পার্বত্য চট্টগ্রামকে বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের মহাসড়কে তুলতে হলে দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন আইন শিথিল করা প্রয়োজন। বিদ্যমান আইনে চলতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে না।
যেসব স্থানে বিদ্যালয় নেই সেখানে বিদ্যালয় নির্মাণ, পাঠদান ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করা দরকার। না হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আরো পিছিয়ে পড়ে থাকবে।
রবিবার সকালে রাঙামাটি পর্যটন কম্প্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে রাঙামাটি জেলার বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ন সংক্রান্ত দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন রাঙামাটির বিশিষ্ট জনেরা।
পরিকল্পনা প্রনয়ন সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি সংসদীয় আসনের সদস্য দীপংকর তালুকদার।
কর্মশালায় বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগলিকগত সমস্যার কারণে নানান সমস্যা এখনো সমাধান রা সম্ভব হয়নি। সাজেক, বিলাইছড়িসহ অনেক এলাকায় এখনো বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। অনেক এলাকা এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় অনেক এলাকা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যালয় নেই।
বক্তারা বলেন, বৃটিশ শাসনামল, পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী পার্বত্য অঞ্চল সব দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিল। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এ এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে মুল স্রোতধারায় আনার জন্য এ এলাকার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।
সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে রাঙামাটি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত ও পরামর্শ নিতে রোববার দিনব্যাপী এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালার আয়োজন করে এ পার্বত্য জেলা পরিষদ।
প্রধান অতিথি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, অবৈধ অস্ত্রধারীদের কারণে পাহাড়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড বিঘœ ঘটছে বলে দাবি করে বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করতে হবে। অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, পাহাড়ে এখনো অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র দিয়ে প্রতিনিয়ত নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। মানুষকে জিম্মি করে অপহরণ ও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্রধারীদের তৎপরতায় পাহাড়ে অশান্তি বিরাজ করছে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে হলে অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাহাড় থেকে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল কিছুই প্রতিবাদ করছে না। তবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃক্সখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে চাঁদাবাজি কমে আসছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দীপংকর বলেন, সম্প্রতি ভিন্নখাতে উদ্দেশ্য হাসিলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রী দ্বিপিতা চাকমাকে অপহরণ করে অবৈধ অস্ত্রধারীরা। কিন্তু আইনশৃক্সখলা বাহিনীর বলিষ্ঠ তৎপরতায় পরে দ্বিপিতাকে উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এজন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে যে কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে গেলে নানান কথাবার্তা ওঠে। এখানে রাস্তা করলে গাছ কাটতে হবে, পাহাড় কাটতে হবে। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এসব নিয়ে নানা মহলে নানা কথাবার্তা তোলা হয়। তিন পার্বত্য জেলার ২৬ উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তা নির্মাণ করে তিন পার্বত্য জেলাকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আনা হয়েছে। বর্তমান সরকার পাহাড়ের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। সরকারের এসব চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে অবৈধ অস্ত্রধারীদের তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
সকালে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সে মিলনায়তনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনীতে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের সদস্য অংসুই ছাইন চৌধুরী।
বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনার ধারণাপত্র উপস্থাপন করেছেন পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরনেন্দু ত্রিপুরা।
এছাড়া বিভাগীয় প্রধানদের মধ্যে সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী, উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা চৌধুরী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগীছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা বক্তব্য দেন।
কর্মশালায় রাঙামাটি জেলার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও কর্মকর্তা, নারী উদ্যোক্তা, সাংবাদিক প্রতিনিধিসহ প্রায় দেড়শ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নেন।
কর্মশালায় বলা হয়, সরকারি উন্নয়নের মহাসড়কে রাঙামাটি জেলাকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হলে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পার্বত্য জেলা পরিষদে সরকারের ৩০টি বিভাগ ও দপ্তর হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব বিভাগ ও দপ্তরের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এ অঞ্চলের টেকসই এবং প্রবৃদ্ধির জন্য একটি সমšি^ত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করেছে। পরে ৭টি গ্রæপে ভাগ হয়ে দলীয় কাজে অংশ নেন উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভাগীয় কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
এসব দলীয় কাজের মধ্য দিয়ে কৃষি ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা সুবিধাসহ সামাজিক অবকাঠামো উন্নত করা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জনস্বাস্থ্য , যুব ও নারী উন্নয়ন, যোগাযোগ, সংস্কৃতি ও পর্যটন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিস্তারিত মতামত নেওয়া হয়েছে।