বুধবার , ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. জাতীয়
  2. রাঙামাটি
  3. খাগড়াছড়ি
  4. বান্দরবান
  5. পর্যটন
  6. এক্সক্লুসিভ
  7. রাজনীতি
  8. অর্থনীতি
  9. এনজিও
  10. উন্নয়ন খবর
  11. আইন ও অপরাধ
  12. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
  13. চাকরির খবর-দরপত্র বিজ্ঞপ্তি
  14. অন্যান্য
  15. কৃষি ও প্রকৃতি
  16. প্রযুক্তি বিশ্ব
  17. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
  18. শিক্ষাঙ্গন
  19. লাইফ স্টাইল
  20. সাহিত্য
  21. খোলা জানালা

আমার দেখা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

প্রতিবেদক
পাহাড়ের খবর ডেস্ক।
অক্টোবর ২৫, ২০২৩ ৫:১৯ অপরাহ্ণ

বাবার চাকুরীর সুবাদে আমরা তিনভাই বাবা-মাসহ তখন থাকতাম চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকার ১নং জয়নগরে। পড়াশুনা করতাম প্রবর্তক বিদ্যাপীঠে। তখনকার সময়ে চট্টগ্রাম শহরে মাত্র গুটিকয়েক চাকমা পরিবার চাকুরী সূত্রে বসবাস করতেন।

আমার বাবা (অমিয় প্রকাশ তালুকদার) চাকুরী করতেন শহর থেকে প্রায় ৫০ কি.মি দূরে অবস্থিত বাড়বকুন্ডে তখনকার পাকিস্তান কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যার নাম বদলে হয় চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স এবং তা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাট্রিজ কর্পোরেশনের অধীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বাবা প্রতিদিন সড়কপথে অথবা রেলপথে শহর থে‌কে চাকুরীস্থলে আসা যাওয়া করতেন।

৭০ এর জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে সারা পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভের পর পাকিস্তান সরকার যখন আওয়ামী লীগকে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করতে দিতে তালবাহানা শুরু করে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলন দিনদিন জোরালো হয়ে উঠতে শুরু করে। পূর্ববাংলায় চলমান উত্তাল আন্দোলনের মুখে ১লা মার্চ ১৯৭১ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিতের ঘোষনা দেয় এবং জেনা‌রেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর নিযুক্ত করে। বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলায় ৫ ও ৬ মার্চ সর্বাত্মক হরতাল আহ্বান করেন। এরপর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের পর বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলন আরও বেশী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে।

আমার বাবা-মাও তখন আমাদের নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুঃচিন্তায় পড়েছিলেন। এমনিভাবে ২৫শে মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানী সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র হামলা শুরু করে। সেদিনই সন্ধ্যায় রেডিওর খবর থেকে জানা গেল যে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের চলমান আলোচনা বৈঠক কোন মিমাংসা ছাড়াই ভেঙ্গে গিয়েছে এবং ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো তাঁদের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে আলোচনা বৈঠক ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য এককভাবে বঙ্গবন্ধুর উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে গেছে ওরা। আসলে আলোচনা বৈঠকের আড়ালে তখন পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমাদের বাসায় তখন ঢাউস আকৃতির একটি ট্রানজিষ্টর রেডিও ছিল। তখনকার রেডিওগুলো প্রায়ই সব বড় আকারের ছিল। টেলিভিশন সেট এখনকার দিনের মত ঘরে ঘরে ছিল না। মুষ্টিমেয় কয়েকটি জায়গায় ছিল। ঢাকায় আলোচনা বৈঠক ভেঙ্গে যাওয়ার সংবাদটি প্রচারের পর পাড়ার মুরব্বীদের আলোচনায় বুঝতে পেরেছিলাম পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানীদের হামলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে এম. ভি. সোয়াত নামে সৈন্যসহ অস্ত্র বোঝাই একটি পাকিস্তানী জাহাজ এসে ভিড়েছিল। এই জাহাজের অস্ত্র খালাস করা নিয়ে গত কিছুদিন থেকে চট্টগ্রাম শহরে তীব্র উত্তেজনা ছিল। অস্ত্র খালাস করা নিয়ে স্থানীয় বাঙ্গালীদের সাথে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রতিদিনই সংঘর্ষ হচ্ছিল।

পাকিস্তানীদের সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে অনুমান করতে পেরে পাড়ার সবাই মিলে পরামর্শ করলেন যে, আজ রাতের মধ্যে যদি কোন কিছু ঘটে তাহলে পার্শ্ববর্তী শান্তনু চক্রবর্তীদের পাকা দালানে আশ্রয় নেওয়াই উত্তম হবে। সন্ধ্যার পরপরই বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেলেও রাত প্রায় ১১টার পর থেকে সত্যি সত্যি চারিদিকে পাকিস্তানীদের ব্যাপক মর্টার শেলিং আরম্ভ হয়। চারিদিকে প্রচন্ড গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। আর রাতের আকাশে দেখেছিলাম শুধু আগুনের ফুলকি। বাবা আর দেরী না করে আমাদের নিয়ে শান্তনু চক্রবর্তীদের ঐ পাকা দালানে আশ্রয় নিলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখেছিলাম পাড়ার আরও অনেকে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। দু’টি বন্দুক নিয়ে কয়েকজনকে পাহারাও দিতে দেখেছিলাম। বাইরে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে কানে তালা লাগার উপক্রম। এমন সময় সম্ভবত মর্টার শেলিং এর দুটি গুলি এসে ঐ দালানে আঘাত হেনেছিল। হঠাৎ রুমটিতে বারুদের তীব্র ঝাঝালো গন্ধ আর ধোয়া ছড়িয়ে পড়েছিল যার রেশ অনেকক্ষণ ধরে ছিল। ‌নিশ্বাস নি‌তে কষ্ট হ‌চ্ছিল। এভাবেই আস্তে আস্তে ভোর হল। ভোর হওয়ার সাথে সাথে গোলাগুলির তীব্রতাও কমে এসেছিল।

চারিদিকে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়লে আমরাও নিজেদের বাসায় ফিরে এসেছিলাম। পরদিন অর্থাৎ ২৬শে মার্চ সকাল হওয়ার পর বাবা ঠিক করলেন চট্টগ্রাম শহরে নিরাপদে আর থাকা সম্ভব নয়। আমাদের বাড়ী রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। তিনি প্রথমে গেলেন চকবাজারে বাজা‌রের কাছাকা‌ছি আমার তুংলি পিসি( ডাঃ কিশলয় চাকমার মা) দের বাসায়। আমরা চট্টগ্রাম শহরে তখন ভাড়া বাসায় থাকলেও পিসিদের বাসাটি ছিল নিজস্ব। বড় পাকা টিনশেড বাসা। ঐ সময় পিসাবাবু খগেন্দ্র লাল চাকমা তখন পাকিস্তান পুলিশ বিভাগে ইন্সপেকটর হিসাবে কুমিল্লায় কর্মরত ছিলেন। তি‌নি ২নং সেক্ট‌রের সহ-সেক্টর কমান্ডার বীর মু‌ক্তি‌যে‌াদ্ধা মেজর এ‌টিএম হায়দা‌রের সা‌থে মি‌লে কু‌মিল্লার ই‌লিয়টগঞ্জ ব্রীজ‌টি ধ্বংস ক‌রে দি‌য়ে‌ছি‌লেন। পরে চাকুরীতে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় কুমিল্লায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হা‌তে ‌তি‌নি নির্মমভা‌বে শহীদ হয়েছিলেন। সম্ভবত পাহাড়ীদের মধ্যে তিনিই প্রথম মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন এবং দেশ স্বাধী‌নের পর একজন শহীদ মু‌ক্তি‌যোদ্ধা হি‌সে‌বে রাঙ্গামা‌টির অদু‌রে মা‌নিকছ‌ড়ি‌তে তাঁর স্মর‌ণে এক‌টি ম‌্যুরাল নির্মান করা হ‌য়ে‌ছে।‌ এখানে উল্লেখ্য যে, পিসাবাবুর সেজো ছেলে রতন’দা যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে তার বাবার কাছে কুমিল্লায় প্রাই‌ভেট ‌কোচিংএ পড়া‌শোনা‌ কর‌তে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি কুমিল্লায় আটকা পড়ে যান। দীর্ঘ দু’মাস পর অনেক কষ্টে রাঙ্গামাটি এসে পৌছার পর তাঁর বাবার শহীদ হওয়ার বিষয়টি সবাই জানতে পারে ।

চট্টগ্রামের এই বাসায় শুধু পিসি এবং আমার পিসতুতো ভাইবোনরা থাকতো। বাবা ওদের বাসায় গিয়ে পরামর্শ করে এলেন যে, আমরা দুই পরিবার এক সঙ্গে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হব। পরামর্শ মতো আমরা কাপড় চোপড় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যা সম্ভব ব্যাগের মধ্যে ভরে বেলা ১২টার সময় বাসায় তালা লাগিয়ে পিসিদের বাসায় এসেছিলাম। ওখানে দুপুরের খাবার খেয়ে চকবাজার থেকে দুইটি টেম্পো ভাড়া করে দুই পরিবার রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। তবে হাটহাজারী হয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার রাস্তাটি বাঙ্গালীর‌া ব‌্যা‌রি‌কেড দেওয়ায় আমরা বিকল্প পথ ধরে বেলা প্রায় ৩ টার সময় এসে পৌঁছালাম কালুরঘাট ব্রিজের কাছে। ওখানে আসার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের টেম্পো দু’টি আটকে দিয়েছিল। সামনে ওরা নাকি ব্যারিকেড বসিয়েছে। টেম্পো নিয়ে আর যাওয়া যাবে না। আরও জানানো হল ব্রিজের ঐ পাড়ে নাকি কোন এক বাঙ্গালী মেজর জিয়াউর রহমান তার ব‌্যাটা‌লিয়ন নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। ঐ পাড়ের পেট্রোল পাম্পটিও তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। সাধারণ পাবলিকদের কাউকেও পেট্রোল দেওয়া হচ্ছে না।

বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধ করে রাজী করিয়েছিলেন ঐ পাড়ে গিয়ে দেখে আসতে যে, সামনে আর যাওয়া যাবে কিনা? এরপর বাবা একা একটি টেম্পো নিয়ে ঐ পাড়ে চলে গিয়েছিলেন। বাবা ঐ‌দি‌কে কোন পথ দি‌য়ে রাঙ্গামা‌টিতে আস‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লেন জা‌নিনা। বাবা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দক্ষিণ দিক থেকে নদীপথে একটি লঞ্চকে এগিয়ে আসতে দেখেছিলাম। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের উপর থেকে দুটি বন্দুক নিয়ে ঐ লঞ্চটিকে তাক করেছিল শত্রুপক্ষ ভেবে। নীচে আমাদের সবাইকে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়। তাড়াহুড়ায় আর কোথাও জায়গা না পেয়ে ব্রীজের বিশাল দেয়ালগুলোর নীচে আমরা সবাই আশ্রয় নিয়েছিলাম। চারিদিকে টান টান উত্তেজনা। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটলো না। লঞ্চটি কোন অঘটন ছাড়াই আস্তে আস্তে উত্তর দিকে চলে গিয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পর বাবা ঐ পাড় থেকে ফিরে এসে আমাদের জানালেন যে, টেম্পো নিয়ে আর যাওয়া সম্ভব নয়। মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়েছে। কোন যানবাহনকে সাম‌নে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

অগত্যা সবাই মিলে ঠিক করা হলো রাস্তা ছেড়ে নদীপথে এগোনোই ভালো হবে যতদূর যাওয়া যায়। এরপর টেম্পো দু’টি বিদায় দিয়ে দু’টি সাম্পান ভাড়া করে আমরা রওনা হলাম। প্রায় রাত ৯ টার সময় আমরা লাম্বুরহাট নামে একটি জায়গায় এসে পৌঁছালাম। পাড়ের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল জায়গাটি বড়ুয়াদের গ্রাম। ডাকাডাকির পর অনেকে এসে আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে পরামর্শ দিয়েছিল তাদের গ্রামে রাতটি কাটানোর। যেহেতু বৌদ্ধদের এলাকা তাই আমরা দ্বিধা না করে সেখানে থামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাছাড়া রাত বেশী হয়ে যাওয়ায় পথে ডাকাতের পাল্লায় পড়ার আশংকাও ছিল প্রতি মুহুর্তে। এই গ্রামে ফরাচীন কিয়াং নামে একটি বৌদ্ধমন্দিরে আমাদের সবার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শুনেছি এই ফরাচীন কিয়াংটি অত্যন্ত পবিত্র একটি বৌদ্ধমন্দির। ঐ মধ্যরাতে বড়ুয়া গ্রামবাসীরা রান্না করে আমাদের ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলো। যা মনে পড়লে এতোবছর পরও তাদের আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতায় ভরে যায় মন।

রাতটি বৌদ্ধমন্দিরে কাটিয়ে পরদিন সেখানে সকালের নাস্তা খেয়ে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার ‘সাম্পানে যাত্রা শুরু করলাম আমরা। এবার একটি ছোট খাল ধরে ঘন্টা খানেক পরে আমরা কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে এসে উঠলাম। সাম্পান দুটিকে এখান থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছিল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর চট্টগ্রামের দিক থেকে একটি ট্রাক আসতে দেখেছিলাম। ট্রাকটিকে থামার ইঙ্গিত দেয়ার পর আমাদের সামনে এসে থামল। দেখা গেল ট্রাকটিতে ড্রাইভারসহ এক অবাঙ্গালী বিহারী পরিবার। তারাও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলেছে। আমাদেরকে সঙ্গে নিতে আপত্তি না করায় আমরা সবাই ট্রাকটিতে উঠে পড়েছিলাম। এবার নদীপথ ছেড়ে সড়কপথে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু একনাগাড়ে আর বেশী দূর যাওয়া হয়নি আমাদের। এক জায়গায় এসে থামতে হয়েছিল ব্যারিকেডের কারণে। বড় বড় গাছ, পাথর ফেলে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। সামনে আর এগোতে না পেরে ট্রাকটি ঘুরিয়ে আবার ফিরতি পথ ধরে আগের জায়গায় এসে নামতে হয়েছিল। ট্রাকটি আমাদের নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল।

ওখানে বেশ কিছু নৌকা এবং সাম্পান বাঁধা ছিল। ওখান থেকে একটি বড় নৌকা ভাড়া করা হল। কিছুদূর এগিয়ে যাবার পর খাল পেরিয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়েছিলাম আমরা। নদীতে এসে পড়ায় নৌকার মাঝিরা পাল তুলে দিয়েছিল। কয়েক ঘন্টা একনাগাড়ে চলার পর চন্দ্রঘোনার প্রায় কাছাকাছি এক জায়গায় পৌঁছে অসংখ্য লাশ নদীতে ভেসে যেতে দেখেছিলাম, কয়েকটি লাশ প্রায়ই আমাদের নৌকার গা ঘেঁষে চলে গিয়েছিল। সবগু‌লো লাশই খাকি পোষাক পড়া ছিল। ভেসে যাওয়া একটি লাশের পেট এর দি‌কে বসে কয়েকটি কাককে ঠোকড়াতে দেখেছিলাম যে দৃশ্যটি এখনও চোখে ভাসে। লাশগুলো দেখে একটু শংকিত হয়ে পড়েছিলাম আমরা। প‌রে জান‌তে পে‌রেছিলাম ঐ লাশগু‌লো কাপ্তাই বাঁধ আর কে‌পিএম এ কর্মরত বিহারী পু‌লিশ‌দের। কিছুদূর যাবার পর এক পর্যায়ে দেখতে পেয়েছিলাম নদীর উভয় তীর থেকে আমাদের লক্ষ্য করে ডাকা হচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দল। সবার হাতেই চকচকে তীর ধনুক, টেটা, বল্লম, বর্শা, লম্বা ধারালো কিরিচ, লাঠি এবং গুটিকয়েক বন্দুক। বাবা বছর তিনেক কেপিএম এ চাকুরী করেছিলেন, সেই সুবাদে এদের মধ্যে কয়েকজন আমার বাবার পূর্ব পরিচিত থাকায় বাবাকে চিনতে পেরেছিলেন। বাবার কাছ থেকে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা শেষে আমাদের জানানো হল যে সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের আরো কয়েকটি ইউনিট আছে। এই কারণে ওরা একটি টোকেন দিয়েছিল। যাতে টোকেনটি দেখা‌লে আমাদের নিরাপদে যেতে দেওয়া হয়। এরপর আবারও রওনা দি‌য়ে অ‌নেকক্ষণ প‌রে চন্দ্রঘোনা মিশনারী হাসপাতাল ঘা‌টে আমা‌দের নৌকা‌টি ভি‌ড়ে‌ছিল। আজকের রাতটি এখা‌নেই কাটানোর মনঃস্থির করে নৌকাটিকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছিল।

এখানে হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ এস. এম. চৌধুরী হাসপাতালে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। খেলার মাঠের পাশে যে ৪টি কেবিন আজও বর্তমানে আছে সেখানে আমাদের থাকতে দেয়া হয়েছিল। পরদিন সকালে এখানে নাস্তা করে হাসপাতাল ছেড়ে দু’টি সাম্পান ভাড়া করে আবারও আমরা যাত্রা শুরু করলাম। পবিত্র চীৎমরম কিয়াংয়ের পাশ দিয়ে যাবার সময় আমরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যাতে নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারি। পথে অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল আমাদের। তবে আগের দিন পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের টোকেন দেখাবার পরে আমাদের যেতে দিয়েছিল। কোন অসুবিধা ছাড়াই আমরা এসে পৌঁছালাম কাপ্তাইয়ের নতুন বাজারে। সেবার প্রথম বারের মত দেখেছিলাম এখানে রাস্তার মাঝখানে বসানো একটি বিশাল কার্গো ক্রেনের সাহায্যে বড় বড় নৌকাকে মালামালসহ নদীর এপাড় থেকে ওপাড়ে পার করানো হচ্ছিল।

সাম্পান দুটিকে এখান থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর নতুন বাজারে হো‌টে‌লে দুপু‌রের খাওয়া দাওয়া সে‌রে পায়ে হেঁটে কাছেই লঞ্চ ঘাটে চলে এসেছিলাম। এখান থেকে একটি বড় ইঞ্জিনচালিত বোট ভাড়া করা হয়েছিল রাঙ্গামাটি যাওয়ার জন্য। এরপর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা দুপুর ৩টার দিকে রাঙ্গামাটির তবলছড়ি লঞ্চ ঘাটে এসে পৌঁছেছিলাম । চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মাত্র দুই ঘন্টার পথ, আমরা দুই পরিবার দীর্ঘ তিনদিন পর রাঙ্গামাটি এসে পৌঁছেছিলাম। পৌঁছার পর আমরা এতই আনন্দে উচ্ছসিত ছিলাম যে, মনে আছে আমরা দুই ভাই জয়বাংলা শ্লোগান দিতে দিতে দৌঁড়ে সবাইকে পিছনে ফেলে আর্ট কাউন্সিল কলোনীতে আমাদের জ্যাঠাবাবু প্রয়াত জ্যোতি প্রকাশ তালুকদারের বাসায় হাজির হয়েছিলাম। যুদ্ধকালীন জ্যাঠাবাবুদের এই বাড়ীতে আমরা অ‌নেক‌দিন ছিলাম। প‌রে আনন্দ বিহা‌রের পা‌শে আমার মামা প্রয়‌াত ডাঃ এ‌,কে দেওয়ান এর বাসায় চ‌লে এসেছিলাম আমরা। আর অন্যদিকে তুংলি পিসিরা তবলছড়িতে কিছুদিন থেকে পরে লংগদুর আদরকছড়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে সারাদেশে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাঙ্গামাটির প্রায় সবার বাসায় তখন গোলাগুলির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাটিতে ট্রেঞ্চ খোড়া হয়েছিল। রাতের বেলা বিভিন্ন দিক থেকে গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে আসতো।পাকিস্তানী সৈন্যরা চট্টগ্রাম শহর দখলের পর রাঙ্গামাটির দিকে ক্রমশঃ অগ্রসর হতে থাকলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এইচ, টি, ইমাম রাঙ্গামাটির মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ২রা এপ্রিল রামগড় হয়ে ভারতের আগরতলায় চলে যান।

এতে হঠাৎ করে প্রশাসনিক শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় পাহাড়ী ও বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন দিশাহারা হয়ে পড়ে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানীদের আসন্ন হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় রাঙ্গামাটির ম্যাজিট্রেট মোনায়েম চৌধুরী এবং ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ হজরত আলী স্থানীয় কয়েকজন বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন।

এরপর তাঁরা রাঙ্গামাটি ফিরে এসে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় এর সাথে রাজবাড়ীতে এসে দেখা করেন। সেখানে রাজা ত্রিদিব রায়কে চট্টগ্রামে গিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হয়। তাঁদের ধারণা, যেহেতু তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সেহেতু তাঁর কথাকে অবশ্যই গুরুত্ব দেয়া হবে। এ অনুরোধে সাড়া দিয়ে ত্রিদিব রায় ভগ্নিপতি কর্নেল হিউম এবং ভাই সৌমিত রায়কে সাথে নিয়ে প্রথমে রিজার্ভবাজার এবং পরে তবলছড়িতে গিয়ে এব্যাপারে স্থানীয় বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দের অভিমত জানতে চান। উভয় জায়গায় বাঙ্গালীরা রাজা ত্রিদিব রায়কে রীতিমত “রাজাবাবু জিন্দাবাদ” শ্লোগান দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আসন্ন নিশ্চিত এই হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য আবেদন জানান।

তারপর দিন ১৬ এপ্রিল অনেকটা নিরুপায় হয়ে রাজা ত্রিদিব রায় ভগ্নিপতি কর্নেল হিইম, ম্যাজিষ্ট্রেট মোনায়েম চৌধুরী, ম্যাজিট্রেট মোঃ হজরত আলী এবং কয়েকজন বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে প্রথমে নতুন পাড়া ইপিআর হেডকোয়াটার হয়ে পরে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে গিয়ে কর্নেল হিউম সাহেবের পূর্ব পরিচিত এক জেনারেলের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে তাঁরা রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

কিন্তু রাঙ্গামাটি এসে পৌঁছার আগেই ঐদিন কাপ্তাই হতে কয়েকটি লঞ্চ এবং স্পীড বোট নিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা বিনা বাধায় রাঙ্গামাটি শহর দখল করে নেয়। (তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম- শরদিন্দু শেখর চাকমা)

পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা সদর রাঙ্গামাটি দখলের পর শহরে এসে পড়েছিল পাঞ্জাব, বেলুচ রেজিমেন্টের পাকিস্তানী সৈন্যরা। পাকিস্তানী সেনাদের সংগে যোগ দিয়েছিল লাল ডেঙ্গার নেতৃত্বে ভারতের বিদ্রোহী মিজো গেরিলারা। ওরা পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছিল। থাকতো ডিসি বাংলো এলাকায়। প্রায় সবাই লম্বা চুল রাখতো। জিনসের প্যান্ট শার্ট পড়ে কা‌ঁধে টমি গান নি‌য়ে আর হাতে গিটার নিয়ে গান গেয়ে ঘুরে বেড়াতো। আমার ডাঃ মামা এ,কে দেওয়ানের বাসায় “রঘু” নামে বিরাট একটি বিদেশী অ্যালশেসিয়ান কুকুর ছিল। পরে এই কুকুরটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবাই ধারণা করে নিয়েছিল যে মিজোরা হয়তো কুকুরটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে খেয়ে ফেলেছে।

রাজা ত্রিদিব রায়ের পাকিস্তানের প্রতি তাঁর সমর্থন দানের কারণে হয়তো যুদ্ধের সময় পাহাড়ীদের প্রতি পাকিস্তানী সেনাদের কিছুটা হলেও নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। কিন্তু এরপরও অনেক জায়গায় হত্যা, ধর্ষণ, হয়রানী, ধরপাকড়ের হাত থেকে সাধারণ পাহাড়ীদের রেহাই মেলেনি। পাঞ্জাবী, বেলুচী সৈন‌্যরা তাদের ভয়ংকর চেহারা আর অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে দেখতাম এবং প্রায় সময় তারা ঘরে ঘরে তল্লাসী চালাতো। ক্রমে যুদ্ধ তীব্রতর হতে থাকলে রাঙ্গামাটির পরিস্থিতিও খারাপের দিকে মোড় নিতে থাকে। সারা দেশে কি হচ্ছে তা জানার একমাত্র উপায় ছিল রেডিওর খবরের উপর। বিশেষ করে বিবিসি থেকে প্রচারিত হতো মার্কটালীর পাঠানো সাম্প্রতিক ঘটনার উপর রিপোর্ট, কোলকাতা থেকে দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় এর কন্ঠে বাংলা সংবাদ।

এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিকভাবেই রাঙ্গামাটি শহরে একটু খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল। অনেককে তখন এক বেলা ভাত আরেক বেলা আটার রুটি নিয়ে আহার করতে হয়েছিল। চিনির আকাল দেখা দেওয়ায় চিনির বদলে গুড় দিয়ে চা খাওয়া হতো। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাজারে যেত না। গেলেও সন্ধ্যার আগেই সবাই বাড়ীতে ফিরে আসতো।

রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হতে থাকলে কয়েক দিন পর ডাঃ মামার পরিবারসহ আমরাও রাঙ্গামাটি শহর ছেড়ে কাটাছড়িতে আমার প্রয়াত দুল্যা মামার বাড়ীতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখানেও বেশ কিছুদিন থাকতে হয়েছিল। এখানে থাকতে প্রায় সময় নদীতে মিলিটারীর গান বোট চলাচল করতে দেখেছি। তবে এখানে আরেকটি মূর্তিমান আতংক হয়ে দেখা দিয়েছিল চাকমা ডাকাত চুম্বুগুলা ও তার বাহিনীর ভয়। কিছুদিন আগে পাশের কয়েকটি গ্রামে নাকি ওরা লুটপাট করেছে। এই গ্রামেও ওরা এসে পড়ে কিনা ভয়ে সবাই তটস্থ হয়ে থাকতো।

এ‌প্রিল মা‌সের প্রথম দি‌কে এক‌দিন সকাল ১১.০০ টার দিকে এই গ্রাম থেকে প্রায় মাইল খানেক দূরে উত্তর দিকে হঠাৎ শুরু হলো প্রচন্ড গোলাগুলীর আওয়াজ। মনে হচ্ছিল যেন মাথার উপর দিয় গুলিগুলো যাচ্ছে। প‌রে জানতে পেরেছি আস‌লে বু‌ড়িঘা‌টের পু‌টিখালীর কাছে পাকিস্তানী সৈন‌্যদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি‌রোধ যুদ্ধ চলছিল তখন। এই যু‌দ্ধেই বীরশ্রেষ্ট ল‌্যান্স না‌য়েক মু‌ন্সি আবদুর রউফ শহীদ হন। এই বন্দুক যুদ্ধ প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে চলেছিল। আমরা সবাই ট্রেঞ্চে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ঐদিনই সন্ধ্যায় ভয়ে আমরা সবাই কাটাছড়ির আরও ভিতর দিকে একটি পাহাড়ের উপর জুম ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ওখানে একদিন থেকে আমরা আবারও গ্রামে ফিরে এসেছিলাম। এর মাঝে একদিন বাবা রাঙ্গামাটি শহ‌রে চলে গেলেন ডাঃ মামাদের খালি বাসা পাহারা দেয়ার জন‌্য।

রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি একটু ভালো হলে বাবা কিছুদিন পর ফিরে এসে আমাদেরকে রাঙ্গামাটি নিয়ে গেলেন। একদিন আমরা রাতের খাবার খাওয়ার সময় হঠাৎ করে পাকিস্তানী সৈন্যরা তল্লাসী চালানোর জন্য বাসায় ঢুকে পড়েছিল। সৈন্যদের এক এক জনের চেহারা ছিল ভয়ংকর। চোখগুলো দেখে মনে হয়েছিল যেন আগুন বের হচ্ছে। সেই সময় আমাদের সঙ্গে আরও ছিলেন আমার বড় মামা বিদ্যুৎ কুমার দেওয়ান। তিনি ক‌য়েক‌দিন আ‌গে আদরকছড়া থেকে এখানে ফিরেছিলেন। ওখানে থাকতে পা পিছলে হাত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। তাঁর ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতটি দেখে তাদের সন্দেহ যেন বেড়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা কিনা ভেবে। সে যাই হোক, বাবা উর্দু ভাষাটি ভালো পারতেন বিধায় সবার পক্ষে তিনিই তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদের সন্তুষ্টি করতে পে‌রে‌ছিলেন। এরপর সৈন‌্যরা চলে গিয়েছিল।

ইতিমধ্যে আমি তবলছড়ির শাহ বহুমুখী হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। এখানে আ‌মি ন‌ভেম্বর মাস পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিলাম। এর মধ্যে সরকারী কর্মচারীদের চাকুরীতে যোগদানের নির্দেশ আসায় বাবাকে বাধ‌্য হয়ে আমাদেরকে রাঙ্গামাটি রেখে চট্টগ্রামে চলে যেতে হয়েছিল। চট্টগ্রামে থাকাকালীন বাবা খুব একটা সুখে থাকতে পারেননি। প্রতি পদে পদে বিপদের আশংকা ছিল। তাছাড়া বাবা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ভয়টা আরও বেশী ছিল। বাবা যাদের সঙ্গে মিশতেন তাদের সবাই আওয়ামী লীগ করতেন। বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য চট্টগ্রামের একসময়কার সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগরী আওয়ামী লীগের সভাপ‌তি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, জহুর আহম্মদ চৌধুরী, ডাঃ মাহফুজুর রহমান, ডাঃ জাফর উল্লাহ, শান্তনু চক্রবর্তী, ফজলুল হক বারী (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী) এবং একসময়কার চট্টগ্রাম মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনামুল হক দানু (যিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের গাড়ী বহর চকবাজার এলাকা অতিক্রমকালে নিজের পায়ের জুতো খুলে ছুঁড়ে মেরে বিখ্যাত হয়েছিলেন আমাদের পাড়াতেই বসবাস করতেন)। সে যাই হোক, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগে যোগাযোগ রাখার কারণে রাজাকাররা নাকি একবার বাসায় বাবাকে খুঁজতে এসেছিল। সেই দিন তিনি বাসায় না থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি আর বাসায় না থেকে অন্যত্র লুকিয়ে থেকে অফিসে যাওয়া আসা করতেন। সবসময় সঙ্গে রাখতেন আইডেনটিটি কার্ড।

নভেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সৈন্যদের নিয়ে সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমণ জোরদার হওয়ার পর থেকে সারাদেশের মত রাঙ্গামাটিও আস্তে আস্তে পাক হানাদার মুক্ত হতে থাকে। রাঙ্গামাটির চারদিক থেকে তখন মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সৈন্যরা এগিয়ে আসতে থাকলে পাকিস্তানী সৈন‌্যরা পালাতে শুরু করে। সেই সাথে পালাতে শুরু করে মিজো বিদ্রোহীরাও। বড় বড় কয়েকটি নৌকায় তারা ভারতের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল। ই‌তিম‌ধ্যে নদীপথে ভার‌তের দেমাগ্রী থে‌কে রাঙ্গামাটিতে এসে পৌঁছেছিল ভারতীয় মিত্র বা‌হিনী এবং আলাদাভাবে তিব্বতী সৈন্যরা (স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স) যারা সরাস‌রি জেনারেল এস. এস. উবান সিং এর নিয়ন্ত্রনে থে‌কে বাংলা‌দে‌শের স্বাধীনতার প‌ক্ষে যু‌দ্ধে অংশ নি‌য়ে‌ছিল। তা‌দের প্রধান দা‌য়িত্ব ছিল রাঙ্গামা‌টি থে‌কে চট্টগ্রা‌মের রাস্তা ব্লক করা, বি‌ভিন্ন সেতু ধ্বংস করা, পাক বা‌হিনীর ঘাটি দখল করা, মি‌জো বি‌দ্রোহী‌দের দমন করা। পরে এই তিব্বতী সৈন্যদের এক‌টি দল‌কে আ‌মি আনন্দ বিহারে দে‌খে‌ছিলাম। বিহা‌রে বুদ্ধ‌কে সঠান লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে প্রণাম করতে দেখেছিলাম তা‌দের, ‌সেই সময় বুদ্ধকে এমন প্রনাম করার ভ‌ঙ্গি দে‌খে খুবই অব‌াক হ‌য়ে‌ছিলাম, যা এখনো মনে পড়ে।

আগষ্ট মা‌সের শেষ‌দি‌কে এক‌দিন বি‌কালবেলা আমি তবলছ‌ড়ির আর্ট কাউন্সিল কলোনীতে জ্যাঠাবাবুদের বাসায় বেড়াতে গেছি। থানার কাছাকা‌ছি পৌছতেই হঠাৎ কোত্থেকে যেন একটি হেলিকপ্টার খুব নীচু দিয়ে প্রায় আমাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। এই সময় আসামবস্তীর দিক থেকে কিছ‌ু দলছুট মিজো হেলিকপ্টারটিকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ঘটনা বুঝতে না পেরে আ‌মি দৌ‌ড়ে জ‌্যাঠাবাবু‌দের বাসায় উপ‌স্থিত হ‌লে দেখ‌তে পাই সবাই ভয়ে ট্রেঞ্চে আশ্রয় নিয়েছে, আমিও দৌ‌ড়ে ট্রেঞ্চে ঢু‌কে পড়েছিলাম। প‌রে জান‌তে পা‌রি আসলে এই হেলিকপ্টারটিতে চড়ে ভারতীয় মিত্র বা‌হিনীর এক‌টি অগ্রবর্তী দল রে‌কি করার জন‌্য চক্কর দিচ্ছিল। এই হেলিকপ্টারটিতে সে‌দিন ভারতীয় মিত্র বা‌হিনীর সৈন্যদের নেতৃত্ব দি‌য়ে পথ দে‌খি‌য়ে রাঙ্গামা‌টি নি‌য়ে আস‌ছি‌লেন দেরাদ‌ু‌নে সাম‌রিক প্রশিক্ষন শে‌ষে কর্নেল (অবঃ) মনিষ দেওয়ান এবং সা‌থে মু‌ক্তি‌যে‌াদ্ধা শামসু‌দ্দিন আহ‌মেদ পেয়ারা প্রমুখ। ‌যে দুজন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর‌দিন অর্থাৎ ১৭ ডি‌সেম্বর যৌথভা‌বে রাঙ্গামা‌টি পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং চত্ব‌রে প্রথম স্বাধীন বাংলা‌দে‌শের পতাকা উ‌ত্তোলন ক‌রে‌ছি‌লেন। এখানে উল্লেখ্য যে, কর্নেল (অবঃ) মনিষ দেওয়ানের মত আরও অনেক পাহাড়ী সেদিন সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন মং সার্কেল চীফ মং প্রু সাইন চৌধুরী, ইউকেচিং মারমা বীর বিক্রম, হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা, রণবিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, সুবোধ বিকাশ ত্রিপুরা, প্রিয়জ্যোতি ত্রিপুরা, প্রভুধন চৌধুরী, ভুবন ত্রিপুরা, অংকিউ মারমা, অশোক মিত্র কার্বারী, বিমলেশ্বর দেওয়ান, রমনী রঞ্জন চাকমা, গোপাল কৃষ্ণ দেওয়ান, ত্রিপুরা কান্তি চাকমা, কৃপাসুখ চাকমা, উক‌্য জেন মারমা, প্রকৌশলী অম‌লেন্দু বিকাশ চাকমা, ফুটবলার চিংহলা মং চৌধুরী মারী, ডেপুটি ম‌্যাজিস্ট্রেট চিত্ত রঞ্জন চাকমা, রাস বিহারী চাকমা প্রমুখ ছাড়াও আরো অনেকে। এছাড়াও অধিকাংশ পাহাড়ী সেদিন মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। যুদ্ধের সময় পাহাড়ীরা খাদ্য, আশ্রয় ও পথ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রভূত সহযোগিতা করেছিল। মং রাজা মংফ্রু সাইন সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মং রাজার তৎকালীন রাজপ্রসাদে প্রতিদিন চট্টগ্রাম হতে ভারতে যাওয়া হাজার হাজার শরণার্থী আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিবাহিনীকেও পার্বত্য এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি মূল্যবান পরামর্শ ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করেন। তিনি সর্বপ্রথম বিপ্লবী সরকারের হাতে বৈদেশিক মুদ্রা তুলে দেন। তৎকালীন ইপিআর (বর্তমানে বিজিবি) বাহিনীতে পাহাড়ি অনেকজন ছিলেন। তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারমধ্যে সিপাহী অ্যামি মারমা যুদ্ধে বগুড়ায় নিহত হয়েছিলেন। সিপাহী রমণী রঞ্জনও রামগড়ে নিহত হন। সিপাহী হেমরঞ্জন যুদ্ধে নিখোঁজ হয়েছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা খগেন্দ্র লাল চাকমা মুক্তিবাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন বিধায় কু‌মিল্লায় পাক বা‌হিনী তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। অনেক পাহাড়ি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের কাজ করেন। তাদের মধ্যে তৎকালীন ছাত্রনেতা গৌতম দেওয়ান, এমএন লারমা, রাজা ত্রিদিব রায়ের আপন কাকা কে. কে. রায়, সুবোধ বিকাশ ত্রিপুরা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের এক আত্মীয় লংগদু হতে তিন-চারটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় শ-খানেক খাসি রাঙ্গামাটি পাঠিয়েছিন মুক্তিযোদ্ধা‌দের জন্য। আর সে সময়ে রাঙ্গামটিতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা‌দের স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় পাহাড়িদের সহযোগিতা ছাড়া দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের জয় সম্ভব হতো না।

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফের মৃতদেহ কখনো খুঁজে পাওয়া যেত না যদি দয়াল কৃষ্ণ চাকমা নিজ দায়িত্বে তাঁ‌কে সমাহিত না করতেন। মেজর জিয়াসহ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে দল থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন, হয়তো হারিয়ে যেতেন, অথবা মারা যেতেন না খেয়ে অথবা পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের হাতে ধরা খেয়ে মারা যেতে পারতেন। ইনিই তাঁদের লুকিয়ে রেখেছেন, পথ দেখিয়ে নিরাপদ স্থানে অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের মহালছড়ির আস্তানায় পৌঁছে দিয়েছেন, খাবার যুগিয়েছেন পাকিস্তানি বাহিনীর ডর ভয় উপেক্ষা করে।অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু ইনি কোন স্বীকৃতি পাননি। একটাই শান্তনা বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের মা উনাকে ছেলে ডেকেছেন, বীরশ্রেষ্ঠের কবরে উনার নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। » তথ‌্যসুত্র- পাহাড়ী রেডওয়াইন।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এই সব পাহাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ও সমর্থকদের অবদানকে মূল্যায়ন করেনি। বরং চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন দানকে সহজভাবে নিতে পারেনি। চরম পাহাড়ী বি‌দ্বেষী জেলা প্রশাসক এইচ‌.টি. ইমামের প্ররোচনায় তার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সমস্ত পাহাড়ীদের উপর নেমে এসেছিল নিপীড়ণ, নির্যাতন, ধরপাকড়। আত্মরক্ষার্থে পাহাড়ীদের তখন আন্দোলনে নামা ছাড়া অন্য কোন গত্যন্তর ছিল না। যার ফলশ্রুতিতে আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল।

যাই হোক, দেশের পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হওয়ায় ডিসেম্বরের প্রথম দিকে বাবা রাঙ্গামাটি এসে আমাদেরকে চট্টগ্রাম নিয়ে গেলেন। দীর্ঘ আট মাস পর আমরা আবার চট্টগ্রামের বাসায় ফিরে গিয়েছিলাম। এরপর ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সরাসরি বিমান হামলা শুরু করে। ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো যখন চট্টগ্রামে হামলা চালাতো তখন চারদিক থেকে সাইরেন বাজানো হত। বিশেষ করে চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং নৌবন্দর লক্ষ্য করে হামলা পরিচালিত হত। বিমান হামলার সময় নীচ থেকে সেই যুদ্ধ বিমানগুলো স্পষ্ট দেখা যেত। নীচে থেকে বিমানগুলো লক্ষ্য করে যখন গুলি চালানো হত সেই গুলিগুলো কিছুক্ষণ পর আকাশে রং বেরঙের মেঘে পরিণত হত। একবার চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা অয়েল ট্যাংকারগুলোর উপর হামলার পর সারা চট্টগ্রাম শহরের আকাশ কালো মেঘে ধোয়াচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই অবস্থা ২/৩ দিন পর্যন্ত ছিল। এভাবে ভারতীয় বিমানগুলোর উপর্যপুরি হামলার পর টিকতে না পেরে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বে ঢাকার রেস‌কোর্স ময়দা‌নে পাকিস্তানী সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এভাবে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি স্বাধীন দেশের অভ্যুদয় নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছিল।

ততোদিনে বিজয়ীর বেশে শহরে প্রবেশ করেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সবার হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র। সবার মুখে শ্লোগান “জয় বাংলা” “আমার নেতা তোমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব”। আমা‌দের জয়নগর পাড়ার মাঠটিতে এনে স্তূপ করা হয়েছিল পাকিস্তানী সৈন্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্র। টমি গান, ষ্টেন গান, ব্রেনগান, মেশিনগান, গ্রেনেড, বোম আরো কত নাম না জানা অস্ত্র দেখেছি সেদিন। ৩/৪ জন অবাঙ্গালী বিহারীকে ধরে আনা হয়েছিল। তাদের হাত পিছমোড়া করে দড়ি দিয়ে বাধা ছিল। পরে তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল জানি না। যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীনের পর যখন আবার স্কুলে যাই তখন পরীক্ষা দেওয়া ছাড়াই অটোপ্রমোশন পেয়ে পরবর্তী ক্লা‌সে উ‌ঠেছিলাম। প্রবর্তক স্কুলের পাহাড়টিতে বেশ বড় বড় কয়েকটি গর্ত খোড়া অবস্থায় দেখেছিলাম। শুনেছি পাকিস্তানী সৈন্যরা বাঙ্গালীদের ধরে এনে এখানে মেরে ফেলে লাশগুলো এসব গর্তের ভিতর ফেলে দিত। আরও জানতে পারলাম আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং আশ্রমের পুরোহিতসহ কয়েকজনকে পাকিস্তানী সৈন্যরা এখানে মেরে ফেলেছে।

স্বাধীনতার কয়েকদিন পর একবার রাঙ্গামা‌টি এসে‌ছিলাম। সেসময় ডি. সি. বাংলোর কাছে একটি সী প্লেন এসে ল্যান্ড করেছিল। বন্ধুদের সঙ্গে আমিও সেটি দেখতে গিয়েছিলাম। সী প্লেইনটিতে চড়ে সেদিন কারা এসেছিল ঠিক মনে নেই। তবে ওটা দেখতে গিয়ে লেকের পাড়ে পানিতে পাকিস্তানী সৈন্যদের ফেলে যাওয়া প্রচুর অস্ত্র, গ্রেনেড, রকেট বোম, মর্টার পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। পাখায় গুলিবিদ্ধ হওয়া এক‌টি হেলিকপ্টারের পাখা রিজার্ভবাজা‌রের পুরাতন‌ কোর্ট বিল্ডিয়ের মাঠটিতে পড়ে থাক‌তে দে‌খেছিলাম।

লেখক: সংস্কৃতিকর্মী, রাঙামাটি।

বি:দ্র: লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া।

 

সর্বশেষ - আইন ও অপরাধ

আপনার জন্য নির্বাচিত

জেলা পরিষদের ‘সহকারি শিক্ষক নিয়োগ’ পরীক্ষা স্থগিত

কাপ্তাই ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত 

দুর্গাপূজায় নানিয়ারচর সেনা জোনের ভালোবাসা 

কাপ্তাইয়ে জাতীয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি সভা

রোয়াংছড়িতে ২৯ ও ৩০ দুইদিন ব্যাপী প্রয়াত ভান্তে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান

রোয়াংছড়িতে ২৯ ও ৩০ দুইদিন ব্যাপী প্রয়াত ভান্তে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান

রুমায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত

২ যুগে দৈনিক যুগান্তর, রাঙামাটিতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনায় মুজিবুর গ্রেফতার

যারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়, তাদেরকে রুখে দিতে হবে-পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি

শেষ হল মারিশ্যা জোন কাপ; চ্যাম্পিয়ন তুলাবান স্পোর্টিং ক্লাব

%d bloggers like this: