দিয়ে কাজ করবেন বলে আমাকে অঙ্গীকার দিয়ে গেছেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা বলেন, পাহাড়ি ঢলে ৮টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ বিষয়টি আমি টোটেলি অবগত নয়। পাহাড়ি ঢলে কংলাক স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটি কল্পনার বাইরে।